এফএনএস: বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এলপিজি এবং সিএনজিচালিত থ্রি-হুইলার উৎপাদন শুরু করেছে রানার অটোমোবাইলস পিএলসি। ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ভারতের বাজাজ অটো প্রযুক্তির সহায়তায় এ উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মাধ্যমে প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক মানের থ্রি-হুইলার উৎপাদন শুরু হলো বাংলাদেশে। গতকাল শনিবার ময়মনসিংহের ভালুকায় রানারের কারখানা প্রাঙ্গণে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ উৎপাদন কার্যক্রমের শুরু হয়। এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। এ সময় তিনি বলেন, দেশে প্রায় পাঁচ লাখ থ্রি-হুইলার চলছে। যেগুলোর প্রায় চার লাখেরই কোনো নিবন্ধন নেই। এটা খুবই অবাক করার মতো তথ্য। অনেকটা বেআইনিভাবে এসব যান চলাচল করছে। এসব পরিবহনের মালিক কারা, কিংবা কারা সেগুলো চালায়, সেই বিষয়টি অজানা থেকে যাচ্ছে। এতে সরকার বড় অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ও সড়ক মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি অবহিত করা হবে। আশা করি শিগগির অবৈধ থ্রি-হুইলারগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর আগে একই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ অটোমোবাইল অ্যাসেম্বলিং অ্যান্ড ম্যানুফেকচারিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমেদ বলেন, রাস্তায় প্রায় ৫ লাখ থ্রি-হুইলার গাড়ি চলাচল করে। এর মধ্যে এক লাখ গাড়ির নম্বর আছে। বাকি চার লাখের কিছুই নাই। এ তথ্যসূত্র আমলে নিয়েই থ্রি-হুইলারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন তিনি। রানারের থ্রি-হুইলার কারখানা দেখে সালমান এফ রহমান বলেন, দেখেই বোঝা যাচ্ছে এটা একটা আন্তর্জাতিক মানের কারখানা। এ বিনিয়োগ দেশের বিনিয়োগ ও অর্থনীতিতে ভ‚মিকা রাখবে। কারখানা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দায় এবং ডলার সংকটে দেশের ব্যবসায়ীরা কিছু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তবে এটা শুধু বাংলাদেশে নয়, অন্যান্য দেশেও হচ্ছে। যেহেতু স্বল্প সময়ে আইএমএফের ঋণ পাওয়া গেছে, আশা করি দুই-এক মাসের মধ্যে ডলারের সংকট কেটে যাবে। তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের পর সরকার এখন স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করছে। আমরা এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে আছি। উৎপাদনশীলতা বাড়াতে শিল্পে আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ করতে হবে। রপ্তানিমুখী শিল্পনীতি ও অটোমোবাইলস শিল্পের প্রসারে সব ধরনের সহায়তা দেবে সরকার। আইএমএফের ঋণ পাওয়া সরকারের বড় সফলতা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ উপদেষ্টা বলেন, দেশের অনেক অর্থনীতি বলেছেন বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা বা পাকিস্তান হয়ে যাবে। কিন্তু তা হয়নি, হতে দেয়নি সরকার। এ দুই দেশ আইএমএফের ঋণ না পেলেও বাংলাদেশ অল্প সময়ের মধ্যে ঋণ পেয়ে গেছে। অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, পোশাকের বাইরে অন্যান্য খাতের রপ্তানি মাত্র ১৭ শতাংশ। এই রপ্তানি বাড়াতে হলে পণ্যের উৎপাদন ও বৈচিত্র্য আনা জরুরি। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ডলারের সংকটের কারণে সরকার অনেক পণ্য আমদানিতে নিরুৎসাহিত করছে। তাই এখনই সুযোগ আমদানি নির্ভরতা কাটাতে স্থানীয় শিল্পগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা দেওয়া। একই সঙ্গে পশ্চাৎপদ শিল্প খাতকে গুরুত্ব দিতে হবে। তবে সে জন্য উদ্যোক্তাদেরও এগিয়ে আসতে হবে। অনুষ্ঠানে রানারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভালুকায় ১০ একর জমিতে ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে এ কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে বছরে ৩০ হাজার পিস থ্রি-হুইলার উৎপাদন করা সম্ভব হবে। বাজাজ অটোর প্রযুক্তিগত সহযোগিতায় ইঞ্জিনের কিছু উপাদান ছাড়াও ওয়েল্ডিং, চ্যাসিস, বডি ও কোয়ালিটি কন্ট্রোলসহ বেশির ভাগ যন্ত্রাংশ স্থানীয়ভাবে তৈরি হবে। এ কারখানায় ৩০০ জনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। অনুষ্ঠানে বাজাজের চেয়ারম্যান কে এস গৃহপতি বলেন, ভারতের বাইরে এই প্রথম বাংলাদেশেই বাজাজের থ্রি-হুইলার বাজারজাত করা হচ্ছে। বাংলাদেশের বাজার বড়, চাহিদা বেশি, অর্থনৈতিক অগ্রগতিও ভালো। সে জন্য বাংলাদেশে এ ব্যবসা স¤প্রসারণ করা হয়েছে। রানার গ্রæপের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান বলেন, রানারই প্রথম দেশে মোটরসাইকেল উৎপাদন শুরু করেছে। সেই ধারাবাহিকতায় এখন থ্রি-হুইলার উৎপাদন শুরু করছে। অটোমোবাইল খাতের পণ্য রপ্তানির বিশাল সুযোগ রয়েছে। তবে এদিকে সবার নজর বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, তাদের উৎপাদিত থ্রি-হুইলারে ডিজিটাল মিটার থাকবে। টেম্পারিং করা যাবে না। এতে অ্যাপস সংযুক্ত থাকবে। কোথা থেকে চলা শুরু হলো, কোথায় থামলো, সব অ্যাপে যুক্ত হবে। দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতেই দেশে উৎপাদন শুরু হয়েছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানিও হবে। ইতোমধ্যে পাকিস্তানের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সূচনা বক্তব্যে রানার অটোমোবাইলস সিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী সুবীর চৌধুরী বলেন, ২০১৭ সালে রানার প্রথম মোটরসাইকেল রপ্তানি করে। এরই ধারাবাহিকতায় এখন থ্রি-হুইলার শিল্পে যাত্রা শুরু করছি। আশা করছি, মোটরসাইকেলের মতো এই শিল্পেও সাফল্য অর্জন করবো। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া, সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শেখর, কাজীম উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।