জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে ॥ নির্বাচন কমিশনের মাঠ অফিসগুলোতে আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে হামলার আশঙ্কা থাকায় বাড়ানো হচ্ছে নিরাপত্তা নজরদারি। ইসির মাঠ অফিসের কর্মকর্তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশের মাঠ অফিস। ইসির অনেক জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নিজেদের ও অফিসের নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশ কমিশনার এবং পুলিশ সুপার (এসপি)’দের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সম্প্রতি পত্র দেয়। তাদের দাবিকে আরও কার্যকর করতে গত ১২ অক্টোবর কমিশনের সুপারিশের আলোকে কমিশনের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও অফিসের নিরাপত্তা নিশ্চিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন নিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব বরাবর জোরালো তাগিদ দিয়ে আরেকটি পত্র দেয়া হয়। এ চিঠিতে হামলার হুমকি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়। এ পত্র ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন নিরাপত্তা বিভাগ নথিভুক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মাঠ অফিসে নিদের্শনা পাঠিয়েছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। নির্বাচন উপলক্ষে ভোটার তালিকা, ব্যালট বাক্স, ব্যালট পেপার ও বিভিন্ন প্রকারের অতি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী মালামাল নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের মাঠ পর্যায়ের ১০টি আঞ্চলিক অফিস, প্রতিটি জেলা নির্বাচন অফিস, প্রত্যেক উপজেলায় উপজেলা নির্বাচন অফিস এবং মেট্রোপলিটন এলাকায়র থানা নির্বাচন অফিসসমূহে সংরক্ষণ করা হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এ সকল অফিসের নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়তে পারে মর্মে আশঙ্কা করা হচ্ছে। জনস্বার্থে ও আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দিয়ে ইসির মাঠ পর্যায়ের অফিসের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। ইসি সচিবালয়ের মাঠ পর্যায়ের প্রতিটি কার্যালয় বিশেষ করে আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস, জেলা নির্বাচন অফিস, উপজেলা নির্বাচন অফিস ও থানা নির্বাচন অফিসসমূহের এখন থেকে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হলো। এর আগেই কমিশনের নির্দেশের আলোকে ইসির সব মাঠ অফিসের অর্থরাইজড কর্মকর্তারা পুলিশ কমিশনার ও এসপিদেরকে নিরাপত্তা চেয়ে পত্র দিয়েছিল। কয়েকজন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা চিঠি পাঠানোর তথ্য নিশ্চিত করে জানান, কমিশন থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়ার আগে প্রধান কার্যালয়ের নিদের্শনার আলোকে আমরা নিরাপত্তা চেয়ে পত্র দিয়েছিলাম। এর আলোকে পুলিশ কমিশনার ও পুলিশ সুপারদের নিদের্শনায় পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে অফিসের নজরদারি শুরু করেছেন। তারা মূলত দেখছেন, কি ধরণের এই নির্বাচন অফিসগুলো ঘিরে থ্রেট রয়েছে, কারা হামলা করতে পারে, সেখানে দুর্বৃত্ত কারা রয়েছে এবং অফিস কোন দিক থেকে হামলা হতে পারে সার্বিক বিষয় নজরদারি করছেন। তারা বলেন, আমরা সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা চেয়ে আনসার সদস্য চেয়েছিলাম। কিন্তু আনসার নিরাপত্তায় নিলে আলাদা অর্থ দিতে হবে। আর আমরা চাইলেও আনসার সদস্য দিয়ে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হতো না। তাই জেলা পুলিশ সুপার তার অধীনস্থ থানার ওসি ও পুলিশের নিরাপত্তা রক্ষীদের দিয়ে নজরদারি করছেন। এর আগে শনিবার (৭ অক্টোবর) ইসির মাঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কমিশনের ঢাকায় নির্বাচনের আগাম প্রস্তুতির সভা হয়। সভায় একজন সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাঠপর্যায়ের নিরাপত্তার বিষয়টি তোলেন। তার বক্তব্যের রেশ ধরে চারজন আঞ্চলিক ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন। যদিও একই বিষয়ে বারবার বক্তব্য না দিতে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম তাগাদা দেন। ইসির মাঠ কার্যালয়ের নিরাপত্তার বিষয়ে কর্মকর্তারা বলেন, ২০১৪ সালে নির্বাচনে কয়েকটি দল অংশ নেয়নি। ওই নির্বাচনে মাঠ কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটে। জেলা প্রশাসক, ইউএনও ও পুলিশ সুপার কার্যালয়গুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে না। ইসির কর্মকর্তারা বলেন, বিএনপিবিহীন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে ফেনিতে প্রথম নির্বাচন অফিসে হামলা করা হয়। এতে একটি কক্ষের পুরো মালামাল পুড়ে যায়। পর্যায়ক্রমে আরও অনেক অফিসে হামলা হয়। ওই আশঙ্কা থেকেই এবার আগাম সর্তকতার অংশ হিসেবে অফিস ও নির্বাচনী মালামালের নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করা হয়। এবারও নির্বাচনে সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে। বিএনপি এখনও নির্বাচনমুখী হয়নি। ভোট প্রতিহতের হুঙ্কারও রয়েছে। সব মিলিয়ে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার পাশাপাশি নানা শঙ্কা রয়েছে। কমিশনের নীতি-নির্ধারকদের আগাম সতর্কমূলক প্রস্তুতির কারণে নির্বিঘ্নে নির্বাচন করা সম্ভব হবে বলে জানান কয়েকজন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। তারা অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনে ডিসিরা রিটার্নিং কর্মকর্তা হলেও নির্বাচনের সার্বিক কার্যক্রমে সহায়তা করে থাকে ইসির কর্মকর্তারা। কিন্তু নানাভাবে তাদের অবহেলা করা হয়। এটা সিইসিসহ কমিশনাররাও জানেন। কিন্তু নানা সীমাবদ্ধতার কারণে অনেক সময় আমাদের দাবি ও অভিযোগগুলো পাশ কাটিয়ে যান।