জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে \ জাতীয় সংসদসহ সব নির্বাচনে সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহ নিরবিচ্ছিন্ন রাখতে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনের উদারনীতি অবস্থান থেকে হঠাৎ পিঠটান দেয়া নিয়ে বিভিন্নমহলে সমালোচনার ঝড় বইছে। আগামী ২৭ ডিসেম্বর রংপুর সিটি নির্বাচনের ভোট। এ নির্বাচনের আগে গণমাধ্যম কর্মীদের উপরে ভোট পর্যবেক্ষণে আকর্ষিক বিধি-নিষেধ জারি করায় তীব্র সমালোচনার মুখে রয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নানা সমালোচনার পরও নীতি বদলনায় সাংবিধানিক সংস্থাটির। শুধু জারি পরিপত্রে কিছুটা সংশোধনী এনে দায় সেরেছে তারা। ইসি সচিবালয়ের পরিচালক (জনসংযোগ) ও যুগ্ম সচিব আসাদুজ্জামান এ প্রসঙ্গে বলেন, আগের পরিপত্রে টাইপিং মিসটেক (ছাপার ভুল) ছিল। ভোটকেন্দ্র নয়, ভোট কক্ষে সাংবাদিকেরা ১০ মিনিটের বেশি থাকতে পারবেন না। তবে তাঁরা ভোটকেন্দ্রে অবস্থান করতে পারবেন। নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভোটের তথ্য সংগ্রহে সাংবাদিকদের উপরে বিধি-নিষেধ জারি ইসির আগের সিদ্ধান্তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং দ্বিমুখীচারিতার শামিল। বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ইসির গণমাধ্যমের সহযোগিতা চাওয়া প্রয়োজন, তার বদলে বিধিনিষেধ দিচ্ছে; যা কাম্য নয়। বর্তমান কমিশনের এমন হঠকারি সিদ্ধান্তে বিব্রত সাবেক নির্বাচন কমিশনাররাও। বলছেন, এই সময়ে সাংবাদিকদের উপরে ভোটের তথ্য সংগ্রহে বিধি-নিষেধ জারি; ইসির প্রতি সাধারণ মানুষের সংশয় সন্দেহ বাড়াবে। সিদ্ধান্ত বিবেচনা করা উচিত বলেও মত দেন সাবেকরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য ১৩টি নির্দেশনা দিয়ে ১৮ ডিসেম্বর পরিপত্র জারি করেছিল ইসি। পরিপত্রে বলা হয়, ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের পর প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে অবহিত করে তথ্য সংগ্রহ, ছবি তোলা ও ভিডিও ধারণ করতে পারবেন সাংবাদিকেরা। তবে দ্বিতীয় নির্দেশনায় উলেখ করা ছিল, ভোটকেন্দ্রে ১০ মিনিটের বেশি অবস্থান করা যাবে না। পরিপত্রটি নিয়ে শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। এ নিয়ে শুরু হয় সমালোচনা। সমালোচনার মুখে শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) ইসি সচিবালয় আগের নির্দেশনায় সংশোধনী আনে। সংশোধনীতে বলা হয়, একসঙ্গে একাধিক গণমাধ্যমের সাংবাদিক একই ভোট কক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন না। সাংবাদিকেরা ১০ মিনিটের বেশি ভোট কক্ষে অবস্থান করতে পারবেন না। আগের নিদের্শনাটি ছাপার ভুল বলে আখ্যা দিয়েছে ইসি। সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হাফিজ এ বিষয়ে বলেন, ভালো নির্বাচনের জন্য গণমাধ্যমের স্বাধীনতা গুরুত্বপূর্ণ। ভোটকেন্দ্র ঘূরে ঘূরে যখন নির্বাচন বিষয়ে ইতিবাচক খবর সাংবাদিকরা প্রকাশ করবে; যার মধ্যে দিয়ে ইসির প্রতি মানুষের আস্থা তৈরি হবে। সংবাদ সংগ্রহে তাদেরকে প্রতিপক্ষ ভাবা হলে ইসির জন্য তা হীতে বিপরীত হতে পারে। কারণ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রংপুর সিটিসহ বড় পরিসরের নির্বাচনগুলো স্পর্শকাতর ও আস্থার্জনের অন্যতম নিয়ামক। সেখানে ব্যর্থ হলে সংসদ নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে সংশয় ও সন্দেহ কমবে না; বরং বাড়বেব। তাই ভোটের দিন তথ্য সংগ্রহে সাংবাদিকদের অবাধ সুযোগ রাখাই শ্রেয়। তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ বজায় রেখেই। স্থানীয় সরকার বিশেজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, কমিশন থেকে বলা হয়েছে সাংবাদিকরা জাতির বিবেক। সংবাদ সংগ্রহে বাধা দিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে ইসি- এমন ঘোষণাও শুনেছি। এখন রাসিক সিটিতে সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহে বিধি-নিষেধ আরোপ ইসির দ্বিমুখীচারিতার শামিল বলে আমি মনে করি। প্রাপ্ত তথ্যমতে, রবিবার (১১ সেপ্টেম্বর) নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ভোট চলাকালীন সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে সাংবাদিকরা যদি বাধা বা নির্যাতনের শিকার হন তাহলে তাদের সুরক্ষায় বাধাদানকারীকে সর্বোচ্চ তিন বছরের জেলের শাস্তি নির্ধারণ করতে চায় ইসি। সর্বনিম্ন ১ বছর অথবা শাস্তির বিধানও রেখেছে সাংবিধানিক এ সংস্থাটি। এ লক্ষ্যে গণপ্রিনিধিত্ব অধ্যাদেশ নতুন এ বিধান যুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। তিন মাস না যেতেই উল্টোরথে ইসি। এ নিয়ে চলছে সমালোচনা ও নানামুখী বিতর্ক। রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহে গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য ১৩টি নির্দেশনা প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার এ প্রসঙ্গে বলেন, সবই গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য না, না আর না। মনে হচ্ছে, গণমাধ্যমকর্মীদের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ইসির গণমাধ্যমের সহযোগিতা চাওয়া প্রয়োজন, তার বদলে বিধিনিষেধ দিচ্ছে; – যা কাম্য নয়। এ বছর রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলরসহ মোট ২৫৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্ব›দ্বীতা করছে।