এফএনএস: করোনা মহামারির সংকট মোকাবিলা করে বাংলাদেশ দ্রæত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তারপরও বাংলাদেশের অর্থনীতি নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির চাপ, জ¦ালানি ঘাটতি, অর্থপ্রদানের ভারসাম্যে ঘাটতি, রাজস্ব ঘাটতি এসব কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি চাপের সম্মুখীন। মূল্যস্ফীতির চাপ ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ শতাংশ পয়েন্ট কমে ৫ দশমিক ২ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ওয়াশিংটনভিত্তিক বহুপাক্ষিক ঋণদাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক। ‘বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট আপডেট ট্রেড রিফর্ম: অ্যান আর্জেন্ট এজেন্ডা’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। গতকল মঙ্গলবার বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসে ‘স্ট্রং স্ট্রাক্চার রিফর্ম ক্যান হেল্প বাংলাদেশ সাসটেইন গ্রোথ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ বার্নার্ড হ্যাভেন। বাংলাদেশের রপ্তানির প্রায় ৮৩ শতাংশ আসে তৈরি পোশাকখাত থেকে। দেশের অর্থনীতি একটি একক খাতের ওপর দাঁড়িয়ে, এটাকেও ঝুঁকি হিসেবে দেখছে বিশ্বব্যাংক। এজন্য রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনয়ন এবং প্রতিযোগিতার উন্নতি করতে সুপারিশ করা হয় বাংলাদেশকে। সংস্থাটির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বাণিজ্য সংস্কারসহ কাঠামোগত সংস্কারের বাস্তবায়নকে জোর দিতে হবে। রপ্তানি বহুমুখীকরণ, বাংলাদেশকে বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলোকে মোকাবিলা করতে এবং প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সাহায্য করবে। বাংলাদেশ ও ভুটানের বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক বলেছেন বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধিতে পাশে থাকবে। তবে ব্যালেন্স অব পেমেন্টের ঘাটতির ফলে চলতি বছরের প্রথমার্ধে ৭ দশমিক ২ বিলিয়নে পৌঁছেছে, ২০২২ সালে যা ছিল মাত্র ৫ দশমিক ৩ শতাংশে। এটা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি করে। সংস্থাটি জানায়, ব্যাংকের তারল্য সংকট ও ক্রমবর্ধমান খেলাপি ঋণ বাড়ছে ফলে বাংলাদেশ নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। রিজার্ভের ক্ষয় হওয়ার কারণে বড় ধরনের নেতিবাচক ঝুঁকিও রয়েছে। হ্যাভেন জানান, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি মধ্যমেয়াদে ত্বরান্বিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, মুদ্রাস্ফীতির চাপ কমবে, অভ্যন্তরীণ অবস্থার উন্নতি হবে এবং সংস্কার বাস্তবায়নে গতি আসবে। তারপরও ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি, কঠোর আর্থিক অবস্থা, আমদানির ওপর বিধিনিষেধ ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি চলতি বছরে ৫ দশমিক ২ শতাংশ হবে। তিনি আরও বলেন, তবে পরবর্তী বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ২ শতাংশ। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন ও বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা বিশ্বের দেশগুলোকে প্রভাবিত করেছে। বাংলাদেশের মহামারি পরবর্তী সময়ে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে উন্নয়ন ব্যাহত হয়েছে। শক্তিশালী কাঠামোগত সংস্কার বাংলাদেশকে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সাহায্য করতে পারে বলেও জানান তিনি। বার্নার্ড হ্যাভেন বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানির প্রায় ৮৩ শতাংশ আসে তৈরি পোশাকখাত থেকে। দেশের অর্থনীতি একটি একক খাতের ওপর দাঁড়িয়ে, এটি ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি বলেন, রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনয়ন ও প্রতিযোগিতার উন্নতি বাংলাদেশকে ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের মর্যাদা অর্জনে সহায়তা করবে। এ কারণে বাংলাদেশের জন্য শুল্ক ও অশুল্ক বাধা উভয়ই কমানো গুরুত্বপূর্ণ হবে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ও ভুটানে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক, বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন, প্রতিষ্ঠানটির ঢাকা অফিসের জনসংযোগ কর্মকর্তা মেহরীন ই মাহবুব।