বিশেষ প্রতিনিধি \ কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের প্রহারের ১ শিক্ষার্থীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় শিক্ষক-কর্মচারিদের অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ ও ভাঙচুর করেছে ছাত্র, অভিভাবক ও এলাকাবাসী। নিহত রাজপ্রতাপ দাশ কালিগঞ্জ উপজেলার ভাড়াশিমলা ইউনিয়নের হিজলা চন্ডিপুর গ্রামের দিনবন্ধু দাশের পুত্র ও নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেনীর শিক্ষার্থী। সরেজমিন নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে জানাগেছে গতকাল বিকাল ৩টায় শিক্ষকের মারপিটে শিক্ষার্থী রাজপ্রতাপের মৃত্যু হয়েছে এমন অভিযোগে শিক্ষার্থীসহ হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ জনতা দোষী শিক্ষকের বিচারের দাবি জানিয়ে শ্লোগান দিচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই স্কুলের শিক্ষকদের ব্যবহৃত ৮ টি মোটরবাইক ভাঙচুর ও দু’টি মোটরবাইক আগুন দিয়ে জ¦ালিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধরা। এসময় প্রধান শিক্ষকের অফিস কক্ষের চেয়ার, টেবিল, টিভি, আসবাবপত্র ভাঙচুর ও ভেঙ্গে ফেলা হয় স্কুলের কয়েকটি জানালার গ্লাস। খবর পেয়ে কালিগঞ্জ, দেবহাটা ও সাতক্ষীরা থেকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে যেয়ে দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। এছাড়াও কারিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদ মেহেদী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রহিমা সুলতানা বুশরা, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক চেয়ারম্যান এনামুল হোসেন ছোট, নলতা ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্জ আবুল হোসেন পাড়সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকমীরা ঘটনাস্থলে আসেন। পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পর সন্ধ্যার দিকে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মোনায়েম, সহকারী শিক্ষক অবকাশ চন্দ্র খা ও মনিরুল ইসলামকে একটি মাইক্রোবাসে এবং অপর একটি মাইক্রোবাসে করে অবরুদ্ধ অন্যান্য শিক্ষক কর্মচারিদের পুলিশ পাহারায় ক্যাম্পাস থেকে বের করে নিয়ে যায় পুলিশ। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবুল কালাম আজাদ শিক্ষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে স্কুলের এক্সটেনশন বিল্ডিংয়ের তৃতীয় তলায় এক শিক্ষার্থীর জন্মদিন উপলক্ষে কেক কাটছিল ৫/৬ জন সহপাঠী। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলো নবম শ্রেণির ছাত্র রাজপ্রতাপ দাশ, মুশফিকুর রহমান, জোবায়ের ও আর রাফি। সহকারী শিক্ষক অবকাশ চন্দ্র খাঁ ও মনিরুল ইসলাম বিষয়টি দেখতে পান। এ ঘটনায় রাজপ্রতাপ দাশসহ ৪ জনকে মারধর করে অবকাশ চন্দ্র খাঁ। পরে বিষয়টি জানানো হয় রাজপ্রতাপের পিতা নলতা বাজারের মুদি দীনবন্ধু দাশকে। বিকেল তিনটার দিকে হঠাৎ বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা রাজপ্রতাপের লাশ নিয়ে বিদ্যালয়ে এসে বিক্ষোভ ও ভাঙচুর শুরু করে। শিক্ষক ও কর্মচারিরা এসময় ভীত সন্ত্রন্ত হয়ে শিক্ষক মিলনায়তনে আশ্রয় নেন। নিহতের কাকীমা তাপসী দাশ জানান, রাজপ্রতাপ বেলা ১২ টার দিকে বাড়িতে এসে জলপান করে বাথরুমে যায়। বের হয়ে বমি করতে থাকে। এসময় বলেন শিক্ষক আমাকে মেরেছে বুকে ব্যথা করছে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। নলতা হাসপাতালের যাওয়ার প্রতিমধ্যে পথে তার মৃত্যু হয়। লাশ বাড়ি আনার কিছুক্ষণ পর কিছু শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী সেখান থেকে লাশ নিয়ে বিদ্যালয়ে যায়। এসময় রাজপ্রতাপের বাড়িতে চলছিল শোকের মাতম। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আতিকুর রহমান জানান, আমরা সাড়ে ৩ টার দিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। অভিযোগের তীর যে শিক্ষকদের দিকে তাদেরকে হেফাজতে নিয়েছি। পরবর্তীতে তথ্য যাচাই বাছাই করে যারা অভিযুক্ত হবেন তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রাত সাড়ে ৮ টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত প্রধান শিক্ষকসহ সকল শিক্ষক থানায় ছিলো বলে জানা গেছে।