ঢাকা ব্যুরো ॥ বর্তমানে দেশে ৫-১৭ বছর বয়সী ৩৫ লাখ ৪০ হাজার শিশু শ্রমজীবী রয়েছে। যার মধ্যে ১৭ লাখ ৬০ লাখ শিশু বেকার এবং ১৭ লাখ ৮০ হাজার শিশুশ্রমে রয়েছে। শ্রমে থাকা শিশুদের মধ্যে ১০ লাখ ৭০ হাজার শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কাজের মধ্যে করে অটোমোবাইল ওয়ার্কশপে কাজ করে সবচেয়ে বেশি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ পরিসংখান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ ২০২২ শীর্ষক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। জরিপে ১ হাজার ২৮৪টি প্রাথমিক স্যাম্পলিং ইউনিট (পিএসইউ) থেকে ৩০ হাজার ৮১৬টি খানা নির্বাচন করা হয়। জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ অনুসারে, পল্লী এলাকায় ২৭ লাখ ৩০ হাজার শ্রমজীবী শিশু রয়েছে এবং শহরাঞ্চলে রয়েছে ৮ লাখ ১০ হাজার, শিশুশ্রমে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা পল্লী এলাকায় ১৩ লাখ ৩০ হাজার এবং শহরাঞ্চলে ৪ লাখ ৪০ হাজার। অন্যদিকে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা পল্লী এলাকায় ৮ লাখ ২০ হাজার এবং শহরাঞ্চলে ২ লাখ ৪০ হাজার রয়েছে। প্রতিবেদনে ৫-১৭ বছর বয়সী শিশুদের জনসংখ্যার পরিসংখ্যান বিষয়ক তথ্য রয়েছে। এই বয়সের মোট শিশু জনসংখ্যা ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৬০ হাজার। যেখানে ৫ থেকে ১১ বছর বয়সী ৫৫ দশমিক ২ শতাংশ। দেশে ২ কোটি ৭৬ লাখ ৩০ হাজার খানায় ৫-১৭ বছর শ্রমজীবী শিশু রয়েছে এবং স্কুলে উপস্থিতির হার বর্তমানে ৩৪ দশমিক ৮১ শতাংশ। জরিপ হতে প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী, শিশু শ্রমিকের ৮২ শতাংশ তাদের নিজস্ব বাড়িতে বসবাস করে, উৎপাদনে ৩৩.৩% এবং কৃষি, বনায়ন এবং মাছ ধরায় ২৩.৬% নিযুক্ত রয়েছে। সামগ্রিকভাবে, শিশু শ্রমিক কর্মচারী হিসেবে শ্রেণিভুক্ত ৬৮.৮% এবং স্কুলে যায় ৫২.২%। শিশু শ্রমিকদের গড় মাসিক আয় ৬ হাজার ৬৭৫ টাকা। এছাড়াও ২০ লাখ ১০ হাজার শিশু গৃহকর্মী রয়েছে যাদের পারিশ্রমিক দেয়া হয় না এবং ৮০ হাজার যারা পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত, উভয় ক্ষেত্রেই পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা বেশি। তিনটি প্রাথমিক সেক্টর যেখানে কৃষি, শিল্প এবং পরিষেবা যথাক্রমে ১০ লাখ ৭০ হাজার, ১১ লাখ ৯০ হাজার এবং ১২ লাখ ৭০ হাজার শিশু শ্রমিক রয়েছে। সেক্টরভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত শিশুশ্রম বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ৪৩টি সেক্টরকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে, বিবিএস সরকার ঘোষিত এই ঝুঁকিপূর্ণ তালিকা থেকে সেক্টরভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত শিশুশ্রম জরিপ-২০২৩ পরিচালনার জন্য পাঁচটি খাত নির্বাচন করেছে। এই সেক্টরগুলোকে ফোকাস করে, শিশুশ্রম বিরাজমান রয়েছে এবং জরুরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন সে লক্ষ্যকে সামনে রেখেই এ জরিপটি পরিচালনা করা হয়েছে। এই নির্বাচিত সেক্টরগুলো হলো-১. মাছ, কাঁকড়া, শামুক/ঝিনুক সংক্ষরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ ও শুটকি মাছ উৎপাদন। ২. জুতা উৎপাদন (চামড়ার তৈরি পাদুকা শিল্প), ৩. লোহা ও ইস্পাত ঢালাই (ওয়েন্ডিং কাজ বা গ্যাস বার্নার মেকানিকের কাজ) ৪. মোটর যানবাহনের রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত (অটোমোবাইল ওয়ার্কশপ) ৫. ব্যক্তিগত এবং গৃহস্থালি সামগ্রীর মেরামত (অনানুষ্ঠানিক এবং স্থানীয় টেইলারিং এবং পোশাক সেক্টর)। জরিপের প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী, বিবিএসের নির্বাচিত উপরি-উক্ত ৫টি সেক্টরে ৪০ হাজার ৫২৫টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই পাঁচটি ঝুঁকিপূর্ণ খাতে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী ৩৮ হাজার ৮ জন শিশু কাজ করছে। ঝুঁকিপূর্ণ সেক্টরে কাজে নিয়োজিত শিশুদের মধ্যে ৯৭ দশমিক ৫ শতাংশ ছেলে এবং ২ দশমিক ৫ শতাংশ মেয়ে শিশু। এই ৫টি সেক্টরে শ্রমজীবী মোট শিশুর সংখ্যা হলো যথাক্রমে শুটকি মাছ উৎপাদনে ৮৯৮, চামড়ার তৈরি পাদুকা তৈরিতে ৫ হাজার ২৮১টি, ওয়েল্ডিং বা গ্যাস বার্নার ম্যাকানিকের কাজে ৪ হাজার ০৯৯, অটোমোবাইল ওয়ার্কশপে ২৪ হাজার ৯২৩ এবং অনানুষ্ঠানিক এবং স্থানীয় টেইলারিং বা পোশাক খাতে ২ হাজার ৮০৫ জন। এ থেকে স্পষ্ট যে, ৫টি ঝুঁকিপূর্ণ খাতের শ্রমজীবী শিশুদের সবচেয়ে বেশি কাজ করে অটোমোবাইল খাতে। পল্লী ও শহর বিবেচনায় এই খাতে কর্মরত শিশুর ৩৫ দশমিক ৭ শতাংশ পল্লী এবং ৬৪.৩% শহর এলাকায় বসবাস করে। এ জরিপের মাধ্যমে একটি শ্রমজীবী শিশু ঝুঁকিপূর্ণ সেক্টরসমূহে কাজ করার সময় কী কী ধরনের বিপজ্জনক কাজ করতে পারে তা চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। আনুমানিক ১৯.১ % ছেলে এবং ৭.৭% মেয়ে শিশু ভারী বোঝা বহন, মালামাল টানার কাজে, অধিক ওপর বা ফ্লোর হতে অতি উচ্চতায় উঠে কাজ করে প্রায় ৮.১% ছেলে এবং ০.৩% মেয়ে শিশু। আইএলওর সহযোগিতায় বিবিএস বাংলাদেশে তার নিজস্ব প্যাটার্নে এই জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। এই জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল ২০২৩ সালের ৩ থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত। জরিপ প্রকাশ অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, আমরা শিশু শ্রম নির্মূলে কাজ করছি। ২০২৫ সালে শিশু শ্রম শূন্যতে আনতে পারবো বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।