এফএনএস বিদেশ : রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্বের কোনো খেসারত দিতে চায় না চীন। ইউক্রেন সংকটে চীন কৌশলগত অবস্থানে থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা তার পিছু ছাড়ছে না। দিন যতই গড়াচ্ছে চীনের ওপর চাপ তত বাড়ছে রাশিয়ার যুদ্ধ শুরুর আগে থেকেই মস্কোর পক্ষে থাকার আশ্বাস দিয়েছিল বেইজিং। যুদ্ধ শুরুর পরপরই রাশিয়াকে কোণঠাসা করতে পশ্চিমারা বহু পদক্ষেপ নিয়েছে। এরপরও চীনকে রাশিয়ার জন্য সুর চড়া করতে দেখা যায়নি। স¤প্রতি এক গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ার মুখ খুলে চীন। চীন রাশিয়াকে শক্তি জোগাবে ও সহযোগিতা করবে- এমন গুঞ্জন অস্বীকার করে চীন জানায়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে তারা কোনো পক্ষে নেই। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, মস্কোর বারবার সহযোগিতার অনুরোধে চীনও রাশিয়াকে অস্ত্র সহায়তার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। তবে রাশিয়ার ওই অনুরোধের ব্যাপারে কিছুই জানে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে চীন। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেন, রাশিয়াকে পশ্চিমারা যেভাবে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সেই নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে চায় না চীন। চীন নীতিগতভাবে নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রত্যাখ্যান করে এবং অবশ্যই আমাদের বৈধ অধিকার ও স্বার্থ রক্ষা করার অধিকার রয়েছে। নিষেধাজ্ঞায় পড়ে চীন ক্ষতিগ্রস্ত হতে চায় না। গত মঙ্গলবার স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোসে ম্যানুয়েল আলবারেসের সঙ্গে ফোনে এ কথা বলেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। খবর আল-জাজিরার যুদ্ধের শুরুতেই রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সি ইয়িংহং বলেন, আন্তর্জাতিক বিশ্বের রাজনীতিতে যেভাবে মেরুকরণ ঘটছে, তাতে রাশিয়ার সঙ্গে চীনকেও বিচ্ছিন্ন কিংবা নিষেধাজ্ঞা দিতে দ্বিধা করবে না পশ্চিমারা। গত ফেব্র“য়ারিতে ইউক্রেনের ওপর হামলা শুরুর পর রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোনো অবস্থান নেয়নি চীন। এমনকি কোনো নিন্দাও জানায়নি। জাতিসংঘে নিরাপত্তা পরিষদ ও সাধারণ পরিষদে ভোটদান থেকেও বিরত ছিল দেশটি। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউক্রেন হামলায় চীনের কাছে ক‚টনৈতিক সমর্থন পাচ্ছে রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক উষ্ণ না হওয়ায় চীন রাশিয়ার দিকেই ঝুঁকছে। বর্তমানেও রাশিয়ার সঙ্গে চীনের অর্থনৈতিক কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। চায়না ডেইলির খবরে বলা হয়েছে, রাশিয়াকে সামরিক ও অর্থসহায়তা নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটন ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে বলে বরাবরই অভিযোগ জানিয়ে আসছে বেইজিং। বেইজিং বলছে, এইসব গুজব ছড়ালে ইউক্রেনে সংঘাত আরও বাড়বে। মস্কোও জানিয়েছে, তারা চীনের কাছে কোনো সাহায্য চায়নি। ইউক্রেনে অভিযান পরিচালনা সফল করতে তাদের কোনো বহিঃশক্তি প্রয়োজন নেই। গত মাসে সিঙ্গাপুরের এস রাজারতœম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সহযোগী অধ্যাপক লি মিংজিয়াং বলেন, তাইওয়ান যুদ্ধে চীন যেমন রাশিয়ার কাছ থেকে সামরিক সহায়তা প্রত্যাশা করে না, ইউক্রেন অভিযানেও চীনের কাছে রাশিয়ার কোনো প্রত্যাশা নেই। এশিয়া টাইমসের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, রাশিয়া সম্পর্কিত চীনের কোনো নীতি যুক্তরাষ্ট্র বদলাতে পারবে না। কোনো চাপে পড়েও চীন রাশিয়ার বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নেবে না। রাশিয়াকে শায়েস্তার জন্য চীন কোনোভাবেই যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তা করবে না। কারণ চীন-রাশিয়া যৌথ মার্কিনবিরোধী, এই দৃষ্টিকোণ থেকেই তাদের বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, চীনা প্রধানমন্ত্রী শি জিনপিং এ পর্যন্ত ৩৮ বার ভাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এটি বিরল। বৈঠকের আড়ালের উদ্দেশ্য হলো- দুই নেতাই চান যুক্তরাষ্ট্রকে দমাতে। তাদের এই জোরালো সম্পর্কের কারণেই টানটান মেজাজে দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রকে।