মোঃ রফিকুল ইসলাম, বিশেষ প্রতিনিধি \ সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা শরীফে যথাযোগ্য ধর্মীয় ভাবগম্ভীর্য, মিলাদ—মাহফিল ও আলোচনার মধ্যে দিয়ে গতকাল ১০ ফেব্রুয়ারী সোমবার ৬১ তম বার্ষিক ৩ দিন ব্যাপী পবিত্র ওরছ শরীফের ২য় দিন অতিবাহিত হয়েছে। নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বাদ ফজর হতে পাক রওজা শরীফ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত পবিত্র ওরজ শরীফের ২য় দিন বাদ ফজর মিলাদ—মাহফিল, আলোচনা ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত মিলাদ শরীফে আলহাজ্জ ড. আবু তৈয়ব আবু আহমেদ’র সভাপতিত্বে পবিত্র কোরআন খতম পরিচালনা করেন, হাফেজ হাবিবুর রহমান। মিলাদ শরীফ ও ফাতেহা পাঠ করেন, আলহাজ্জ হজরত মাওলানা মুফতী শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী, সহকারী অধ্যাপক, আহ্্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অফ সুফীজম, ঢাকা। হামদ, নাতে রাসুল, মুরশিদী ও কেয়াম পরিবেশন করেন, মোঃ আবু হোসেন, মোঃ কামরুল ইসলাম, আব্দুর রহমান, মোঃ ফখরুল হোসেন, মোঃ আনিছুর রহমান, হাফেজ মো. শাহাদাত হোসেন। পীর কেবলার লিখিত ভক্তের পত্র থেকে পাঠ করেন, চৌধুরী রাশেদ আহমেদ। আলোচনা করেন, পীরে কামেল আলহাজ্জ হজরতুল আল্লামা খাজা আরিফুর রহমান তাহেরী পীর সাহেব, গাছতলা দরবার শরীফ, চাঁদপুর, আলহাজ্জ প্রফেসর মোঃ গোলাম মহিউদ্দীন। তাওয়াল্লাদ শরীফ পরিবেশন করেন, আলহাজ্জ মাওলানা ওসমান গণি। শেজরা শরীফ পাঠ ও মোনাজাত পরিচালনা করেন, আলহাজ্জ সানোয়ার হোসেন, গাজীপুর আহ্্ছানিয়া মিশন। ২য় পর্বে মাহফিল মাঠে ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত মাহফিলের শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলোয়াত করেন, হাফেজ মো. শাহাদাৎ হোসেন। হামদ, নাতে—রাসুল, মুরশিদী ও কেয়াম পরিবেশনের পর পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে মূল্যবান বক্তব্য রাখেন, ক্বারী মোঃ শামছুর রহমান, মাওলানা নূরুল ইসলাম ফারুকী, মাওলানা মোঃ শহিদুল ইসলাম, ক্বারী মো. কবিরুল ইসলাম, কুলিয়া জামে মছজিদ, আলহাজ্জ হজরত মাওলানা মুফতি গোলাম কিবরিয়া কাদেরী, আলহাজ্জ মাওলানা মোঃ হারুন—অর—রশিদ, আলহাজ্জ অধ্যাপক হাফেজ মোঃ হাফিজুর রহমান, মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ ওসমান গনি সালেহী, আল্লামা মুফতি মাওলানা আলাউদ্দীন জিহাদী, মুফতী মাওলানা আহমাদ রেজা ফারুকী প্রমূখ। গতকাল সোমবার পবিত্র ওরছ শরীফের ২য় দিনে সাতক্ষীরা কালিগঞ্জ সড়কে বিরামহীন যাত্রা, যাত্রীবাহী বাসে, ট্রাক, পিকআপ, মাইক্রোতে, ইঞ্জিনভ্যান, ব্যাটারীভ্যান, ইজিবাইক, মহেন্দ্র, পা—ভ্যান করে পীর কেবলার ভক্তবৃন্দ দর্শনার্থীরা ছুটে আসে নলতা শরীফে। নলতা শরীফের পবিত্র রওজা শরীফ সংলগ্ন এলাকায় লোকে লোকারণ্য, হাজার হাজার, ভক্ত, মুরিদ, এবং সব শ্রেণী পেশার মানুষের আন্তরিক উপস্থিতি, ভক্তদের আরাধনা, মর্শিদ মাওলাকে নিয়ে গর্ব, আশেকানদের সরব উপস্থিতি সব শ্রেণী পেশার মানুষের অংশ গ্রহন ওরছ শরীফ এর দ্যুতি ছড়িয়েছে। পীরে—কামেল বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মোজাদ্দেদ, অবিভক্ত বাংলা ও আসামের শিক্ষা বিভাগের সহকারী পরিচালক, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও শিক্ষা সংস্কারক, প্রখ্যত সাহিত্যিক, সমাজ সেবক, আত্মাধিক