এফএনএস : ধারাবাহিকভাবে কমছে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি। ওই বন্দর দিয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৬ লাখ ৪৪ হাজার টন পণ্যআমদানি করা হয়েছিল। পরের অর্থবছরে আমদানি পণ্যের পরিমাণ ২১ লাখ ১৪ হাজার টনে দাঁড়ায়। আর ওই ধারা চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসেও অব্যাহত রয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে বেনাপোল দিয়ে আমদানি কমেছে ৮৮ হাজার ৯৩ টন। গত অর্থবছরের জুলাই ও আগস্টে আমদানি হয়েছিল ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৬৪২ টন পণ্য। আর চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে আমদানি করা হয়েছে ৩ লাখ ৯ হাজার ৫৪৯ টন। ফলে ওই দুই মাসে যে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ছিল তা পূরণ হয়নি। বেনাপোল বন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকার ডলার সঙ্কটের কারণে আমদানিতে নিরুৎসাহিত করছে। বর্তমানে ৭৫ থেকে শতভাগ এলসির মার্জিন দিতে হচ্ছে। ফলে ব্যবসায়ীরা আমদানি করতে পারছে না। তাছাড়া বেনাপোল কাস্টমসের হয়রানির কারণেও অনেক ব্যবসায়ী অন্য বন্দর ব্যবহার করতে শুরু করেছে। বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি কমে যাওয়ায় সরকারের রাজস্ব আয়ও কমে গেছে। জুলাই ও আগস্টে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯১০ কোটি টাকা হলেও সেখানে ৭৫৭ কোটি ২১ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। তাছাড়া গত অর্থবছর তার আগের বছরের তুলনায় বেনাপোল কাস্টম হাউজে ৫৫৮ কোটি ৮ লাখ টাকা রাজস্ব কম আদায় হয়েছে। অর্থবছরটিতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা থাকলেও সেখানে ৪ হাজার ৫৯৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে। তার আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ২৪৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা আর আদায় হয়েছিল ৪ হাজার ১৪৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা। ওই বছর ঘাটতি ছিল ২ হাজার ৯৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। সূত্র জানায়, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বাংলাদেশ ও ভারতীয় ব্যবসায়ীরা বেনাপোল দিয়ে বাণিজ্যে বেশি আগ্রহী। কিন্তু বর্তমানে ডলার সঙ্কটের কারণে সরকার এলসিতে শতভাগ মার্জিন শর্ত দিয়েছে। যে কারণে ব্যবসায়ীরা এলসি করতে পারছে না। তাতে জুলাই ও আগস্টে আমদানি কমে গেছে এবং চলতি মাসে আমদানি আরো কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সূত্র জানায়, এলসি করতে সরকার এখন ৭৫ শতাংশ মার্জিন নিচ্ছে। অনেক সময় আমদানিকারকদের শতভাগ টাকা দিয়ে এলসি করতে হচ্ছে। ফলে নগদ টাকার চরম সংকট তৈরি হয়েছে। সব মিলিয়ে আমদানিকারকরা বেকায়দায় পড়েছে। মূলত উচ্চ মার্জিনের কারণে সব ব্যাংকে এলসি কমেছে। ব্যবসায়ীরা নগদ টাকার জোগান দিতে না পারার কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ওই ধারাবাহিকতায় চলতি মাসে এলসির পরিমাণ আরো কমার শঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া বেনাপোল স্থলবন্দরে কাস্টমসের নানা হয়রানি আর বন্দর ব্যবস্থাপনায় অনিয়মের কারণেও অনেক ব্যবসায়ী বেনাপোল ছেড়ে অন্য বন্দরে চলে যাচ্ছে। এদিকে এ প্রসঙ্গে বেনাপোল কাস্টমস হাউজের যুগ্ম-কমিশনার আবদুর রশিদ মিয়া জানান, ডলার সংকটে বাংলাদেশ ব্যাংক এলসির মার্জিন বাড়িয়েছে। ফলে ব্যবসায়ীরা আমদানি কমিয়ে দিয়েছে। অতি জরুরি ছাড়া তারা পণ্য আনছে না। ফলে গত জুলাই-আগস্টে পণ্য আমদানি কমে গেছে। তবে তিনি যে কোনো ধরনের হয়রানির অভিযোগ অস্বীকার করেন।