এফএনএস ক্রীড়া প্রতিবেদক: ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের সবচেয়ে মর্যাদার লড়াইÑআবাহনী ও মোহামেডানের দ্বৈরথ। দুই ঐতিহ্যবাহী ক্লাবের মাঠের লড়াই মানেই বাড়তি উত্তেজনা, বাড়তি প্রতীক্ষা। আর সেই প্রতীক্ষারই অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ৯ বছর পর এক ঐতিহাসিক জয়ে আবাহনীর দাপট থামাল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব।
মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই হাইভোল্টেজ ম্যাচে মোহামেডান জয় পেয়েছে ৩৯ রানের ব্যবধানে। যদিও পয়েন্ট তালিকায় সমান ১৮ পয়েন্ট নিয়ে লিগ পর্ব শেষ করেছে দুই দলই, তবে নেট রান রেটে এগিয়ে থেকে সুপার সিক্স পর্বে শীর্ষে থাকছে আবাহনী। মোহামেডানের এই জয় ছিল শুধু প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারানো নয়, বরং গত এক দশকে নিজেদের হারানো মর্যাদা পুনরুদ্ধারের এক জোরালো ঘোষণা।
টস হেরে ব্যাট করতে নামে মোহামেডান। শুরুটা কিছুটা ধাক্কা খেয়ে হলেও দ্রুত ঘুরে দাঁড়ায় দলটি। রনি তালুকদার ১৬ রানে ফিরলেও ওপেনার আনিসুল ইসলাম ও মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন দ্বিতীয় উইকেটে গড়ে তোলেন ১২৩ রানের এক চমৎকার জুটি। অঙ্কন ৫৫ বলে ৪৮ রানে ফিরলেও ইনিংসের মূল নায়ক হয়ে ওঠেন আনিসুল।
চাপের মুখে ধৈর্য ও শৈল্পিক ব্যাটিংয়ের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে ১১৮ বলে ১১৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন তিনি। তাঁর ব্যাট থেকে আসে ১৮টি চার ও ২টি ছক্কা। শেষে মুশফিকুর রহিম (২০), মেহেদী হাসান মিরাজ (১৮) ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (১৭) মিলে দলকে পৌঁছে দেন ২৬৪ রানে। তবে ৪৮.২ ওভারে অলআউট হওয়াটা কিছুটা হতাশাজনক ছিল।
আবাহনীর হয়ে বল হাতে সবচেয়ে সফল ছিলেন তরুণ পেসার নাহিদ রানা, যিনি নিয়েছেন ৩ উইকেট। দুটি করে উইকেট শিকার করেন মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী, মাহফুজুর রহমান রাব্বি ও রাকিবুল হাসান। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের শিকার একটি।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে আবাহনী। জিসান আলম, পারভেজ হোসেন ইমন এবং মোহাম্মদ মিঠুন যখন দ্রুত বিদায় নেন, তখন থেকেই দলের ওপর চেপে বসে চাপ। সেই চাপ সামাল দিতে সামনে এগিয়ে আসেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।
শান্ত একপ্রান্ত আগলে রেখে খেলেন ১১৩ বলে ৮০ রানের লড়াকু ইনিংস। কিন্তু দলীয় ব্যর্থতার ছাপ মুছতে পারেননি তিনি। তাঁর সঙ্গে কেউই বড় জুটি গড়তে পারেননিÑমুমিনুল হক (২৫), মোসাদ্দেক সৈকত (২৪) ও মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী (২৪) ছোট ছোট ইনিংস খেললেও দলের প্রয়োজনে যথেষ্ট হয়নি। শান্ত ফিরে গেলে আবাহনীর ব্যাটিং লাইনআপ কার্যত ভেঙে পড়ে। ৪৭.২ ওভারে থামে ইনিংস, স্কোরবোর্ডে তখন ২২৫ রান।
মোহামেডানের হয়ে এবাদত হোসেন ছিলেন আগুনে মেজাজে, তুলে নেন ৪টি উইকেট। মিরাজ ও সাইফউদ্দিনের শিকার দুটি করে উইকেট। ম্যাচ শেষে দলের ঐতিহাসিক জয়ের নায়ক হিসাবে উদ্ভাসিত হয়েছেন আনিসুল ও এবাদত।
২০১৬ সালের পর ওয়ানডে ফরম্যাটে আবাহনীর বিপক্ষে এই প্রথম জয় পেল মোহামেডান। এই জয় শুধু পয়েন্ট তালিকার হিসাব নয়, এটি এক মানসিক দ্বার উন্মোচনÑযেখানে ‘অতীতের সোনালি দিন’ ফিরিয়ে আনার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
যদিও সুপার সিক্সে শীর্ষে রইলো আবাহনী, তবে মোহামেডান নিজেদের নতুন করে চেনাল একটি সাহসী বার্তায়Ñযেখানে কেবল জয় নয়, ইতিহাস ভাঙার দৃঢ় সংকল্পও দৃশ্যমান।