এফএনএস : বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় নারায়ণগঞ্জের রাজপথ। এ সময় রাজা আহমেদ শাওন (২২) নামে এক যুবদল কর্মী নিহত হয়েছেন। তিনি পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বিএনপি। প্রায় দুইঘণ্টা ধরে চলা সংঘর্ষে উভয়ের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, পুলিশের মুহুর্মুহু গুলি, টিয়ারশেল এবং বেধড়ক লাঠিচার্জে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীসহ দুই শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে। যাদের বেশির ভাগ শটগানের গুলিতে আহত হয়েছেন। বিএনপির নেতাকর্মীদের ইটপাটকেলে ২০ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে বলে দাবি করেছেন জেলা পুলিশ সুপার। পুলিশের গুলিতে বিএনপির নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ পথচারী, গার্মেন্ট ও হোসিয়ারি শ্রমিক, রেস্তরাঁয় কাজ করা নারীও রয়েছেন। সংঘর্ষ চলাকালে নগরীতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় মার্কেট ও বিপনী বিতান। বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। গতকাল সকালে বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে পুলিশের বাধা দেয়াকে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে বলে বিএনপির নেতাকর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হলে তা নগরের ২ নম্বর রেলগেট থেকে শুরু করে মণ্ডলপাড়া ব্রিজ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সড়ক রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। বেলা সাড়ে ১০টায় সংঘর্ষ শুরু হয়ে চলে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। গতকাল সকাল ৯টা থেকেই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নগরের আলী আহাম্মদ মিলনায়তনের সামনে সমবেত হচ্ছিল বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ওই সময় পুলিশ এসে তাদের দ্রুত র্যালী বের করতে বলে। বিএনপির নেতাকর্মীরা র্যালী বের করে ২ নম্বর রেলগেট পর্যন্ত যাওয়া মাত্রই পাশের পুলিশ বক্স থেকে পুলিশ এসে লাঠিচার্জ শুরু করে। এর আগে আলী আহাম্মদ চুনকা পাঠাগারের সামনে সমবেত বিএনপি নেতাকর্মীদের কর্মসূচি পালনে বাধা দেন অতিরিক্তি পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করেই সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র্যালী বের করে। মিছিলটি ২ নম্বর রেলগেটে আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে যাওয়ামাত্রই পুলিশ অতর্কিত র্যালীতে লাঠিচার্জ শুরু করে এবং জেলা ও মহানগর বিএনপির সিনিয়র নেতাদের লাঠিপেটা করে পুলিশ। তখনই সিনিয়র নেতাদের বাঁচাতে এগিয়ে এলে নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। বিএনপির নেতাকর্মীদের ছোড়া ইটপাটকেলে পুলিশ কোণঠাসা হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে নগরের ২ নম্বর রেলগেটস্থ পুলিশ বক্সের সামনে রাখা কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে বিএনপি নেতাকর্মীরা। এরপরেই পুলিশ গুলিবর্ষণ শুরু করে। পুলিশের গুলিবর্ষণে ২ নম্বর রেলগেট এলাকায় রাজা আহমেদ শাওন গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাকে উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক নাজমুল হোসেন তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশের ছোড়া শটগানের গুলিতে সরকারি তোলারাম কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হোসেন সুজন গুলিবিদ্ধ হন। সুজনের বুক, পেট মাথা ও চোখে গুলি লাগে। তাকে উদ্ধার করে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি বলেন, সুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এছাড়া পুলিশের শটগানের গুলিতে আহত জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবি, মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু, যুবদল নেতা সাদিকুর রহমান সাদেক, সস্তাপুর এলাকার যুবদল নেতা শাহীন (৪০), টানবাজার এলাকার জাহাঙ্গীর (৩০), রাজু (২৬), সোনারগাঁয়ের শরীফ (২৫), ফতুল−ার ইউনুস (৪৩), সিদ্ধিরগঞ্জের সাগর (২২), জিমখানার আব্দুস সালাম (৬০), সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজির মো. আখতার (৫২), দেওভোগের স্বর্ণশিল্পী মুন্না (১৮), দেওভোগ দাতা সড়কের মো. কাদির (২৭), ২ নম্বর রেলগেটের আলমাছ পয়েন্টের শরীফুল ইসলাম (১৯), শহীদ নগরের শাহনাজ (৫০), হোসাইনী নগরের মো. সবুজ (৩৪), দেওভোগ পানির টাংকির মোমেন (৫৫), ২ নম্বর রেলগেটের শিহাব (২৫), পাইকপাড়ার শামসুল হক (৫০), বেপারীপাড়ার শিল্পী (৪০), জামাইপাড়া এলাকার মো. ইব্রাহিম (২৫), সিদ্ধিরগঞ্জের গার্মেন্ট শ্রমিক তাজুল ইসলাম (৩০), মাসদাইরের আশরাফুল (৩২), শহরের করিম মার্কেটের শমিক সোয়াদ হোসেন (৩০), উজ্জ্বল ভৌমিক (২৮), মিন্টু (২৮), সজিব (১৮), বন্দর রূপালী এলাকার মো. নাসির (৪০), ফতুল−ার মো. বাদল ভূঁইয়া (৩৫), নাবির হোসেন