শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৬:০১ অপরাহ্ন

দ্বাদশ নির্বাচনে অনলাইনে মনোনয়ন ২১ জনের পেছনে রাষ্ট্রের গচ্চা ২১ কোটি টাকা

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় সোমবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৩

জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে ॥ সংসদীয় ৩০০ আসনের বিপরীতে ১৭১৬ জন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিলেও অনলাইনে নিবন্ধন করা ৩৫৯ প্রার্থীর মধ্যে মাত্র ২১ জন জমা দিয়েছিল। এতে অর্থনৈতিক মদ্দার এই সঙ্কটে রাষ্ট্রের ২১ জনের পেছনে গচ্চা ২১ কোটি টাকা। কমিশন বলছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট আগামী ৭ জানুয়ারি। এ নির্বাচনের পর পরই অনুষ্ঠিত হবে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এ ভোটের আগে আগেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের অনলাইনে মনোনয়ন ফরম পূরণে এ্যাশ প্রোগ্রামের উদ্যোগ নিবে কমিশন। প্রযুক্তির সহায়তায় ঘরে বসে কিভাবে আবেদন করা যায়; সেটাতে উৎসাহিত করতেই ওই তৎপরতা শুরু করবে কমিশন। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে অনেক প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনলাইনে মনোনয়ন ফরম পূরণ প্রক্রিয়াটি কিছুটা তাদের কাছে জটিল বলে মনে হয়েছে। এর আগে করোনার টিকা নেওয়া সংক্রান্ত সুরক্ষা অ্যাপটি এতো জটিল ছিল না বলেই অভিমত প্রার্থীদের। বলছেন, আইনজীবীর মাধ্যমে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ফরম পূরণ করে কাপজপত্র সংযুক্তির পরও অনেক তথ্য অসম্পূর্ণ থেকে যায়। অনেক সময় অসাবধনতার কারণে প্রার্থীতা বাতিল হয়ে যায়। সেখানে অনলাইনে একটি ভুল করলেও নিশ্চয়ই রিটার্নিং কর্মকর্তা করণিক ত্রুটির জন্য প্রার্থীতা বৈধ করবেন না। তাই উটকো ঝামেলা এড়াতে সদিচ্ছা সত্ত্বেও তারা ওই পথে হাটেননি। তবে, নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্বাচনী অ্যাপটি গতানুগতি না। কয়েক ধাপ পেরিয়ে তারপর কাঙ্খিত সেবার কাছে পৌঁছাতে হয়। এটাকে ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে সলজলভ্য করা গেলে আগামীতে এই প্রযুক্তিতে অভ্যস্ত হতে পারেন। এর জন্য দরকার কমিশনের সদিচ্ছা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচনী এ্যাপে বিশেষ ধরণের চারটি সুবিধা রেখে দ্বাদশ নির্বাচনের প্রার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করেছিল। এগুলো হচ্ছে, – যেকোন নির্বাচনে ঘরে বসে ভোটে অংশ নিতে ইচ্ছুক প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিল করার সুযোগ রাখা হয়েছিল। এমনকি ভোটারগণ তার ভোটকেন্দ্রটি এই এ্যাপের মাধ্যমে জানতে পারবেন; সঙ্গে সুবিধা পাবেন কোন পথ দিয়ে তাকে কেন্দ্র পৌছাবেন তার পথনিদের্শনা, নির্বাচনে যারা দায়িত্ব পালন করবেন তারা প্রতি দুই ঘণ্টা পর পর কত ভোট পড়লো তার একটি তথ্য-পরিসংখ্যান বা হিসাব দেখতে পারবেন এবং স্থানীয় সরকারের যে নির্বাচনগুলো হয় তার বিস্তারিত তথ্য যেমন,- কবে নির্বাচনটি হয়েছিল, ভোটার কত ছিল এবং নির্বাচনের মেয়াদ কবে শেষ হবে সেটিও জানা যাবে এর সহায়তায়। গত ৩০ নভেম্বর এ নির্বাচনের প্রার্থীদের মনোনয়ন পত্র জমার শেষ দিন ছিল। বর্তমানে চলছে প্রার্থীতা বাতিল হওয়াদের আপিল শুনানি। নানা ধরণের সুবিধা থাকার কারণে এই অ্যাপ তৈরিতে ইসির ব্যয় হয় ২১ কোটি টাকা। যার মধ্যে সফটওয়্যারের পেছনে ৯ কোটি ১১ লাখ এবং হার্ডওয়ারের পেছনে ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। ইসির তথ্যমতে, দ্বাদশ নির্বাচনের আগে পরীক্ষামূলকভাবে নির্বাচনী অ্যাপের সহায়তায় ঢাকা-১৭ আসনে সীমিত পরিসরে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমার বিধান রেখেছিল ইসি। লক্ষ্য ছিল, দ্বাদশ নির্বাচনে অ্যাপটি ব্যবহার করবেন প্রার্থীদের বড় একটি অংশ। কিন্তু অনলাইনে মনোনয়ন ফরম পূরণে বেশি আগ্রহী হননি বেশির ভাগ প্রার্থী। বিএনপিসহ ১৫টি দল নির্বাচন বর্জন করেছে। অংশ নিচ্ছে ২৯টি রাজনৈতিক দল। এই দলের মধ্যে ২২টি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ১২জন, জাতীয় পার্টির ১১জন, জাতীয় পার্টির- জেপি ১জন, কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগের ১জন, গণতন্ত্রী পার্টির ১জন, বাংলাদেশের ওর্য়ার্কাস পার্টির ২জন, বিকল্প ধারা বাংলাদেশের ১জন, জাতীয় সমাজতান্ত্রি দল-জাসদের ৫জন, জাতের পার্টির ৯জন, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের ৪জন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ৫জন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- বাংলাদেশ ন্যাপ ১টি, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের ২জন, ইসলামী ঐক্যজোটের ১জন, বাংলাদেশ মুসলীম লীগ-বিএমএল ১জন, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের ২জন, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) ১জন, বাংলাদেশ কংগ্রেস ৬জন, তৃণমূল বিএনপি ৭জন, বাংলাদেশ জাসদ ২জন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম ২জন, বাংলাদেশ সুপ্রীম পার্টি-বিএসপি ৩জন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ৪৩জনসহ মোট ৩৫৯জন। তবে রেজিস্ট্রেশন করা এসব প্রার্থীর মধ্যে চূড়ান্তভাবে মনোনয়ন জমা দিয়েছিল মাত্র ২১জন। সীমিত সংখ্যক প্রার্থী অনলাইনে আবেদন করায় কিছুটা বিব্রত কমিশন। তারা চাইছে, আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আগে ব্যাপক তৎপরতা চালানোর। যাতে সম্ভাব্য প্রার্থীরা অনলাইনে মনোনয়ন ফরম পূরণে উৎসাহিত হন। তবে, অনলাইনে মনোনয়ন ফরম পূরণে সাড়া কম পাওয়ায় রাষ্ট্রের ২১ কোটি টাকা গচ্চাকে আমলে নিচ্ছে না।। বলছেন, আগামীতে এই পদ্ধতিতে মানুষের সাড়া জাগানো গেলে ক্ষতি কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমদ এ প্রসঙ্গে বলেন, অনলাইনে তখন প্রার্থীরা উৎসাহিত হবেন যখন নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ হবে। আর সুরক্ষা অ্যাপের মতো মনোনয়নপত্র জমা সহজ পদ্ধতিতে আনা সম্ভব হলে এর প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়বে। আর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন বলেন, নির্বাচনী অ্যাপ এই প্রথম চালু করা হলো। মানুষ অভ্যস্ত হলে এবং ঝামেলামুক্ত মনে করলে তখন এর প্রতি ঝুঁকবে মানুষ। এর আগ পর্যন্ত কমিশনের উচিত হবে এই বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালানো। অন্যথায় এবার অ্যাপের পেছনে যে খরচ হয়েছে আগামীতে আরও ক্ষতি বাড়তে থাকবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com