এফএনএস আন্তর্জাতিক ডেস্ক: কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার রেশ না কাটতেই উপমহাদেশে ফের ছড়িয়ে পড়ছে যুদ্ধের আতঙ্ক। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার চলমান উত্তেজনা নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার আজ বুধবার দেশজুড়ে ব্যাপক নিরাপত্তা মহড়ার নির্দেশ দিয়েছে। এর মাধ্যমে ১৯৭১ সালের পর এই প্রথমবারের মতো ভারতে এমন পরিসরে যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি গ্রহণ করা হলো।
সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার পর থেকেই ভারতের রাজনৈতিক ও সামরিক মহলে ক্রমেই চরমপন্থী প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। ভারত এই হামলার জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করলেও ইসলামাবাদ বরাবরের মতো অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং হামলার পেছনে নিজেদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেছে। বরং দিল্লির কড়া প্রতিক্রিয়ার নেপথ্যে কাশ্মীর পরিস্থিতিতে নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করার অপচেষ্টা রয়েছে বলে পাল্টা অভিযোগ তুলেছে পাকিস্তান।
এই প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এক বিবৃতিতে জানান, ভারতের যেকোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। তিনি বলেন, “জাতি ঐক্যবদ্ধ, এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আমরা বিন্দুমাত্র পিছপা হব না।”
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সম্ভাব্য যুদ্ধ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে প্রতিটি রাজ্যে। এতে বলা হয়, ২৪৪টি জেলায় একযোগে মহড়া পরিচালিত হবে। সাইরেন বাজিয়ে বিমান হামলার সতর্কতা, ব্ল্যাকআউট পরিস্থিতি, জরুরি অবস্থায় বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া, এবং শিক্ষার্থীদের আত্মরক্ষামূলক প্রশিক্ষণÑসবই এই মহড়ার অন্তভুর্ক্ত।
মহড়ার অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে পাঞ্জাবের ফিরোজাবাদে গতকাল মঙ্গলবার রাতে আধ—ঘণ্টার ব্ল্যাকআউট মহড়া চালানো হয়েছে। সেখানে স্থানীয় বিদ্যুৎ সংযোগ সাময়িকভাবে বিচ্ছিন্ন করা হয় সেনা কতৃর্পক্ষের অনুরোধে, যাতে বাস্তব পরিস্থিতিতে কৌশলগত প্রস্তুতির সক্ষমতা যাচাই করা যায়।
এছাড়া স্কুল—কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদেরও যুদ্ধকালীন নিরাপত্তা ও আত্মরক্ষামূলক করণীয় সম্পর্কে অবহিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা জোরদার, মানুষ সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা, উদ্ধার কার্যক্রমসহ সিভিল ডিফেন্স বাহিনীর সক্রিয় প্রস্তুতির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ উত্থাপন করেছেন দেশটির স্থায়ী প্রতিনিধি আসিম ইফতিখার। তার দাবি, কাশ্মীর এখনো একটি অমীমাংসিত ইস্যু, এবং ভারতের ‘একতরফা সিদ্ধান্ত’ ও ‘আক্রমণাত্মক বক্তব্য’ দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলছে। একইসঙ্গে, ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ঙওঈ) এক বিবৃতিতে বলেছে, ভারতের ভিত্তিহীন অভিযোগ ও সামরিক তৎপরতা গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও বিপজ্জনক করে তুলছে।
কাশ্মীর হামলার ঘটনার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং একাধিক কড়া বক্তব্য দিয়েছেন। মোদী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “যারা হামলার ষড়যন্ত্র করেছে, তাদের কল্পনাতীত শাস্তি পেতে হবে।” তিনি ইতোমধ্যে তিন বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে পরপর বৈঠক করেছেন এবং সশস্ত্র বাহিনীকে ‘প্রয়োজনে পাল্টা আক্রমণের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা’ দিয়েছেন।