সাধক, সমাজ সংস্কারক, জ্ঞান তাপস, মুসলিম রেনেঁসার অগ্রদুত, মুক্তবুদ্ধি ও অসা¤প্রদায়িক চিন্তা—চেতনার অধিকারী, মনোচিকিৎসক, ঐতিহাসিক, দার্শনিক, ‘‘স্রষ্টার এবাদত ও সৃষ্টের সেবা” ব্রত নিয়ে চলা নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের প্রতিষ্ঠাতা সুলতানুল আউলিয়া কুতুবুল আকতাব গওছে জামান আরেফ বিল্লাহ হজরত শাহ্ ছুফী আলহাজ্জ খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (রঃ) সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা শরীফে জন্মগ্রহন করেছিলেন। নলতা শরীফেই তিনি চির নিন্দ্রায় শায়িত আছেন। ওরছ শরীফ উপলক্ষে পাক রওজা শরীফের আশপাশ আলোক আভার বিচ্ছুরন, রং বেরং এর ফুল, বিশাল গেট, প্যান্ডেল, নয়নাভিরাম আলোক সজ্জা ওরছ শরীফকে বিশেষ আকর্ষনীয় করে তুলেছে। সেলিমউল¬্যা গেস্ট হাউস, মিশন ভবন, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, পুরাতন বরফ মিল, কেজি স্কুল কলেজ সহ এমন আরও অনেক ভবনে তিল ধর নের ঠাই নেই। গতকাল লক্ষাধীক মানুষের উপস্থিতি যেমন পবিত্র ওরছ শরীফকে উজ্জীবিত করেছিল অনুরুপ বিপুল সংখ্যক মানুষের মাঝে তাবারক বিতরন এবং বহু সংখ্যক লোকজন ওরছ শরীফের তাবারক সংগ্রহের প্রানন্তকর প্রচেষ্টা করে, তাবারক সংগ্রহ করে। নলতা শরীফের প্রায় বাড়ীতে মেহমান আনাগোনা, বছরের এই সময়টিতে প্রায় বাড়ীতে আত্মীয়স্বজনদের উপস্থিতি ভ্রাতৃত্ব আর আত্মীয়তার বন্ধন কে বিশেষ ভাবে সুদৃঢ় করে। লক্ষ মানুষের উপস্থিতি কিন্তু কোন ধরনের বিশৃংখলা নেই, সবই চলছে যথা নিয়মে, শৃংখলার সাথে একদিকে মিলাদ মাহফিল, তাবারক বিতরন পুস্তক বিক্রয়, পণ্য সামগ্রী বিক্রয়, ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্পের উপস্থিতি, নানান ধরনের খেলনা, পান মিষ্টান্ন দ্রব্যের উপস্থিতির শেষ নেই। লোকে লোকারন্য আইন শৃংখলার সমুন্নত রাখতে প্রশাসনের সরব উপস্থিতি। প্রশাসনের সদস্যরা ওরছ শরীফের, মুল গেট, মিশন ভবন সহ বিভিন্ন সড়ক ও স্পর্শকাতর এলাকাগুলোতে অবস্থান নিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করছেন। সবই চলছে শৃংখলার মধ্যে। হযরত খানবাহাদুর আহছানউল্লা রচিত বিভিন্ন ধরনের বই পত্রের উপস্থিতি ওরছ মোবারকের অন্যতম আকর্ষন। সন্ধ্যার পর পুরো রওজা শরীফ সংলগ্ন অন্তত এক কিলোমিটার আলোক সজ্জার অপরুপ আলো আধারীর বিশেষ আকর্ষনীয় পরিস্থিতির অবতরনা ঘটাচ্ছে। হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি এবং খ্যাতনামা আলেমদের ওয়াজ চলে গভীর রাত পর্যন্ত। বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতি এবং দলে দলে পীর কেবলার মাজার জিয়ারত, চাদর পেশ ছিল উলে¬খযোগ্য। নলতা কেন্দ্রীয় আহছানিয়া মিশনের কর্মকর্তা, সদস্যরা অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে অতিথীদের আপ্যায়ন এবং বিভিন্ন অঞ্চলে শাখা মিশনগুলোতে ভক্তদের আপ্যায়ন সহ ওরছ মোবারকে অবস্থান একে অপরের প্রতি সহযোগিতা, সহমর্মিতা, আন্তরিকতা অনন্য অসাধারণ, দুরদূরান্ত হতে ব্যবসায়ীদের উপস্থিতিও ঘটেছে নলতা শরীফে। ওরছ উপলক্ষে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়িক পণ্যের পরসা সাজিয়ে বসেছে তারা, স্বেচ্ছাসেবকরা ক্লান্তহীন ভাবে আগতদেরকে বিভিন্ন ধরনের সাহায্য এবং সহযোগিতা করে চলেছে। আজ সকালে আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে তিন দিনের পবিত্র ওরছ শরীফ।