ষোল দলের সরাসরি নৌকা চায় ছয়টি ॥ জোটবদ্ধ নির্বাচনে আগ্রহ ৩টি ॥ অনিবন্ধিত দলও নিবন্ধিত দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ
জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে ॥ নিজ প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে দলগুলোর মধ্যে বাড়ছে ভীতি। আওয়ামী লীগসহ ১৬টি দল আবেদন করলেও নৌকার প্রতীক চায় ছয়টি দল। তিনটি দল জোটবদ্ধ থেকে নির্বাচনের পক্ষে। সেখানে প্রার্থীর পছন্দনুযায়ী জোটের প্রতীক নৌকা নিতেও নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) লিখিত আবেদনে আগ্রহ দেখিয়েছে। কারণ শরীক দল হলেও নৌকার প্রার্থী থাকলেও জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকায় সবাই জনপ্রীয় প্রতীকের দিকেই বেশি ঝোঁক। সর্বশেষ ১৬টি আগ্রহ প্রকাশ করায় নির্বাচন কমিশন মনে করছে নিবন্ধিত অন্তত এক-তৃতীয়াংশ রাজনৈতিক দল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। এসব দল নির্বাচনে অংশ নিতে জোটগত অবস্থান বা দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম নির্বাচন কমিশনকে জানিয়ে চিঠি দিয়েছে। এসবের বাইরে আরও কিছু রাজনৈতিক দল শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেবে বলেও বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছে নির্বাচন কমিশন। খবর ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্রের। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিবন্ধিত ৪৪ রাজনৈতিক দলের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ায় আগ্রহ দেখিয়ে আবেদন করেছে ১৬টি রাজনৈতিক দল। এর বাইরে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে নিবন্ধিত নন এমন তিনটি দলসহ ৫৮ দলীয় জোট ইচ্ছা পোষণ করেছে নির্বাচনে অংশ নিতে। এসব দলগুলো নিবন্ধিত দলগুলোর সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে প্রার্থী দিতে চায়। তবে, নিবন্ধিত ১৬টি দলের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বেশির ভাগ দল নিজ দলীয় প্রতীকে অংশ নিতে আগ্রহী নন। জোটবদ্ধ হতে চায় বড় ও জনপ্রীয় দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে। সরাসরি নৌকা প্রতীক সংরক্ষিত রাখার প্রত্যয় জানিয়ে কোনো কোনো দল ইসিতে অবস্থান পরিস্কার করেছে। কেউ সরাসরি নৌকা প্রতীক না চাইলেও জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করতে বেশি স্বাচ্ছদ্যবোধ করছে। এমনকি জাতীয় পার্টি ‘লাঙ্গল’ প্রতীক কিংবা প্রার্থীর ইচ্ছা অনুসারে মহাজোটের জোট বদ্ধ হওয়ার প্রতীকে নির্বাচন করতে ইচ্ছা পোষণ করেছে। সেখানে জোট সংক্রান্ত ঘরে প্রার্থীরা দলীয় প্রতীক লাঙ্গল কিংবা প্রার্থীর ইচ্ছা অনুসারে জোটভুক্ত হয়ে নির্বাচন করতে পারবেন। ব্ল্যাকেটে বলা হয়েছে, বেগম রৌশন এরশাদ এমপি, প্রধান পৃষ্টপোষক -জাতীয় পার্টি। বিষয়বস্তুর ঘরে বলা হয়েছে, – জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন মনোনীত প্রার্থী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি হিসেবে দলের প্রার্থী মনোনয়ন ও প্রতীক বরাদ্দ করবেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি। জাতীয় পার্টি-জেটি ‘বাই সাইকেল’ ১৪ দলীয় জোট। দলের মনোনীত প্রার্থীরা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবেন। বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এম এল) চাকা দলগত জোটগত নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহ দেখালেও নৌকা প্রতীক সংরক্ষিত রাখার জন্য ইসির প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে দলটি ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি। একই ভাবে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ‘হাতুড়ী’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অনাগ্রহী। বলছে, তার দলটি ১৪দলীয় জোটভুক্ত। তাদের জন্য নৌকা প্রতীক সংরক্ষিত রাখার অনুরোধ জানিয়েছে কমিশন। আর বিকল্পধারা বাংলাদেশ ‘কুলা’ মহাজোটের শরীক হিসেবে কুলা পরবর্তী জোটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জোটগত প্রতীকে নির্বাচন করতে আগ্রহী দেখিয়েছে। জেপির মতো জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, মশালের পরিবর্তে নৌকা, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন ফুলের মালা প্রতীকের বদলে নৌকা এবং ন্যাশনাল পিপল্স পার্টি নিজ দলীয় প্রতীক আম এর বদলে নৌকা নিয়ে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে তাদের মনোনীত প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে ইচ্ছুক বলে ইসিকে জানিয়েছে। আর আলোচিত দল তৃণমূল বিএনপির দলীয় প্রতীক সোনালী আশ। এই দলটি প্রগতিশীল ইসলামী জোট স্ব স্ব দলভুক্ত জোটের প্রতীকে নির্বাচন করার ইচ্ছা পোষণ করেছে। বাংলাদেশ সুপ্রীম পার্টি (বিএসপি) একতারা নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলেও পরবর্তী কোনো জোট হলে ইসিকে অবহিত করবে মর্মে আগাম বার্তা দিয়ে রেখেছে। আর বাংলাদেশ কংগ্রেস এর দলীয় প্রতীক ডাব। এই দলটির সঙ্গে অনিবন্ধিত ৯টি দলের সমন্বয়ে সম্মিলিত জোটভুক্ত হয়ে নির্বাচন করার ইচ্ছা পোষণ করেছে। এছাড়া গণফ্রন্ট দলীয় প্রতীক মাছ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি বাংলাদেশ ন্যাপ এর গাভী প্রতীক, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ এর দলীয় প্রতীক টেলিভিশন এবং ন্যাশনাল পিপল্স পার্টির দলীয় প্রতীক আম নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক। এছাড়া অনিবন্ধিত ৪টি দলও নিবন্ধিত দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন করতে আগ্রহী। এমন একটি দল ডেমোক্রেটিক পার্টি। এই দলটি তৃণমূল বিএনপির সঙ্গে জোট করে নির্বাচনে প্রার্থী দিতে চায়। একই ভাবে সম্মিলিত জাতীয় জোট ৫৮ দলীয়। এই জোটটি জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোট করে নির্বাচন করতে তৎপর। আবার ৭ দলীয় জোটটি চায় বাংলাদেশ জনতা পার্টির সঙ্গে জোট করে নির্বাচন করতে। আর গণমুক্তি জোটটি চায় বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোট (মুক্তিজোট) এর সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করতে। প্রসঙ্গত, আগামী ৩০ নভেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় শেষ হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে আগ্রহী দলের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন সংশি¬ষ্টরা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটবদ্ধ হয়ে অংশ নিতে হলে তফশিল ঘোষণার ৩ দিনের মধ্যে তা নির্বাচন কমিশনে জানানোর নিয়ম রয়েছে। নির্ধারিত সময়ে তথ্য জানাতে ১৬ নভেম্বর আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলকে চিঠি দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। একইদিন দলীয় প্রার্থীকে কার স্বাক্ষরে মনোনয়ন দেওয়া হবে তা ইসিকে অবহিত করতে বলা হয়। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ১৫টি নিবন্ধিত দল তাদের অবস্থান ইসিকে জানিয়েছে। তবে বিএনপিসহ বেশিরভাগ দল ইসির ওই চিঠির জবাব দেয়নি। বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪৪টি। তবে বিএনপি সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য সহায়তা চাইলে তা করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। সম্প্রতি নিজ কার্যালয়ে কয়েকজন সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, বিএনপি যদি বলে আমরা নির্বাচন করব, আমাদের সহায়তা করেন তাহলে অবশ্যই করব। তবে রাজনৈতিক দলকে কন্ট্রোল করার দায়িত্ব আমাদের নয়। যারা নির্বাচনে অংশ নেবে তাদের জন্য যতরকম চেষ্টা আছে তা করা হবে। যারা নির্বাচনে আসবে না তাদের ব্যাপারে কিছু করার নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রশাসন বা পুলিশের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে এবং তা প্রমাণিত হলে ইসি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। ইসির কর্মকর্তারা জানান, যেসব রাজনৈতিক দল ইসিতে চিঠি দিয়েছে, সেগুলো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে তা স্পষ্ট হলো। যদিও যেসব দল জোট ছাড়া এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে তাদের ইসিতে তথ্য জানানোর বাধ্যবাধকতা নেই। তবে নির্বাচন কমিশন মনে করছে, শেষ পর্যন্ত বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল এ নির্বাচনে অংশ নেবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করেন। ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ৩০ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই ১-৪ ডিসেম্বর এবং প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর। আর ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি।