এফএনএস: ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে একটি ভবনে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের অফিস পুড়ে যাওয়ার পর সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে খুলেছে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়। ক্ষতিগ্রস্ত দপ্তরগুলো বাদে বাকি সব মন্ত্রণালয় এবং বিভাগে গতকাল রোববার সকাল থেকে নিয়ম মাফিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে সচিবালয়ে প্রবেশের ক্ষেত্রে আরোপ করা হয় বিধিনিষেধ। অতিরিক্ত সচিব থেকে নিচের দিকের কর্মকর্তারা প্রবেশ পথে গাড়ি ছেড়ে দিয়ে পরিচয় পত্র দেখিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। জরুরি দর্শনার্থীদের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পৃথক বুথ চালু করা হয়। আর গণমাধ্যম কর্মীরা আপাতত সচিবালয়ের গেটের বাইরে অবস্থান করেই দিনের দায়িত্ব পালন করে। পাঁচ নম্বর গেইটে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, সচিবালয়ের কর্মকর্তা—কর্মচারীদের মধ্যে যাদের স্মার্টকার্ড আছে, কেবল তারা পাঁচ নম্বর গেইট দিয়ে প্রবেশ করতে পারছেন। দর্শনার্থী বা সাংবাদিকদের এই পথে প্রবেশ করার অনুমতি নেই। বিদ্যুৎ ভবনের পাশে চার নম্বর গেইটটি বন্ধ করে রাখা হয়েছে। গাড়ি নিয়ে আসা দর্শনার্থীরা আগে তিন নম্বর গেইট দিয়ে প্রবেশ করত। এদিন গেইটে গাড়ি ছেড়ে দিয়ে পায়ে হেঁটেই ভেতরে প্রবেশ করতে দেখা গেল কর্মকর্তাদের। দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা মঈনুল বলেন, “কেবল সচিব ও উপদেষ্টা মহোদয় এবং অগ্নিকাণ্ডের তদন্তে নিয়োজিত কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কোনো কর্মকর্তাকে গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। তারা গাড়ি ছেড়ে দিয়ে পাস দেখিয়ে প্রবেশ করছেন পায়ে হেঁটে।” কর্মকর্তাদের ছেড়ে দেওয়া গাড়ির কারণে সচিবালয়ের চারপাশে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা উত্তরা থেকে নিজে গাড়ি চালিয়ে এসেছেন। অন্যদিনের মত গাড়ি ভেতরে ঢোকাতে না পেরে তিনি পড়েন বিপাকে। ওই কর্মকর্তা বলেন, “এখন আশপাশে রেল ভবনে বা অন্য কোন ভবনে গাড়ি পার্ক করার চেষ্টা করছি। দেখি কি করা যায়।” ভূমি মন্ত্রণালয়ের একটি টেন্ডার দেওয়ার তারিখ থাকায় এদিন বাইরে বুথ স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে প্রতিযোগীরা দরপ্রস্তাব জমা দিচ্ছেন। ভূমি মন্ত্রণালয়ের অফিস সহায়ক রমণ দাস বলেন, “আমরা আজ (রোববার) এখানেই টেন্ডার জমা নিচ্ছি। আগে এ কাজটা ভেতরেই হত। ” নিয়মিত দায়িত্ব পালন করতে সচিবালয়ে এসে বিপাকে পড়েছেন সাংবাদিকরাও। সকাল থেকে গেইটের বাইরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে তাদের। সচিবালয়ের দায়িত্বগত সাংবাদিকদের সংগঠন বিএসআরএফ এর সভাপতি ফসিহ উদ্দিন মাহতাব বলেন, “পেশাদার ও নিয়মিত সাংবাদিকরা যাতে ভেতরে প্রবেশ করে সংবাদ সংগ্রহ করতে পারেন, সেজন্য আমরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। আশা করছি তারা অল্প সময়ের মধ্যে আমাদেরকে একটা সিদ্ধান্ত জানাবেন।” প্রসঙ্গত, বুধবার রাত ২টার দিকে সচিবালয়ের সাত নম্বর ভবনে আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট সেখানে যায়। প্রায় দশ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হয়। আগুনে সাত নম্বর ভবনের ৬, ৭, ৮, ৯ এই চারটি তলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে অষ্টম ও নবম তলায় ক্ষতি হয়েছে বেশি, সেখানকার অধিকাংশ নথি পুড়ে যায়। অগ্নিকাণ্ডের কারণে বৃহস্পতিবার দিনের বেশিরভাগ সময় সচিবালয়ের অধিকাংশ ভবনে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে। কর্মকর্তা—কর্মচারীরা সচিবালয়ে গেলেও দপ্তরে ঢুকতে না পেরে বেরিয়ে আসেন। সব মিলিয়ে সচিবালয়ের নিয়মিত কর্মকাণ্ড কার্যত বন্ধ ছিল। দুদিন সাপ্তাহিক ছুটির মধ্যে ৭ নম্বর ভবন ছাড়া বাকি ভবনগুলোর বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হওয়ায় সেগুলোতে থাকা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে গতকাল রোববার থেকে স্বাভাবিক কাজকর্ম চালানোর মত পরিস্থিতি তৈরি হয়। আর ৭ নম্বর ভবনে যেসব দপ্তর ছিল, সেগুলোর কাজ সচিবালয়ের বাইরে বিভিন্ন সরকারি ভবনে চালিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। গত শনিবার জানানো হয়, আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগর ভবনে; সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় রেলভবনে; যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণায়ল ক্রীড়া ভবনে।; শ্রম মন্ত্রণালয় শ্রম ভবনে; ডাক ও টেলিযোগাযোগ উপদেষ্টা তথ্য মন্ত্রণালয়ে এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আগারগাঁওয়ের ডাক ভবনে দাপ্তরিক কাজ করবেন। এর আগে শুক্রবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, সচিবালয়ের ‘নিরাপত্তা বৃদ্ধির স্বার্থে’ সব ধরনের অস্থায়ী প্রবেশ পাস বাতিল করা হয়েছে। সাংবাদিকদের প্রবেশের জন্য ইস্যু করা অ্যাক্রেডিটেশন কার্ডও পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাতিল করা হয়েছে। এ নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে সমালোচনার মধ্যে গত শনিবার প্রধান উপদেষ্টা দপ্তর থেকে বলা হয়, শিগগির নতুন আবেদন নিয়ে সাংবাদিকদের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড দেওয়া হবে। আর রাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত শনিবার জানায়, অস্থায়ী প্রবেশ পাসের আবেদন গ্রহণ করতে সচিবালয়ের উল্টো দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ক্রাইম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারে একটি সেল করা হয়েছে।