নবীন (৩০), মো. রাসেল প্রধান (৩০), মো. জুয়েল আরমান (৪০), মো. ফারুক হোসেন (৩০), মো. আকিব (২২), মো. সুলতান মাহমুদ (২৫) ও মো. আলিব (২৫) এর নাম জানা গেছে। মারা যাওয়ার আগে মিছিলের অগ্রভাগে ছিল শাওন: প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি সফল করতে সকালে নারায়ণগঞ্জ শহরের ডিআইটি এলাকায় চুনকা পাঠাগারের সামনে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়ো হয়। এ সময় জেলা যুবদলের নেতা সাদেকুর রহমানের নেতৃত্বে একটি মিছিল চুনকা পাঠাগারের সামনে যায়। ওই মিছিলের সামনের সারিতে ছিলেন রাজা আহমেদ শাওন। কিন্তু কে জানতো এটাই তার শেষ মিছিল। শেষ স্লোগান। জেলা ও মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রা ২নং রেল গেটের দিকে আসতেই পুলিশ বাধা দেয়। একপর্যায়ে পুলিশ বেধড়ক লাঠিচার্জ শুরু করলে বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে জড়ায়। এ সময় পুলিশের শটগানের গুলিতে শাওন গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। নিহত রাজা আহমেদ শাওন ফতুল−ার বক্তাবলী ইউনিয়নের পূর্ব গোপালনগর এলাকার মৃত সাহেব আলীর ছেলে। সে বক্তাবলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ফতুল−া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলীর ভাতিজা। নিহত শাওনের বড় ভাই ফরহাদ প্রধান বলেন, সকালে স্থানীয় যুবদল নেতাদের ডাকে শাওন শহরে যান। তার কিছুক্ষণ পর তারা জানতে পারেন, শাওন গুলিতে নিহত হয়েছেন। গার্লস স্কুলের ভেতর পুলিশের টিয়ার শেল, হাসপাতালে ৫ শিক্ষার্থী: ঘটনাস্থলের পাশে থাকা মর্গ্যান বালিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজে দশম শ্রেণির পরীক্ষা চলছিল। এ সময় পুলিশের ছোড়া টিয়ারশেল ওই কক্ষে গিয়ে পড়ে। স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আয়শা সুলতানা, লামিয়া, আফসানা মীম, মিমিয়া, রোকেয়া, অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী উম্মে হানী, আঁখি, উম্মে কুলসুমসহ ১০-১২ জন আহত হয়। তাদের মধ্যে প্রচণ্ড ধোঁয়ার শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ৫ ছাত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ বলেন, স্কুলের পাশেই সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় টিয়ারশেল ভেতরে এসে পড়ে। টিয়ারশেলের ধোঁয়ায় প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হলে ৫ শিক্ষার্থীকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিএনপি নেতারা যা বললেন: নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবি বলেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শান্তিপূর্ণ কর্মসুচিতে পুলিশ বিনা উস্কানিতে বাধা দিয়েছে। এবং পুলিশের বৃষ্টির মতো গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ এবং লাঠিচার্জে আমাদের নিরীহ বহু নেতাকর্মী হতাহত হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, নিহত শাওন যুবদলের সক্রিয় কর্মী। গতকালও বিএনপির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে মিছিল সহকারে যোগ দেয় শাওন। এর কিছু সময় পরেই সে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট আবু আল ইউসুফ টিপু বলেন, পুলিশ কোনো কারণ ছাড়াই বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর চড়াও হয়। তারা নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করতে তাকে। অথচ আমাদের এই কর্মসূচির বিষয়ে পুলিশ সুপারকে আমরা গত বুধবারেই লিখিতভাবে অবহিত করেছি। পুলিশের গুলিতে তিনিসহ দলের অনেক শীর্ষ নেতার পাশাপাশি কর্মীরাও গুলিবিদ্ধ হয়েছে। অনেকেই পুলিশের ভয়ে চিকিৎসা নিতে পারছে না। আবার অনেকে গোপনে চিকিৎসা নিচ্ছে। নিহত শাওন যুবদলের কর্মী বলে দাবি করেন তিনি। পুলিশ সুপার যা বললেন: নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, অনুমতি ছাড়া বিএনপির নেতাকর্মীরা সকালে সড়ক অবরোধ করে সমাবেশ শুরু করেন। ওই সময় তাদের রাস্তা থেকে সরে গিয়ে অথবা তাদের নিজস্ব কার্যালয়ে গিয়ে সমাবেশ করতে বলা হয়। কিন্তু তারা তা না করে রাস্তা বন্ধ করেই সমাবেশ করতে চায়। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাদানুবাদ হয়। তখনই বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। ককটেল চার্জ করে। পরে জানমাল রক্ষার্থে পুলিশ কাদানে গ্যাস ও শটগানের গুলি ছোড়ে। তিনি আরও জানান, বিএনপির নেতাকর্মীদের নিক্ষিপ্ত ইটপাটকেলে ১৫ থেকে ২০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। স্টাফ রিপোর্টার, মানিকগঞ্জ থেকে জানান, মানিকগঞ্জে বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিএনপি’র দাবি পুলিশের বেধড়ক লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপে শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৫ জনকে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় দুপুরে জেলা বিএনপি’র সংবাদ সম্মেলনে তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপি’র সভাপতি আফরোজা খান রিতা। পুলিশের দাবি তাদের কয়েক সদস্য এ ঘটনায় আহত হয়েছেন। বিএনপি’র ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জেলার দলীয় কার্যালয়ে সকাল ১১টার দিকে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এর আগে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে দলীয় নেতাকর্মীরা জড়ো হয় শহরের সেওতা ও তার আশপাশ এলাকায়। সকাল ১১টার দিকে জেলা বিএনপি’র সকল স্তরের নেতাকর্মীরা বিশাল একটি মিছিল নিয়ে দলীয় অফিসের সামনে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। পথিমধ্যে শহরের খালপাড় এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে মিছিলটি আটকানোর চেষ্টা চালায়। এ সময় নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের তর্কবিতর্ক ও ধস্তাধস্তি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ বেধড়ক লাঠিচার্জ শুরু করে। এ সময় নেতাকর্মীরাও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। বেধে যায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। পুলিশ লাঠিচার্জের পাশাপাশি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। সেওতা শহীদ তুজ সড়কের পূর্ব পাশে পুলিশ ও উত্তর পাশে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন। উভয় অবস্থান থেকেই দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের পাশাপাশি পুলিশের টিয়ারশেল নিক্ষেপ চলে বেশ কিছু সময়। প্রায় ঘণ্টাখানেক এই অবস্থা বিরাজ করায় স্থানীয় দোকানপাট বন্ধের পাশাপাশি এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিএনপি’র দাবি পুলিশের হামলায় তাদের দলের শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। পক্ষান্তরে পুলিশের দাবি- সদর থানার ওসিসহ কয়েক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এ ছাড়া পুলিশ-বিএনপি’র সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার আগে সকাল ৮টা থেকে জেলা শহরের বিভিন্ন প্রবেশমুখে জেলা ছাত্রলীগ অবস্থান নিয়ে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের মারধর করেছে। সকাল ১০টার দিকে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সিফাত কোরাইশি সুমন ও সাধারণ সম্পাদক রাজিদুল ইসলামের নেতৃত্বে কয়েকশ’ ছাত্রলীগ কর্মী জড়ো হন ভাষা শহীদ রফিক চত্বরে। এরপর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে। তারা মারধর করে বিএনপি’র কয়েক নেতাকর্মীকে। এদিকে বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় দুপুরে জেলা বিএনপি সংবাদ সম্মেলন করেছে। মুন্নু সিটিতে জেলা বিএনপি’র সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সম্মেলনে এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো হয়। এসময় জেলা বিএনপি’র সভাপতি আফরোজা খান রিতা বলেন, আজ আমাদের কোনো বিক্ষোভ সমাবেশ ছিল না, ছিল দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা আমাদের মৌলিক অধিকার। এই অধিকারটুকু আমাদের কাছ থেকে হরণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের এই অধিকারকে আমরা হরণ করতে দেবো না। এভাবে যদি বারবার আমাদের ওপর আক্রমণ আসতে থাকে তবে ভবিষ্যতে আমরা দাঁতভাঙা জবাব দেবো। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠানে পুলিশ ও ছাত্রলীগ হামলা চালিয়ে শতাধিক নেতাকর্মীকে আহত করেছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে কয়েকজনকে। অবিলম্বে গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি এবং শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠানে হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষীদের শাস্তি দাবি করছি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি এডভোকেট আজাদ হোসেন খান, সহ-সভাপতি আব্দুল বাতেন মিয়া, জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট নুরতাজ আলম বাহার, জেলা বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সত্যেন কান্ত পণ্ডিত ভজন, পৌর বিএনপি’র সভাপতি নাসির উদ্দিন আহমেদ যাদু, এসএম ইকবাল হোসেনসহ বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, নেত্রকোনায় বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে। সংঘর্ষে পুলিশসহ বিএনপি’র ৩৫ নেতাকর্মী আহত হয়েছে। গতকাল বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের সময় এ ঘটনা ঘটে। সূত্রমতে, বিএনপি’র ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জেলা বিএনপি সকাল ১০টায় ছোট বাজারস্থ দলীয় কার্যালয়ে আনন্দ মিছিল ও আলোচনা সভার আয়োজন করে। সকাল থেকে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে জড়ো হতে থাকে। একপর্যায়ে দলীয় কার্যালয় ছাড়িয়ে আশপাশের রাস্তা বিএনপি নেতাকর্মীদের পদচারণায় লোকারণ্য হয়ে পড়ে। এতে রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। পুলিশ বিএনপি’র নেতাকর্মীদের রাস্তা ছেড়ে দলীয় কার্যালয়ের ভেতরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। এ সময় বিএনপি’র নেতাকর্মীরা স্লোগান দিতে থাকে। একপর্যায়ে পুলিশ বিএনপি’র নেতাকর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ শুরু করে। এ সময় বিএনপি’র নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ বিএনপি’র নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে পুলিশসহ বিএনপি’র ৩৫ নেতাকর্মী আহত হয়। নেত্রকোনা জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মো. আনোয়ারুল হক জানান, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনকালে পুলিশ বিনা উস্কানীতে নেতাকর্মীদের ওপর নির্বিচারে লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে ১২ জন রাবার বুলেট বিদ্ধসহ ২৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়। আহতদের স্থানীয় হাসপাতাল ও বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান জুয়েল বলেন, বিএনপি’র নেতাকর্মীরা রাস্তা বন্ধ করে স্লোগান দিচ্ছিলো। রাস্তায় যানবাহন ও পথচারী চলাচলের স্বার্থে তাদেরকে রাস্তা ছেড়ে দিতে বলা হয়। বিএনপি’র নেতাকর্মীরা রাস্তা না ছাড়ায় তাদের ওপর মৃদু লাঠিচার্জ করা হয়। এ সময় বিএনপি’র নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাবার বুলেট ছোড়ে। বিএনপি’র নেতাকর্মীদের ছোড়া ইটপাটকেলে ১০-১২ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে বিএনপি’র ১৩ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সিরাজগঞ্জে বিএপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশ শেষে পুলিশ ও বিএনপি কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ারসেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করেছে। এতে পুলিশ ও বিএনপি কর্মীসহ ১৫ জন আহত হয়েছে। সিরাজগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন বলেন, বিএনপি গতকাল তাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শহরের ই.বি রোডে অবস্থিত দলীয় কার্যালয়ে কেক কাটা শেষে সমাবেশ করে। সমাবেশের শেষদিকে কিছু কর্মী পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে। তখন পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করে। এতে বিএনপির নেতাকর্মীরা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশের উপর হামলা করলে বেশ কজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। তখন আমরা টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে তাদের শহরের ধানবান্ধি এলাকার দিকে পাঠিয়ে দেই। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, দলের ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলীয় কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের নিয়ে কেক কাটার পর এক সংক্ষিপ্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় ‘এই সরকারের গুম-খুন ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে সবাইকে একযোগে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে’- এমন বক্তব্য দিলেই পুলিশ আমাদের ওপর লাঠিচার্জ শুরু করে। তখন আমরা নেতাকর্মীদের শান্ত করাতে থাকলে পুলিশ টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করতে থাকে। পরে আমরা দলীয় কার্যালয় থেকে সরে এসে শহরের ধানবান্ধী এলাকায় অবস্থান নেই। পুলিশ সেখানেও আমাদের উপর চড়াও হয়। এতে আমাদের প্রায় ১০-১২ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। মদন (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি জানান, নেত্রকোনার মদনে আওয়ামী লীগ, বিএনপির সংঘর্ষের ঘটনায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি নূরুল আলমকে প্রধান আসামি করে মামলা করেছে মদন থানা পুলিশ। এস আই দেবাশীষ বাদী হয়ে ২৯ জনের নাম উলে−খ করে ২০০/২৩০ জনকে অজ্ঞাত রেখে বুধবার রাতে মামলাটি করেন। বুধবার উপজেলা বিএনপি কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে মদন উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিলের জন্য চানগাঁও ইউনিয়নের শাহপুর ঈদগাহ মাঠ এলাকায় জড়ো হলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে বিএপির নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুঁড়তে শুরু করলে ওসিসহ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ১৭ নেতাকর্মী আহত হয়। পুলিশ আহত হওয়ার ঘটনার প্রেক্ষিতে মদন থানার পুলিশ বাদী হয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এ মামলাটি করেন। গতকাল ওসি মুহাম্মদ ফেরদৌস আলম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ মামলায় বিএনপির ৩ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তাকৃতরা হলো- বিএনপির কাইটাই ইউপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন, রেহান মিয়া ও কাওসার।