শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫, ০৭:৪৫ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
সুন্দরবনে বিএসএফের রেখে যাওয়া ৭৫ জনকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর দেবহাটা বিএনপির সদস্য নবায়ন উদ্বোধনী আয়োজনে জেলা বিএনপির আহবায়ক রহমাতুল্লাহ পলাশ বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন যুবদলের প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত কলারোয়ায যুবদল নেতার ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ মুন্সীগঞ্জে তাপদাহে পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ শ্রীউলায় ইউনিয়ন পর্যায়ে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত তারুণ্যের সমাবেশ সফল করতে স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রস্তুতি সভা ভাড়াশিমলায় ২৫০ প্রান্তিক কৃষানের মধ্যে সবজির বীজ বিতরণ খুলনার সাবেক মহিলা কাউন্সিলর গ্রেফতার বসন্তপুর ফকিরপাড়া জামে মসজিদে বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল

নাজিবউল−াহ ঝড়ে পিষ্ট বাংলাদেশের আশা

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বুধবার, ৩১ আগস্ট, ২০২২

স্পোর্টস ডেস্ক \ লম্বা একটা সময় আফগানিস্তানকে চাপে রেখেও এশিয়া কাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে হেরে গেল বাংলাদেশ। মোসাদ্দেক হোসেনের ক্যারিয়ার সেরা ব্যাটিংয়ের পর বোলারদের আঁটসাঁট বোলিংয়ে অনেকটা সময় পর্যন্ত ভালোই লড়াই করল বাংলাদেশ। জাগাল জয়ের আশাও। কিন্তু বিস্ফোরক এক ইনিংসে সব পণ্ড করে দিলেন নাজিবউল−াহ জাদরান। যে উইকেটে বেশির ভাগ ব্যাটসম্যান ভুগলেন, সেখানে ছক্কা বৃষ্টিতে আফগানিস্তানকে এনে দিলেন দারুণ এক জয়। শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার এশিয়া কাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ৭ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। টানা দুই জয়ে প্রথম দল হিসেবে সুপার ফোরে খেলা নিশ্চিত করেছে আফগানিস্তান। একটু মন্থর ও বল নিচু হওয়া উইকেটে বাংলাদেশের ১২৭ রান মোহাম্মদ নবির দল পেরিয়ে গেছে ৯ বল বাকি থাকতে। ১৭ বলে ৬টি ছক্কা ও ১টি চারে অপরাজিত ৪৩ রানের ইনিংসে আফগানদের জয়ের নায়ক নাজিবউল−াহ। শেষ পাঁচ ওভারে নাটকীয় লড়াইয়ের সম্ভাবনা জাগলেও তিনিই মূলত তা হতে দেননি। তরুণ টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান ইব্রাহিম জাদরানের সঙ্গে মিলে ৩৩ বল স্থায়ী ৬৯ রানের জুটিতে ছিনিয়ে নেন জয়। জাদরানের শেষের ঝড়ে হয়তো একটু আড়ালে পড়ে গেছে মুজিব উর রহমান, রশিদ খানের দারুণ বোলিং। তিনটি করে উইকেট নিয়ে তারাই লক্ষ্যটা রেখেছিলেন নাগালে। নতুন আশায় এশিয়া কাপে বাংলাদেশের শুরুটা হলো হতাশায় মোড়ানো। ভালো করতে পারেননি বেশিরভাগ ব্যাটসম্যান। স্লটে বল পেলেও মারতে পারেননি বাউন্ডারি। কাজে লাগাতে পারেননি নির্বিষ শর্ট বল। মোসাদ্দেক হোসেন ছাড়া আর কারো ব্যাটে দেখা যায়নি লড়াইয়ের অভিপ্রায়। তিনি যেন খেলছিলেন ভিন্ন উইকেটে, ভিন্ন বোলিংয়ের বিপক্ষে। অন্যরা যেখানে ভুগছিলেন, সেখানে তার ব্যাট রান আসছিল অনায়াসে। ৩১ বলে এক ছক্কা ও চারটি চারে তিনি অপরাজিত থাকেন ৪৮ রানে। টি-টোয়েন্টিতে এটাই তার সর্বোচ্চ। আগের সেরা ছিল ৩৪। বোলিংয়েও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ধরে রাখা যায়নি নিয়ন্ত্রণ। ১৭তম ওভারে মুস্তাফিজুর রহমান দেন ১৭ রান। পরের ওভারে মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন দেন ২২। হাত থেকে ফস্কে যায় ম্যাচ। খেলা শুরুর ঘণ্টা দেড়েক আগেই আসতে থাকে দর্শক। বেশিরভাগই বাংলাদেশের। জার্সি পরে এসেছিলেন প্রায় সবাই। চিৎকার, উল−াস আর শে−াগানে তারা উৎসাহ জোগালেন দলকে। যেন মিরপুরেই হচ্ছিল খেলা। দিন শেষে তাদের ফিরতে হলো একরাশ হতাশা নিয়ে। বাংলাদেশের টপ অর্ডারকে নাড়িয়ে দেন মুজিব। মিডল অর্ডারে ছোবল দেন রশিদ। আফগানিস্তানের প্রায় সবাই ভালো বোলিং করলেও উইকেট নিতে পারেন কেবল এই দুই জনই। পিচ রিপোর্টের সময় রাসেল আর্নল্ড বলছিলেন, টস জিতলে ফিল্ডিং নেওয়ার কথা। তবে সাকিব আল হাসান নেন ব্যাটিং। উইকেট শুরুতে ভালো মনে হয়েছিল বাংলাদেশ অধিনায়কের কাছে। ভালো একটা স্কোর গড়তে চেয়েছিলেন তারা। বাংলাদেশের ব্যাটিং প্রমাণ করতে পারেনি সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা। উল্টো পাওয়ার প্লেতে ৩ ওভারের স্পেলে বাংলাদেশের টপ অর্ডার ধসিয়ে দেন মুজিব। একে একে বিদায় করেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ, এনামুল হক ও সাকিবকে। ফেরার ম্যাচে চমৎকার এক ডেলিভারিতে পুরোপুরি বিভ্রান্ত হয়ে বোল্ড হন নাঈম। অনেক ভোগান্তির পর মুজিবের শর্ট বলের লাইন মিস করে এলবিডব্লিউ হয়ে যান আরেক ওপেনার এনামুল। নিজের শততম টি-টোয়েন্টিতে সাকিব শুরু করেছিলেন দারুণ। কিন্তু বড় করতে পারেননি ইনিংস। অফ স্টাম্পের বলে ব্যাট চালিয়ে দিয়ে বোল্ড বাংলাদেশ অধিনায়ক। পাওয়ার প্লেতে ৩ উইকেটে বাংলাদেশ করে ২৮। চাপে পড়া দলকে পথ দেখাতে পারেননি মুশফিকুর রহিম ও আফিফ হোসেন। পাওয়ার প্লে শেষ হতেই আক্রমণে আসা রশিদ চমৎকার এক গুগলিতে এলবিডব্লিউ করে দেন মুশফিককে। টি-টোয়েন্টিতে ৬ ইনিংসে তাকে চতুর্থবারের মতো আউট করলেন রশিদ। দ্রুত রান করার চেষ্টায় থাকা আফিফও এলবিডব্লিউ হন গুগলিতে। তিনি অবশ্য আগেই বিভ্রান্ত হয়ে গিয়েছিলেন রশিদের ফ্লাইটে, পরে আর বলের লাইনে যেতে পারেননি। একাদশ ওভারে ৫৩ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশের অবস্থা হতে পারত আরও খারাপ। বেরিয়ে এসে মোহাম্মদ নবিকে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় ক্যাচের মতো দেন মোসাদ্দেক। লং অফ থেকে ডান দিকে সরে গিয়ে ক্যাচ ধরার চেষ্টায় আজমতউল−াহ উমরজাইয়ের পা স্পর্শ করে সীমানার কুশন। ২ রানে থাকা মোসাদ্দেক আউটের বদলে পেয়ে যান