দিঘলিয়া (খুলনা) প্রতিনিধি ॥ খুলনার দিঘলিয়া উপজেলায় মাদক ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য বন্ধে এবং নতুন প্রজন্মকে মাদকের আগ্রাসন থেকে রক্ষা করতে “মাদক মুক্ত চাই দিঘলিয়া উপজেলা” শিরোনামে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়ে মানববন্ধন করেছে গ্রামবাসীরা। জানাগেছে, দিঘলিয়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে দিনরাত সমানতালে চলে মাদক বিক্রি। এদিকে যারাই মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলে, মাদক কারবারিরা তাদেরকে হয়রানি করেন। উপজেলায় সর্বত্রই অনেকটা হাতের নাগালে পাওয়া যাওয়ায় মাদকদ্রব্যের বিস্তার উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিগত বছরগুলোর তুলনায় সাম্প্রতিক সময়ে এর বিস্তার ঘটেছে আশঙ্কাজনকভাবে। এলাকাবাসীরা উপজেলার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার দাবি জানান। তারা জানান, মাদক ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন যাবত এলাকায় মাদক ব্যবসা করে তরুণদের বিপথে পরিচালিত করে আসছে। এছাড়া বিভিন্ন সময় এরা পুলিশের হাতে ধরা পড়লেও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যায় বলে জানা যায়। উপজেলার বিভিন্ন গলি কিংবা নদীর পাড় বা জনমানবহীন যে কোনো জায়গা তরুণদের প্রকাশ্যে মাদকসেবন করতে দেখা যায়। কখনো ইনজেকশন আবার কখনো ফেনসিডিল, ইয়াবা, গাঁজা সেবনে জড়াচ্ছে স্কুল, কলেজ পড়ুয়া-শিক্ষার্থীরা। এলাকাবাসীর অনেকে জানান, প্রশাসনের নাম ভাঙিয়ে একটি মহল মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। অপরাধী গ্রেফতারে নানা তথ্য দিয়ে প্রশাসনকে সহযোগিতা করাই সোর্সের কাজ। এসব সোর্সদের মধ্যে আবার অনেকে নিজেরাই জড়িত মাদক ব্যবসায়। এরা মাঝেমধ্যে বিরোধী গ্রুপের দুই চার জনকে গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ ধরিয়ে দিয়ে নিজেদের ব্যবসা নিরাপদ রাখেন। এদের ছত্রছায়ায় উপজেলায় অর্ধশতাধিক মাদকের স্পট তৈরি হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, শিক্ষার্থীদের মাদকসেবনে জড়ানোর পেছনে মাদক ব্যবসায়ীদের নিয়োগ করা কিছু তরুণ রয়েছে। যারা প্রথমে ফ্রি মাদক সেবন করায়। পরে আসক্ত হয়ে গেলে তারা নিজেরাই ব্যবসা করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগী জানান, মাদক কারবারে কেউ বাধা দিলে তাকে নিয়ে চলে ষড়যন্ত্র। অনেক সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালানোর আগেই সব মাদক কারবারীদের পূর্বেই সতর্ক করে দেন সোর্সরা। ফলে অভিযান চালিয়েও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সফলতা পাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
নেশাজাতীয় দ্রব্যের বিস্তারে সেবনকারীর আর্থিক ও শারীরিক ক্ষতি হচ্ছে। এ অবস্থা রোধ করা না গেলে একটি প্রজন্মের চিন্তার জগতে সৃষ্টি হবে বন্ধ্যত্ব। দীর্ঘমেয়াদে এর ফল কতটা ভয়াবহ হবে, তা সহজেই অনুমেয়। মাদকদ্রব্য কেনাবেচা ও সেবনকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হচ্ছে ভয়ংকর সব অপরাধ। কাজেই মাদকদ্রব্য ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব না হলে সমাজে অপরাধ প্রবণতা আরও বাড়বে। এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের অভিযান নিয়মিত চলমান আছে বলে জানা গেছে। তারই ধারায় বাহিকতায় সেপ্টেম্বর একটি ট্রলার থেকে ৪৯ পিস ইয়াবাসহ এক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদুপরি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান অব্যাহত থাকার পরও মাদকের অবৈধ প্রবেশ ও ব্যবসা নির্মূল করা সম্ভব হয়ে উঠছে না। মাদকের বিস্তার রোধে সরকারকে অবশ্যই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে বলে দাবি জানান এলাকা বাসি।