শনিবার, ০৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:০২ অপরাহ্ন

নির্মাণ মৌসুমেও বিক্রি কম রড—সিমেন্টের

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারী, ২০২৫

এফএনএস এক্সক্লুসিভ: বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে গত কয়েক বছর ধরে দেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে ধীরগতি চলায় মন্দা চলেছিল দেশের রড—সিমেন্ট খাতেও। ছাত্র—জনতার অভ্যুত্থানের পর মেগা প্রকল্পগুলোয় আরও ধীরগতি দেখা দিয়েছে। এতে রড—সিমেন্ট খাতের পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন এই খাতের ব্যবসায়ীরা। উল্লেখ্য, চলতি বছরের শুরুর দিকে অবকাঠামো নির্মাণের প্রধান পণ্য রড—সিমেন্টের দাম হঠাৎ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। গত আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ডলার ও ব্যাংকে তারল্য সংকটের পাশাপাশি ঋণপত্র (এলসি) খুলতে অনীহাসহ বিভিন্ন কারণে এলসি মার্জিন সুবিধা কমে যাওয়ায় ব্যাহত হয় আমদানি বাণিজ্য। তবে পরে আমদানি স্বাভাবিক হলেও চাহিদা না থাকায় দাম নিম্নমুখী। চলতি নির্মাণ মৌসুমে সংকট কাটিয়ে বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরার আশা থাকলেও সরকারি নির্মাণ প্রকল্পে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়ায় সংকটে পড়েছে ইস্পাত ও সিমেন্ট খাত। জানা গেছে, গত দুই সপ্তাহে দেশের বাজারে রডের দাম টনপ্রতি ৬—৭ হাজার টাকা কমেছে। রডের পাশাপাশি সিমেন্টের দামও বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ১০ থেকে ১৫ টাকা কমেছে। চাহিদা না বাড়লে রড—সিমেন্টের দাম আরো কমবে বলে আশঙ্কা করছেন মিল মালিকরা। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের অবকাঠামো খাত সবচেয়ে নাজুক সময় পার করছে। চলমান প্রকল্পের কাজে ধীরগতির পাশাপাশি বিগত ছয় মাসে নতুন কোনো মেগা প্রকল্পের অনুমোদন হয়নি। আগের প্রকল্পগুলোয় বিক্রি করা পণ্যের দামও মেটাতে পারছে না অনেক প্রতিষ্ঠান। ৫ আগস্ট—পরবর্তী প্রেক্ষাপটে অনেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের খেঁাজ মিলছে না। আবার সরকারি প্রকল্পের বিল আটকে থাকায় পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের বকেয়া পরিশোধ করতে পারছেন না অনেকে। এদিকে গত এক বছর ডলারের মূল্য ক্রমাগত বৃদ্ধির কারণে বাড়তি দামে কাঁচামাল সংগ্রহ করতে হচ্ছে। অথচ দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে কম দামে পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন উৎপাদকরা। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম খাত ইস্পাত শিল্পকে নিয়ে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া না হলে এর সঙ্গে যুক্ত বিনিয়োগকারীরা বড় ধরনের সংকটে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, গত দুই মাসে কোম্পানি ভেদে ইস্পাতের বিক্রি কমেছে প্রায় ৭০ শতাংশ। পাশাপাশি সিমেন্টের বিক্রি কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ। এর প্রধান কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা উল্লেখ করছেন সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ থাকাকে। কারণ, দেশের মোট ১ লাখ ২০ হাজার টন উৎপাদিত ইস্পাতের প্রায় ৬৫ শতাংশ ব্যবহৃত হয় সরকারি প্রকল্পে। ব্যবসায়ীদের সূত্র মতে, গত দুই মাসে রডের চাহিদা কমার কারণে দাম কমেছে। ফলে পণ্যের মজুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইস্পাত কারখানার উদ্যোক্তারা জানান, সংকট কাটিয়ে বাজার ভালো হবে, এমন আশায় প্রায় সবাই চাহিদা কমের মধ্যেও বাড়তি উৎপাদন করেছিলেন। এখন বিক্রি কমে কারখানা ও গুদামে রডের স্তূপ জমেছে। বাধ্য হয়ে উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছেন। এতে আবার উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্যবসার মূলধন জোগাড় করতে প্রতি টনে উৎপাদন খরচের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা লোকসানে রড বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। এই সংকট নিরসনে শিল্প উদ্যোক্তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে অবিলম্বে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পগুলো পুনরায় চালু করা এবং শিল্পের কাঁচামালের আমদানিতে শুল্ক কমানোর আহ্বান জানান তারা। দেশের শীর্ষস্থানীয় ইস্পাত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক তপন সেনগুপ্ত বলেন, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে নাজুক ইস্পাত খাতের বিক্রি প্রায় ৫০ শতাংশ কমে গেছে। তাই বাধ্য হচ্ছি উৎপাদন কমিয়ে আনতে। শিল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনেক কারখানার মালিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শিফট কমাতে বাধ্য হচ্ছেন। তিন শিফটের পরিবর্তে দুই শিফটে কারখানা চালাচ্ছেন এবং সপ্তাহে একদিনের বদলে দুদিন কারখানা বন্ধ রাখছেন। বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসএমএ) তথ্যমতে, দেশে প্রায় ২০০টি ইস্পাত এবং রি—রোলিং কারখানা রয়েছে, যার মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে উৎপাদন করে বড় ৪০টি কোম্পানি। এই খাতের বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ১ কোটি ২০ লাখ টন; যদিও দেশের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৭৫ লাখ টন। বিএসএমএর সাধারণ সম্পাদক সুমন চৌধুরী বলেন, আমাদের দেশের ইস্পাত শিল্পের বয়স প্রায় ৭০—৭২ বছর। আগে ইস্পাত আমদানি করতে হতো, কিন্তু এখন আমরা দেশের চাহিদা মিটিয়ে ইস্পাত রপ্তানি করছি। কিন্তু বর্তমানে এ খাত অনেক ক্ষতির কবলে আছে। একদিকে চাহিদা কম, তার ওপর উৎপাদন খরচ বেশি, আবার কাঁচামালের দামও বেশি। সার্বিকভাবে আমরা ত্রিমুখী সমস্যার মধ্যে আছি। অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকে অবিলম্বে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পগুলো পুনরায় চালু করা এবং শিল্পের কাঁচামালের আমদানিতে শুল্ক কমানোর আহ্বান জানাই। এদিকে, একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে দেশের সিমেন্ট খাতেও। সা¤প্রতিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতায় সিমেন্টের চাহিদা ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কমে গেছে। সিমেন্ট খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাহিদা কম থাকায় প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে দাম আরো নিম্নমুখী হতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com