ছক্কা। তার এই জীবনটাই মোমেন্টাম এনে দেয় বাংলাদেশকে। এরপর মোসাদ্দেকের ব্যাটে বাড়ে রানের গতি। ফিল্ডিং পজিশন দেখে তিনি দারুণভাবে কাজে লাগান গ্যাপ। বিশেষ করে শর্ট থার্ড ম্যানের পাশ দিয়ে মারেন কয়েকটি বাউন্ডারি। এক-দুই নিয়ে খেলার পাশাপাশি বাউন্ডারি মেরে মোসাদ্দেক সরিয়ে দেন চাপ। অন্য প্রান্তে মাহমুদউল−াহ খেলেন মূলত সিঙ্গেল নিয়ে। বাংলাদেশ ৩১ বলে পায় ৩৬ রানের জুটি। মোসাদ্দেককে ভালোই সঙ্গ দেন মাহমুদউল−াহ। তবে তার কাছে দলের প্রত্যাশা তো আরও বেশি। রানের গতি বাড়ানোর মুহূর্তে আউট হয়ে যান তিনি। রশিদের সেটি ছিল শেষ ওভার। কয়েকটি সিঙ্গেল নিয়ে পরের তিন ওভারে চড়াও হওয়া যেত। তবে লেগ স্পিনারের ফাঁদে পা দিয়ে সুইপ করে ক্যাচ দেন মাহমুদউল−াহ। শেখ মেহেদি হাসানকে নিয়ে দলকে ১৩০ রানের কাছে নিয়ে যান মোসাদ্দেক। ১৭তম ওভারে প্রাথমবার ছয়ে যায় রান রেট। দুই জনে ২৪ বলে গড়েন ৩৮ রানের জুটি। ছোট পুঁজি নিয়ে বাংলাদেশের বোলিংয়ে শুরুটা হয় দারুণ। আফগানিস্তানের দুই বিস্ফোরক ব্যাটসম্যানের জন্য রানের পথ করে তোলে কঠিন। তৃতীয় ওভারে মিলতে পারতো উইকেটও। সাকিবের বলে রহমানউল−াহ গুরবাজের ক্যাচ ছাড়েন মাহমুদউল−াহ। জীবন কাজে লাগাতে পারেননি গুরবাজ। সাকিবের পরের ওভারে ফেরেন স্টাম্পড হয়ে। আরেক প্রান্তে জাজাই থাকলেও সহজে আসেনি রান। ক্রিজে অনেকটা সময় কাটিয়ে কেবলই হাত খোলার চেষ্টায় ছিলেন বাঁহাতি এই ওপেনার। চমৎকার এক ডেলিভারিতে তাকে এলবিডব্লিউ করে দেন মোসাদ্দেক। চারে নেমে তেমন কিছু করতে পারেননি মোহাম্মদ নবি। এরপর শুধুই নাজিবউল−াহ অধ্যায়। ক্রিজে গিয়েই তিনি চড়াও হন বোলারদের উপর, আরেক প্রান্তে তাকে সঙ্গ দিয়ে যান ইব্রাহিম জাদরান। শেষ ৭ ওভারে ৬৪ রানের সমীকরণ মেলান এই দুই ব্যাটসম্যান। মুস্তাফিজের করা ১৭তম ওভারে দুই ছক্কায় ১৭ রান নিয়ে সমীকরণ সহজ করে দেন নাজিবউল−াহ। সাইফের পরের ওভারে দুটি করে ছক্কা ও চারে নেন ২২ রান। পরে মোসাদ্দেকের মাথার উপর দিয়ে ছক্কা মেরে শেষ করে দেন ম্যাচ। এক প্রান্ত আগলে রেখে ৪২ বলে ৪১ রানের কার্যকর ইনিংস খেলেন ইব্রাহিম। দারুণ বোলিংয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন মুজিব। আগামী বৃহস্পতিবার দুবাইয়ে সুপার ফোরে যাওয়ার লড়াইয়ে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১২৭/৭ (নাঈম ৬, এনামুল ৫, সাকিব ১১, মুশফিক ১, আফিফ ১২, মাহমুদউল−াহ ২৫, মোসাদ্দেক ৪৮*, মেহেদি ১৪, সাইফ ০*; ফারুকি ৪-০-২৫-০, মুজিব ৪-০-১৬-৩, নাভিন ৪-০-৩১-০, রশিদ ৪-০-২২-৩, নবি ৩-০-২৩-০, ওমরজাই ১-০-৭-০)। আফগানিস্তান: ১৮.৩ ওভারে ১৩১/৩ (জাজাই ২৩, গুরবাজ ১১, ইব্রাহিম ৪২*, নবি ৮, নাজিবউল−াহ ৪৩*; সাকিব ৪-০-১৩-১, মুস্তাফিজ ৩-০-৩০-০, মেহেদি ৪-০-২৬-০, তাসকিন ৩-০-২২-০, মোসাদ্দেক ২.৩-০-১২-১, সাইফ ২-০-২৭-১)। ফল: আফগানিস্তান ৭ উইকেটে জয়ী। ম্যান অব দা ম্যাচ: মুজিব উর রহমান।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com