বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৫১ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
শ্যামনগরে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জিয়া স্মৃতি ভলিবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত শ্যামনগরে মৃত্যুর চার মাস পর কবর থেকে গৃহবধুর মরদেহ উত্তোলন দেবহাটায় জামায়াতের আয়োজনে কুরআন শিক্ষায় মুহাদ্দিস রবিউল বাসার উচ্চতায় পৌছানো রুপসী ম্যানগ্রোভ দেবহাটা পর্যটন কেন্দ্র আলো ঝলমলে দ্যুতি ছড়ানো সৃষ্টিশীলতার অনন্য ক্ষেত্র কুলিয়ার টিকেট কালীপূজা পরিদর্শন করলেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ ভোমরায় টাস্কফোর্সের অভিযানে ৩ টন রসুন উদ্ধার সহ লাখ টাকা জরিমানা খলিশখালী সচেতনতামূলক নারী সমাবেশ বাস্তবায়ন সাতক্ষীরায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দিল জেলা পুলিশ বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে শিবিরের ফ্রী ব্লাড গ্রুপ ক্যাম্পেইন নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে মহান বিজয় দিবস পালিত

নিষিদ্ধ হলেও দেশে নোট—গাইড বইয়ের রমরমা ব্যবসা অব্যাহত

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

এফএনএস এক্সক্লুসিভ: নিষিদ্ধ হলেও দেশে নোট—গাইড বইয়ের রমরমা ব্যবসা চলছেই। সৃজনশীল মেধা বিকাশ নিশ্চিতে বিগত ২০০৮ সালে উচ্চ আদালতের এক আদেশে নোট বইয়ের পাশাপাশি গাইড বই নিষিদ্ধ করা হয়। আর আইনটি লঙ্ঘনের দায়ে সর্বোচ্চ সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। কিন্তু তারপরও গত ১৩ বছর ধরে কয়েকটি ছাপাখানার মালিক প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের সব শ্রেণির ‘একের ভেতর সব’ নাম দিয়ে তৈরি গাইড—সহায়ক বই ছাপিয়ে প্রকাশ্যে বাজারজাত ও বিক্রি করেছে। আর ওই ব্যবসা করে গত ১৩ বছরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সিন্ডিকেট। পুস্তক ব্যবসায়ী ও এনসিটিবি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নোট ও গাইড বইয়ের প্রকাশকরা একশ্রেণির ইউএনও, জেলা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষক সমিতির সহযোগিতায় নোট—গাইড বইয়ের বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছে। এমনকি খোদ রাজধানীতে এনসিটিবি ও শিক্ষা অধিদপ্তরের একশ্রেণির কর্মকর্তা এই ধরনের বাণিজ্য টিকিয়ে রেখেছে। কারোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কোনো নজির নেই। আর বিসিএস সাধারণ ও কারিগরি শিক্ষা ক্যাডারের পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তা অবৈধ গাইড বই কোম্পানিতে গোপনে মাসিক বেতনে চাকরি করছেন । তারা ওসব কোম্পানির নোটবই লেখার কাজ করেন। সূত্র জানায়, সরকার থেকে প্রতি বছর পয়লা জানুয়ারিতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে পাঠ্যবই দেয়া হয়। এনসিটিবির অনুমোদন ব্যতীত পাঠ্যতালিকায় অন্য কোনো বই ব্যবহার না করার বিধান রয়েছে। কিন্তু বরাবরের মতো এবারও বিনা মূল্যের পাঠবই মুদ্রণের আগেই সরকার নিষিদ্ধ বিষয়ভিত্তিক বিভিন্ন কোম্পানির নোট ও গাইড বই বাজারে আসতে শুরু করেছে। অথচ মূল বই শিক্ষার্থীদের হাতে পেঁৗছানোর আগে পাঠ্যবইয়ের কোনো বিষয়বস্তু (কনটেন্ট) বাইরের কারোরই জানার বা দেখার সুযোগ নেই। তা সত্ত্বেও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে বইয়ের সিডি (মুদ্রণের ‘র’ কপি), নম্বর বণ্টন ও সিলেবাসের আগাম তথ্য মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে নোট গাইড ব্যবসার সঙ্গে জড়িত প্রেস মালিকদের হাতে চলে গেছে। আর প্রেস মালিকরা মূল পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ বাদ দিয়ে এখন ‘সহায়ক বই’ নামের নোট—গাইড বই ছাপানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে। ফলে সরকারের বিনামূল্যের ৪১ কোটি পাঠ্যবই সময়মতো ছাপা ও বিতরণ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এনসিটিবির কর্মকর্তারা স¤প্রতি দুটি ছাপাখানা পরিদর্শনে গিয়ে নোট—গাইড বই ছাপানোর বিষয়টি হাতেনাতে ধরেছে। শিক্ষা খাতে এমন অপকর্মে জড়িত পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের কর্মকর্তা—কর্মচারী ও নোট—গাইড প্রকাশকদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা। সূত্র আরো জানায়, এনসিটিবির সম্পাদনা শাখা থেকে পাঠ্যবইয়ের পাণ্ডুলিপি, নম্বর বণ্টন ও সিলেবাসের আগাম তথ্য নোট—গাইড প্রকাশকদের কাছে গত ১৩ বছর ধরে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে হস্তান্তর করা হচ্ছে। যারা পাঠ্যবই ছাপার ঠিকাদারি পায়, তাদের মধ্যে বড় ঠিকাদারদের নোট—গাইড কোম্পানি রয়েছে। আগাম তথ্য সংগ্রহ করে নোট—গাইড লিখে ও প্রকাশ এবং বাজারজাত করে প্রতি বছর দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি বাণিজ্য করছে কয়েকটি কোম্পানি। যদিও ২০২২ সাল থেকে নতুন কারিকুলাম চালু হওয়ার পর নোট ও গাইড বই ব্যবসার সুযোগ কিছুটা কমে আসে। কেননা ওই কারিকুলামে (২০২২ সালের) শিক্ষার্থীদের খুব একটা পড়াশোনা করতে হতো না। ফলে গত তিন বছর মাধ্যমিকের বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নোট বা গাইড বই বিক্রি কিছুটা কম হয়েছে। তারপরও বাজারে সয়লাব ছিল গাইড বই। বিক্রি হয়েছে তুলনামূলক কম। কিন্তু আগামী ২০২৫ সাল থেকে নতুন করে সৃজনশীল প্রশ্নে পরীক্ষাপদ্ধতি চালু হওয়ার খবরে নোট ও গাইড বই বাজারে নিয়ে আসার কাজে পুস্তক ব্যবসায়ীরা এখন ব্যস্ত। ইতিমধ্যে মাধ্যমিকের বিভিন্ন ক্লাসের একাধিক গাইড ও নোট বই বাজারে চলেও এসেছে। গত তিন বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবার গাইড বই বিক্রি করে প্রকাশকদের ৪ হাজার কোটি টাকা আয় করার টার্গেট রয়েছে। আর অবৈধ নোট—গাইড কোম্পানিতে গোপনে মাসিক বেতনে চাকরি করছেন বিসিএস সাধারণ ও কারিগরি শিক্ষা ক্যাডারের পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তা। কখনো অফিস বা স্কুল—কলেজ সময়ের পর তারা ওসব কোম্পানির অফিসে বসে নোটবই লেখার কাজ করেন। আবার শিক্ষা অধিদপ্তর বা এনসিটিবির বড় পদে চাকরিরত একশ্রেণির কর্মকর্তাদের অবৈধ সুবিধা দিয়ে থাকেন গাইড বই মালিকরা। নোট—গাইড কোম্পানিগুলোর মালিকদের টার্গেট প্রেষণে অথবা বদলিভিত্তিক পদায়ন পাওয়া জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর এবং মাদ্রাসা ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তারা। এছাড়া শিক্ষা ক্যাডারদের শিক্ষা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে তদবির করে পদায়ন পাইয়ে দিতেও ভূমিকা রাখে কোনো কোনো নোট—গাইড কোম্পানির মালিক। গত কয়েক বছর ধরে নভেম্বর ও ডিসেম্বর সহায়ক বইয়ের নামে বিক্রি হওয়া ‘নিষিদ্ধ নোট—গাইড’ বইয়ের মুদ্রণ ও বাজারজাতকরণ বন্ধ রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির কাছে অনুরোধ করা হয়েছিল। একই সঙ্গে খোলাবাজারে এই ধরনের নিষিদ্ধ বইয়ের বিক্রি ঠেকাতে জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারদের চিঠি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এদিকে এনসিটিবির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এ বি এম রিয়াজুল হাসান স¤প্রতি সাংবাদিকদের জানান, অসৎ কাজের জড়িতদের দ্রুত চিহ্নিত করতে ইতিমধ্যে একাধিক কমিটি গঠন করেছে এনসিটিবি।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com