এফএনএস: সুইজারল্যান্ডের দাভোসে অনুষ্ঠিত বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) বার্ষিক সম্মেলনে যোগদান শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল শনিবার বিকেল ৫টা ৭ মিনিটের দিকে তাকে বহনকারী ফ্লাইটটি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়। এর আগে প্রধান উপদেষ্টার উপ—প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানিয়েছিলেন, প্রধান উপদেষ্টা এবং তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট গত শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত ৯টা ৫০ মিনিটে জুরিখ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে আসে। উপ—প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা ডব্লিউইএফ চলাকালীন খুব ব্যস্ত দিন কাটিয়েছেন এবং তিনি বেশ কয়েকজন সরকার প্রধান, রাষ্ট্রপ্রধান এবং বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠকে যোগ দিয়েছেন। তিনি জানান, অধ্যাপক ইউনূস ডব্লিউইএফ শীর্ষ সম্মেলনের সময় মোট ৪৭টি আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। তিনি চার জন সরকার প্রধান বা রাষ্ট্রপ্রধান, চার জন মন্ত্রী পর্যায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তি, জাতিসংঘ বা সদৃশ সংস্থার ১০ জন প্রধান বা শীর্ষ নির্বাহী, ১০ জন সিইও বা উচ্চ পর্যায়ের ব্যবসায়ী ব্যক্তিত্ব, ৯টি আয়োজিত অনুষ্ঠান (আনুষ্ঠানিক নৈশভোজ এবং মধ্যাহ্নভোজ চারটি), আটটি মিডিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ততা এবং আরও দুটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। গত ২১ জানুয়ারি দাভোসে পেঁৗছানোর পর থেকে অধ্যাপক ইউনূস বার্ষিক সভায় বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে তার বিস্তৃত ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে ব্যস্ত দিনগুলো কাটিয়েছেন। সফরের প্রথম দিনে প্রধান উপদেষ্টা সাতটি ব্যস্ততার মধ্যে যোগ দেন এবং শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজের সঙ্গে বৈঠক করেন। অধ্যাপক ইউনূস পূর্ব তিমুরের রাষ্ট্রপতি জোসে রামোস—হোর্তা, মিউনিখ সুরক্ষা সম্মেলনের চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টোফ হিউসজেন, থাই প্রধানমন্ত্রী পায়োংটার্ন সিনাওয়াত্রা, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্যান্ডি এবং ফিনল্যান্ডের রাষ্ট্রপতি আলেকজান্ডার স্টাবের সাথেও সাক্ষাৎ করেন। দ্বিতীয় দিনে (২২ জানুয়ারি) তিনি ১৪টি অনুষ্ঠান এবং কয়েকটি পার্শ্ব ইভেন্টে যোগ দেন। প্রধান উপদেষ্টা জার্মানির ফেডারেল চ্যান্সেলারির প্রধান এবং বিশেষ কার্যনির্বাহী মন্ত্রী উলফগ্যাং শ্মিট; বেলজিয়ামের রাজা ফিলিপ; থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পায়োংটার্ন সিনাওয়াত্রা; সুইজারল্যান্ডের ফেডারেল পররাষ্ট্র বিভাগের ফেডারেল কাউন্সিলর ইগনাজিও ক্যাসিস; সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই সংস্কৃতি ও শিল্প কর্তৃপক্ষের চেয়ারপারসন শেখা লতিফা বিনতে মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম; জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস; কঙ্গোর রাষ্ট্রপতি ফেলিক্স শিসেকেদি; জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্রাক্তন মার্কিন বিশেষ দূত জন কেরি; প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার; এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার ভলকার টার্কসহ অন্যান্যদের সাথে ডব্লিউইএফ—এ বৈঠক করেন। অধ্যাপক ইউনূস শীর্ষ সম্মেলনের সময় ‘জলবায়ু ও প্রকৃতির অবস্থা’ শীর্ষক একটি পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন এবং দাভোসের একটি হোটেলে সামাজিক উদ্যোক্তাদের জন্য শোয়াব ফাউন্ডেশনের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তৃতীয় দিনে (২৩ জানুয়ারি) অধ্যাপক ইউনূস ১৪টি নির্ধারিত অনুষ্ঠান এবং অনেক পার্শ্ব কর্মসূচিতে যোগ দেন। তিনি মেটা প্ল্যাটফর্মস ইনকর্পোরেটেডের গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের প্রেসিডেন্ট স্যার নিক ক্লেগ; সংযুক্ত আরব আমিরাত—ভিত্তিক গ্লোবাল লজিস্টিকস প্রোভাইডার ডিপি ওয়ার্ল্ডের গ্রুপ চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতান আহমেদ বিন সুলায়েম; অধিকার গোষ্ঠী অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড; ডেনিশ শিপিং এবং লজিস্টিক কোম্পানি এ পি মোলার— মারস্কের চেয়ারম্যান রবার্ট মারস্ক উগলা; এবং বিশ্বব্যাংকের অপারেশনস বিভাগের এমডি আনা বিজের্ডের সঙ্গে বৈঠক করেন। প্রধান উপদেষ্টা ডব্লিউইএফ শীর্ষ সম্মেলনে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ক্লাউস শোয়াব আয়োজিত একান্ত বৈঠকেও যোগ দেন এবং বৈঠকের ফাঁকে দাভোসের ক্লাইমেট হাবে একটি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন। ২৪ জানুয়ারি সুইজারল্যান্ডে তার শেষ দিনে, প্রধান উপদেষ্টা সাতটিরও বেশি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এদিন শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে আমেরিকান বিনিয়োগকারী রে ডালিও, মারিনো ম্যানেজমেন্ট এবং ডালিও ফ্যামিলি অফিসের প্রতিষ্ঠাতা, অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এছাড়াও জেনেল গ্রুপের (রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল কোম্পানি) নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আমের আলিরেজা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেন। এর আগে ২১ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সভায় যোগদানের জন্য জুরিখে পেঁৗছান।