মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:২৪ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
প্রতিনিয়ত ভাংগনে ইছামতি ও কালিন্দী নদী \ ছোট হয়ে আসছে সাতক্ষীরা \ বাংলাদেশ হারাচ্ছে ভূ—খন্ড \ স্থায়ী সমাধান জরুরী প্রয়োজন মেগা প্রকল্প গ্রহণ \ এখনই সময় দেবহাটা সর: পাইলট হাইস্কুলের শহীদ মিনার উদ্বোধনী ও পুরস্কার বিতরণ দেবহাটা রিপোটার্স ক্লাবের শীতবস্ত্র বিতরণ দেবহাটায় তারুণ্যের উৎসব উদযাপনে পরিচ্ছন্নতা অভিযান শ্যামনগরে গর্ভবতী গরু জবাই \গ্রাম্যমান আদালতে ব্যবসায়ীকে জরিমানা সাতক্ষীরায় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট উদ্বোধন সাতক্ষীরায় প্রেসব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম রসুলপুর জান্নাতুল ফিরদাউস কুরআনিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার ছাদ ঢালাই উদ্বোধন ডুমুরিয়ার বিল ডাকাতিয়ায় সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর আবাদী জমিতে বোরো চাষ অনিশ্চিত খুলনায় যুবদল নেতাকে কুপিয়ে হত্যা

ধুলিহর ব্রহ্মরাজপুর এলাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতায় পানিবাহিত রোগ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশংকা

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় রবিবার, ১ অক্টোবর, ২০২৩

ব্রহ্মরাজপুর প্রতিনিধি ॥ প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও বৃষ্টি হলেই সাতক্ষীরা সদরের কয়েকটি ইউনিয়নের ২৫/৩০ টি গ্রামে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টির কারণে সাতক্ষীরার পৌরসভা এলাকা হতে শুরু করে ধুলিহর, ব্রহ্মরাজ পুর ও ফিংড়ী ইউনিয়নের ২৫/৩০টি গ্রামে স্থায়ী জলবদ্ধতায় ধুলিহর ইউনিয়নের দামারপোতা, বাগডাঙ্গা, বড়দল, জিয়ালা, গোবিন্দপুর, নাথপাড়া, কাজিরবাসা, তালতলা, বালুইগাছা, ধুলিহর সানাপাড়া, জাহানাবাজ, কোমরপুর, দরবাস্তিয়া, চাঁদপুর গ্রামের অধিকাংশ জায়গায় জলাবদ্ধতা ভয়াবহ রুপ নিয়ে স্থায়ী জলবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এছাড়াও ফিংড়ী ইউনিয়নের ফয়জুল্যাপুর, বালিথা, শিমুল বাড়ীয়া, এল্লারচর, ফিংড়ী, গাভা, ব্যাংদহ, জোড়দিয়া, গোবরদাড়ী, সুলতানপুর, মজলিস পুর, হাবাসপুর ও কুলতিয়াসহ ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নের মাছখোলা, নুনগোলা, রামচন্দ্র পুর, চেলার ডাঙ্গা, বড়খামার, মেল্লেকপাড়া, উমরাপাড়া বাঁধন ডাঙ্গাসহ সাতক্ষীরা পৌরসভার ৫টা গ্রাম স্থায়ী জলাবদ্ধতার শিকার হয়। গত ১৫/২০ বছর যাবত বেতনা নদীর তীরে অবস্থিত এই এলাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ, গবাদিপশুসহ বিভিন্ন গৃহপালিত প্রাণী। প্রতি বছর জুলাই মাস আসতে না আসতেই সামান্য বৃষ্টি হলেই সাতক্ষীরার বেতনা পাড়ে অবস্থিত এসব গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে যায়। এসব গ্রামের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। পানিবন্দি এসব মানুষের মধ্যে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন পানি বাহিত রোগ বালাই। রাস্তাঘাট,স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা ডুবে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়। গত কয়েকদিন আগের টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট ভয়াবহ স্থায়ী জলবদ্ধতার কারনে এসব এলাকার শতশত একর জমিতে আমন ধান চাষ করা সম্ভব হয়নি। এছাড়াও কৃষকরা কিছু জমিতে আউশ ধান চাষ করলেও ভারী বর্ষনের ফলে ধানগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে একাধিক কৃষকরা জানিয়েছেন। সাতক্ষীরা পৌরসভার ড্রেনেজ ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনার কারণে পৌরসভার পানি ধুলিহর ও ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নের খাল দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বেতনা নদীতে পানি নিষ্কাশন হতে না পারায় এসব এলাকার মানুষকে স্থায়ী জলাবদ্ধতা শিকার হতে হয় বলে জানান ধুলিহর ইউনিয়নের ০৩ নং ওয়ার্ড সদস্য মোঃ আনিছুর রহমান আনিস। এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে বেতনা নদী খনন ও এসব এলাকার খাল খননের দাবীতে জেলা পানি নিষ্কাসন ও বাস্তবায়ন কমিটি, জেলা নাগরিক কমিটিসহ বিভিন্ন সংগঠন গত এক যুগ ধরে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছে। স্থানীয় দৈনিক দৃষ্টিপাতসহ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রতি বছর জলাবদ্ধতার কারণে ক্ষয়ক্ষতি ও মানুষের দূর্বিসহ ভোগান্তির বর্ননা দিয়ে ফলাও করে সংবাদ প্রকাশ করার ফলে সরকার ৩৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে বেতনা নদীর খনন কাজ এবছর শুরু করলেও তা কবে নাগাদ শেষ হবে তার কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। ধীর গতিতে চলছে নদী খননের কাজ ফলে জলাবদ্ধতার শিকার এসব এলাকার মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে এলাকার বাড়িঘর, রাস্তাঘাট সব পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় জনদূর্ভোগে অসহনীয় হয়ে পড়েছে বেতনা পাড়ের মানুষ। আবার অনেকেই বেতনা নদীর খনন কাজ দেখে আশার আলো না দেখে হতাশ হয়ে সাতক্ষীরা প্রাণ সায়ের খালের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছেন। ধুলিহর বালুইগাছা গ্রামের সাবেক মেম্বর আব্দুর রশিদ জানান- গত কয়েক বছর ধরে জলাবদ্ধতায় আমার বসতবাড়ি সহ এলাকার অধিকাংশ বসতঘরের মধ্যে পানি ওঠায় আমরা অসহনীয় দূর্ভোগের মধ্যে মানবেতর জীবন যাপন করছি। অথচ শুধু পানিতে ডুবে যাওয়ার কারণে প্রতি বছর এসব এলাকার অসংখ্য রাস্তাঘাট নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া জলাবদ্ধতার কারণে শত শত মাছের ঘেরসহ পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে যাওয়ায় অসংখ্য মৎস্যচাষীর মাথায় হাত উঠে যায়। এসব এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে প্রতি বছর কৃষকরা আমন ধান চাষ করতে না পারায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বলে জানান ধুলিহর গ্রামের কৃষক গাজী লালটু। এছাড়া পর্যাপ্ত বৃষ্টিতে রাস্তা ঘাট পানিতে ডুবে যাওয়ায় এলাকায় জনজীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। এলাকার বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে যাওয়ার কারণে স্কুলের কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়া ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। জলাবদ্ধতার কারণে এলাকায় বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। স্থানীয় ধুলিহর গ্রামের গবাদিপশু চাষী মুরাদ হোসেন জানান – প্রবল বর্ষনে বিচলী ও খড়গাদার ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় গোখাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এসব গবাদিপশু নিয়ে চাষীরা বিপাকে পড়েছে। প্রতিবছর জলাবদ্ধতার কারণে ধুলিহর ইউনিয়নের বালুইগাছা গ্রামের পালপাড়ায় মৃৎশিল্প হাড়ি, পাতিল, কলস, টালিসহ বিভিন্ন জিনিস পত্র তৈরি করার মাটি এবং কারখানা পানিতে ডুবে যাওয়ার কারণে ঐতিহ্য বাহী এ শিল্প আজ বিলুপ্ত হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে বলে জানান বালুইগাছা গ্রামের সাংবাদিক মোঃ শাহাদাৎ হোসেন বাবু। সচেতন এলাকাবাসী এলাকার স্থায়ী জলবদ্ধতা নিরসনে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য যথাযথ কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com