জিএম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে \ এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পালে হাওয়া লাগা শুরু হয়েছে নির্বাচন কমিশনে (ইসি)। নতুন কমিশন যোগদানের মধ্য দিয়ে তা শুরু হয়ে যায়। কর্মযজ্ঞের এর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে আগামীকাল সোমবার থেকে; কারণ এ দিন সংসদীয় আসনের সীমানা বিন্যান ও ভোটার তালিকা নিয়ে দিক—নিদের্শনা দিবে নতুন কমিশন বলে ধারণা পাওয়া গেছে। এর আগে গত বুধবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বাধিন কমিশন কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক এক সভায় বসেন। সেখানে নানা পরিচিতিমূলক প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করেন তারা। নির্বাচন কমিশন সূত্র বলছে, নতুন নির্বাচন কমিশন সোমবার একটি কমিশন সভার করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে সকালে না বিকালে আজ রবিবার চূড়ান্ত হবে। ওই কমিশন সভায় দুটি এজেন্ডাভিত্তিক আলোচনার সিদ্ধান্ত রয়েছে; একটি ভোটার তালিকা প্রণয়ন কার্যক্রম এবং অপরটি তিনশ সংসদীয় আসনের সীমানা বিন্যাস। এদিকে, কমিশন যোগদানের পরই পরই সংসদীয় আসনের সীমানা পুর্নবিন্যাসের জন্য কমিশনের কাছে আবেদন আসতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে রাজধানী ঢাকার আশপাশসহ চারটি সংসদীয় আসন থেকে আবেদন এসেছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। ধারণা দেয়া হয়েছে, দুটি এজেন্ডার ভিত্তিতে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নেয়ার মাধ্যমে নবগঠিত কমিশনের এয়োদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচনী কর্মযজ্ঞে প্রবেশ করবে। ইসির কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, যেকোন নির্বাচন কমিশনের সার্বিক দায়িত্বের মধ্যে সুষ্ঠু ও নিভুর্ল ভোটার তালিকা প্রণয়ন, জনসংখ্যার সর্বশেষ চূড়ান্ত প্রতিবেদনের আলোকে সংসদীয় সীমানা বিন্যাস, জাতীয় সংসদ নির্বাচন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচন এ পাঁচটি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এর বাইরে বাকি কাজগুলো অতিরিক্ত দায়িত্বের অংশ হিসেবে রাষ্ট্রকে সহায়তা করার জন্য করে থাকে কমিশন। সেই ধারাবাহিকতায় নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখাকে ওই দুটি ইস্যুতে সম্ভাব্য প্রস্তাবনার খসড়া তৈরি করে কমিশনকে সরবরাহ করার নিদের্শনা দিয়েছে। এই প্রস্তাবনার আলোকে আগামী সোমবার নতুন এই কমিশনের প্রথম কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হবে। তবে, ভোটার তালিকা হালনাগাদ প্রস্তুুতি কার্যক্রম বাড়ি বাড়ি গিয়ে করবে নাকি কেন্দ্রে এসে নতুন ভোটাররা নাম তালিকায় অন্তভুর্ক্ত করবেন এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এমনকি নির্বাচনী শাখা থেকেও এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনাও দেয়া হচ্ছে না বলেও জানা গেছে। কিন্তু বাড়ি বাড়ি গিয়ে করতে চাইলে এতে কি ধরণের সমস্যা, খরচ ও জনবল প্রয়োজন হবে, — কমিশন সে সংক্রান্ত প্রস্তাবনা তৈরির জন্য মৌখিক নিদের্শনা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। পাশাপাশি বাড়ি বাড়ি না গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করলে কি সমস্যা ও সংকট দেখা দিতে পারে তারও সম্ভাব্য কারণ নির্ণয় করে প্রস্তাবনা দিতে বলা হয়েছে। এদিকে, ইতিমধ্যে গত ৩ বছরের নতুন ভোটারদের তথ্য সংগ্রহ করা আছে, যা নতুন বছরের ২ জানুয়ারি খসড়া তালিকা প্রকাশের কথা রয়েছে। আর ২ মার্চ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের নিয়ম রয়েছে। সর্বশেষ ২০২২ সালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সর্বশেষ হালনাগাদ অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ভোটার রয়েছে ১২ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার ১৬০ জন। ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার বিষয়ে কমিশনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ বলেন, আমাদের প্রস্তুতির কথা যদি বলেন তাহলে ঠিক এ মূহূর্তে নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না যে প্রস্তুতি আছে কি—না। কমিশন যেভাবে চাইবে সেভাবে আমাদের শেষ করতে হবে এবং সে প্রস্তুতি আমাদের গ্রহণ করতে হবে। এদিকে, নতুন কমিশনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ সংসদীয় আসনের সীমানা বিন্যাস করা। এর আগে এক—এগারো পুনগঠিত ড. হুদার কমিশন ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ১৪৫টি আসন ভেঙে চুরমান করেছিল। দূরভিসন্ধিমূলক এই কমিশন সাতক্ষীরা ও বরিশালসহ কয়েকটি জেলার আসন কমিয়ে ঢাকায় ৮টি আসন বৃদ্ধি করে। অভিযোগ রয়েছে, জিআইএস পদ্ধতিতে সীমানা বিন্যাসের নামে বিএনপি—জামায়াতের ভোটব্যাংক আসনগুলো এলোমেলো করে পতিত হাসিনা সরকারের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর আসনে জুড়ে দেয়া হয়। এ নিয়ে আপত্তি আমলে নেয়নি০ বিএনপি—জামায়াতের। এখন বর্তমান কমিশনের জন্য ভোটার তালিকার চেয়ে সীমানা বিন্যাস চ্যালেঞ্জ হবে। ইতিমধ্যে নারায়নগঞ্জের সোনরগাঁও, ঢাকার দোহার—নবাব ও কুমিল্লাসহ কয়েকটি আসনকে আবেদন জমা পড়েছে। সোমবার কমিশন সভায় ভোটার তালিকার সঙ্গে এ বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হবে। গত ২১ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি পাঁচ সদস্যের ইসিকে নিয়োগ দিয়েছে।