এফএনএস: রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকার নিউ সুপার মার্কেট (দক্ষিণ) ভবনের তৃতীয় তলা থেকে ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও ব্যবসায়ীরা। প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা পর গতকাল শনিবার সকাল ৯টা ১০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণের আনে ফায়ার সার্ভিস। সকাল সোয়া ১০টার দিকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, সকাল ৯টা ১০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। আগুন এখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে। এখন ডাম্পিংয়ের কাজ চলছে। সংবাদ ব্রিফিংয়ে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক বলেন, ‘এখানে যেহেতু সব দাহ্য পদার্থ তাই আগুন পুরোপুরি নির্বাপণে আমাদের আরো সময় লাগবে। এখন আগুন পুরোপুরি নির্বাপণ ও ডাম্পিংয়ের কাজ চলছে। সে কারণে ধোঁয়ার সৃষ্টি হচ্ছে। বঙ্গবাজারের মতোই এখানের আগুনের অবস্থা। যে কারণে পুরোপুরি নির্বাপণে সময় লাগবে।’ ফায়ার সার্ভিসের ২৮টি ইউনিট এখন ঘটনাস্থলে কাজ করছে উল্লেখ করে ফায়ার সার্ভিসের ডিজি বলেন, ‘আগুন পুরোপুরি নির্বাপণ না হওয়া পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কাজ করবে। আগুন নির্বাপণে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি নৌ, সেনা, বিমান বাহিনী ও বিজিবির সদস্যরাও কাজ করে। রমনা ডিএমপির রমনা বিভাগের ধানমন্ডি জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) আবদুল আল মাসুম জানিয়েছেন, নিউ সুপার মার্কেটের সিটি করপোরেশন নিবন্ধিত দোকানের সংখ্যা ১১০০টি। কিন্তু বাস্তবে এর চেয়েও বেশি দোকান রয়েছে মার্কেটটিতে। আগুনে হাজারেরও বেশি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত গেছে। তিনি জানান, মার্কেটের তিন তলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এখন পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা নিচতলা ও দুই তলা থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মালামাল সরিয়ে নিচ্ছে। নাফিজা ওড়না হাউজের মালিক সাইফুল ইসলাম জনি জানান, নিউ সুপার মার্কেট দক্ষিণ ভবনের দুই তলায় চার নাম্বার গলির ৫০৮ নম্বর দোকানটি তার। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কিছু মালামাল উদ্ধার করতে পারলেও ৮-১০ লাখ টাকার মালামাল আগুনে পুড়ে গেছে। আগুন নেভাতে গিয়ে আহত ৩২ : রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিকাÐে ধোঁয়াসহ বিভিন্নভাবে অসুস্থ ও আহত হয়ে ৩২ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা একজন, ফায়ারফাইটার ১৩ জন, ভলান্টিয়ার দুই জন, আনসার সদস্য দুই জন এবং বিমান বাহিনীর একজন সার্জেন্টসহ মোট ১৯ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। যাদের নাম পাওয়া গেছে তাদের মধ্যে অসুস্থ ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা হলেন- রাসেল (২২), শান্ত (২৪), তৌফিক (২৩), রাজন (২৫), মিলন (২৬), সজীব (২৫), আরিফুল (২৬), কামরুজ্জামান (২৫) ও শরিফুল (২৪), রাজিব (৩০), ডিপজল (২৪), রায়হান (২২)। বিমান বাহিনীর সদস্য সার্জেন্ট আরাফাত (৩২), আনসার ব্যাটালিয়ান সদস্য সবুজ (২০), আলমগীর (৩৫), শাকিল (২৫)। বিভিন্ন দোকানের কর্মী- রিফাত (২৩), বায়জিদ (২৫), হাসান (২০), রিমন (২৮), কামাল হোসেন (৩৩), ফিরোজ আলম (৩০), জিসান (১৮), ইয়াসিন (২৪), জীবন (২৫), স্বপন (২৩)। একটি দোকানের মালিক জীবন (৩০)। এই তথ্য নিশ্চিত করেন ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া। অনির্দিষ্টকালের জন্য নিউমার্কেট বন্ধ ঘোষণা : পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত রাজধানীর নিউমার্কেট বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি আমিনুল ইসলাম। এছাড়াও আগুনের কারণে গতকাল শনিবার সকাল থেকে আশেপাশের চাঁদনি চক ও গাউছিয়া মার্কেটও বন্ধ রয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ফুটপাতের শতাধিক দোকানি : আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত নিউ সুপার মার্কেটের লাগোয়া ব্রিজের একপাশে বসে হা হুতাশ করছেন রাব্বি নামের এক যুবক। রাব্বি, পাশেই কলোনিতে থাকেন। নিউমার্কেটে ফুটপাতে দোকান ছিল রাব্বির। নিউ সুপার মার্কেটের তিন তলায় গোডাউন ছিল তার। ফুটের দোকান বন্ধ করে রাত তিনটায় গোডাউনে সব রেখে গেছেন। আগুনের খবরে ভোর ৫টায় এসে আর কিছু উদ্ধার করতে পারেননি। তিনি বলেন, আমাদের ১৫ থেকে ২০ জন ফুটের দোকানির ৩০ লাখের মতো মাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। রাব্বিকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছেন আরও ১০ থেকে ১২ জন। তাদের কেউ একটু পর পর ভেতরে ঢুকছেন, বেরিয়েও আসছেন হতাশ হয়ে। তাদের মধ্যে একজনের নাম সাকিব। আগুনের ভেতর থেকে মাথায় পানি ঢালতে ঢালতে বেরিয়ে রাকিব বলেন, ‘সব শেষ। পাই নাই কিছু।’ নিজের মালের সন্ধানে তাদের আরেক সহকর্মী সানি। মালামাল খুঁজতে সানিও ভেতরে যায়। মো. মনজিল নামে আরও একজন ফিরে এসেছেন, বলেন ‘সব পুড়ে গেছে, পাইনি কিছু।’ ক্ষতিগ্রস্ত ফুটপাতের দোকানিরা বলছেন, ‘সবাই তো জানে মার্কেটে আগুন লাগছে। মার্কেটের দোকানিদের সহযোগিতা করবে। আমরা যারা ফুটপাতের দোকানি, মার্কেটে গোডাউন ছিল, আমাদেরও তো সব শেষ হয়ে গেছে। আমাদের তো কেউ দেখবো না। আমাদের তো কেউ ক্ষতিপূরণ দিবো না।’ রাব্বি, সাকিব, সানি ও মনজিলের মত শতাধিক লোক অগ্নিকাÐে ক্ষতিগ্রস্ত নিউ সুপার মার্কেটের সামনের ব্রিজের ফুটপাতে দোকান করতেন। তারা দিনশেষে সব মাল রেখে যেতেন নিউ সুপার মার্কেটের তিন তলায় গোডাউনে। মার্কেটে আগুন লাগায় তাদেরই ক্ষতি হয়েছে বেশি। কারণ আগুনে তিনতলায় মালামাল পুড়েছে বেশি। অন্যান্য ফ্লোরে আগুন তেমন ছড়ায়নি। আশপাশের এলাকায় যানজট : রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেটে আগুনের ঘটনায় নিউমার্টেক-আজিমপুর রুটের সব ধরণের যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে বিকল্প পথ ধরে চলে এ রুটের গাড়ি। বিকল্প পথ হিসেবে আজিমপুর রুটের বাস, মিনিবাস, লেগুনা, রিক্সাসহ সব ধরণের যান চলছে কাটাবন ও পলাশী রুটে। ফলে এই পথে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজট। মতিঝিল-মোহাম্মদপুর রুটের গাড়ির যাত্রী শুভ দাস জানান, তিনি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। মোহাম্মদপুরে অফিস। সকাল ৯টায় রওয়ানা করে এখনও সায়েন্স ল্যাব ক্রস করতে পারেননি। এক ঘন্টা ধরে জ্যামে বসে রয়েছেন। অপর যাত্রী হাসিব আহমেদ জানান, গাড়ির চেয়েও উৎসুক জনতার ভিড়ে যান চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এদিকে মিরপুর, মোহাম্মদপুর থেকে আজিমপুর, সদরঘাট এলাকায় চলাচল করা গাড়িগুলো সায়েন্সল্যাব থেকে কাঁটাবন হয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। ফলে পুরো এলাকা জুড়েই যানজট সৃষ্টি হয়েছে। ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। গন্তব্যে পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে।