এফএনএস : দুঃস্থ ও অতিদরিদ্রদের জন্য ঈদ উপলক্ষে বরাদ্দ দেয়া ভিজিএফের চাল নিয়ে চলেছে নানা ছলচাতুরি। ভিজিএফের চাল নিতে অতিদরিদ্রদের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে ধনীদের নাম। উপকারভোগীর তালিকা তৈরি থেকে শুরু করে বিতরণ পর্যন্ত চলেছে হরেক রকম ফন্দিফিকির। উপকারভোগী নির্বাচনে মানা হয়নি ৭০ শতাংশ নারী অন্তর্ভুক্তির নিয়ম। আর অনেক স্থানেই ভিজিএফের চাল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান, মেম্বার ও গ্রাম পুলিশ এবং পৌর মেয়ররা তছরুপ করার অভিযোগ মিলেছে। শত শত ইউনিয়নের উপকারভোগীর তালিকায় পাওয়া গেছে ধনী পরিবারের সদস্যদের নাম। তাছাড়া বিতরণের শেষ দিনেও শতাধিক ইউনিয়নে ভিজিএফের চাল দেয়া হয়নি। ওসব অনিয়ম তদন্তে অনেক উপজেলায়ই কমিটি গঠন করা হয়েছে। এবার সরকার সারাদেশে এক লাখ ৩৩০ টন ভিজিএফ চাল বরাদ্দ দিয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত বৃহস্পতিবার ছিল ভিজিএফের চাল বিতরণের শেষ দিন। কিন্তু অনেক ইউনিয়ন পরিষদেই পরিপূর্ণভাবে অতিদরিদ্রদের মাঝে চাল বিতরণ করা হয়নি। এমনকি কোথাও কোথাও চাল বিতরণের আগেই গায়েব হয়ে গেছে ভিজিএফের বিপুল পরিমাণ চাল। ওসব ঘটনায় গ্রেফতারের ঘটনাও ঘটেছে। ঈদ উপলক্ষে ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় ৬৪ জেলার ৪৯২টি উপজেলার জন্য ৮৭ লাখ ৭৯ হাজার ২০৩টি ভিজিএফ কার্ডের বিপরীতে ৮৭ হাজার ৭৯২ টন এবং ৩২৯টি পৌরসভার জন্য ১২ লাখ ৫৩ হাজার ৮৫১ কার্ডের বিপরীতে ১২ হাজার ৫৩৮ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, করোনার আগে দেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৪০ লাখ। করোনার কারণে আরো ৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে। তাতে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়ে ৬ কোটি ৮০ লাখে ঠেকেছে। গরিবের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় কোথাও কোথাও ভিজিএফের ১০ কেজি করে চালের বরাদ্দ কম আসায় স্থানীয় চেয়ারম্যানরা প্রতিবাদ জানিয়েছে। ভিজিএফ বরাদ্দের ক্ষেত্রে দুস্থ, অতিদরিদ্র ব্যক্তি বা পরিবারকে ওই সহায়তা দিতে হয়। তবে সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত দুস্থ ও অতিদরিদ্র পরিবারকে অগ্রাধিকার দিতে বলা হয়েছে। তাছাড়া উপকারভোগী নির্বাচনের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৭০ শতাংশ নারীর অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার কথা বলা হয়। আর ভিজিএফ চাল ২৮ এপ্রিলের মধ্যে বিতরণ নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু বেশিরভাগ ইউপি ও পৌরসভায় এখনো চাল বিতরণের জন্য উপকারভোগীর তালিকাই চ‚ড়ান্ত করা হয়নি। ভিজিএফ কমিটির এ-সংক্রান্ত বৈঠকও হয়নি। অথচ ইউনিয়ন বা পৌরসভার ভিজিএফ কমিটির প্রকাশ্য সভায় বর্ণিত তালিকা প্রণীত ও প্রত্যায়িত করার কথা বলা আছে। সূত্র আরো জানায়, ঈদ উপলক্ষে ইতোমধ্যে সরকারি সব অফিস গতকাল বন্ধ হয়ে গেছে। উপজেলা পর্যায়ের অনেক দপ্তরের কর্মকর্তারা ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে চলে গেছে। ফলে তদারিক জন্য নিয়োজিত ট্যাগ কর্মকর্তার সঙ্কট তৈরি হয়েছে। অথচ ভিজিএফ বরাদ্দের নির্দেশনায় ট্যাগ কর্মকর্তা উপস্থিতিতে বিতরণ নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতি ভিজিএফ বিতরণে অনিয়ম আরো বাড়বে। কারণ জনপ্রতিনিধিরাই ভিজিএফের চাল গায়েব করছে। আর উপকারভোগীর তালিকায় যুক্ত হয়েছে ধনীরা। এদিকে এ বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আতিকুল হক জানান, ভিজিএফের চাল বিতরণে প্রতি বছর ঈদে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। তারপর সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। এবারও কারো বিরুদ্ধে অনিয়ম পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। দেশের প্রায় সাড়ে ৫ হাজার ইউপিতে লক্ষাধিক লোকের মাঝে চাল বিতরণ করা হয়েছে। তার মধ্যে কিছু অনিয়ম হতেই পারে। সেজন্য মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা তৎপর আছেন।