এফএনএস : উচ্চশিক্ষার ন্যূনতম সুবিধা নিশ্চিত না করেই নতুন অনুমোদন পাওয়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছে। প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত ও জনবল নিয়োগ অনুমোদনের আগেই শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজস্ব অবকাঠামোয় ক্লাস শুরুর আগেই কয়েকটি ব্যাচ গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করে বের হয়ে যাওয়ার নজিরও দেখা যাচ্ছে। অগোছালোভাবে চলছে ওসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। উচ্চশিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণকারীরাও যথাযথ পরিবেশ নিশ্চিত করার আগে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর বিষয়টিকে গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষার প্রতিবন্ধক হিসেবে দেখছেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের পর আগে অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে একটি ক্যাম্পাস গড়ে তোলা হতো। তারপর শুরু করা হতো শিক্ষার্থী ভর্তিসহ অন্য সব শিক্ষা কার্যক্রম। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ওই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে না। অপরিকল্পিত এসব বিশ্ববিদ্যালয় একপর্যায়ে নিজস্ব অবকাঠামোয় কার্যক্রম শুরু করলেও শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চশিক্ষার ন্যূনতম সুযোগসুবিধা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। সূত্র জানায়, গত বছর অনুমোদন পাওয়া চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এক বছরের মাথায় ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর উদ্যোগ নিয়েছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়টিতে এখনো কোনো শিক্ষকই নিয়োগ দেয়া হয়নি। এমনকি কোনো ধরনের জনবল কাঠামোও চ‚ড়ান্ত করা হয়নি। একইভাবে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, চিটাগং মেডিকেল ইউনিভার্সিটি, রাজশাহী মেডিকেল ইউনিভার্সিটি, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট মেডিকেল ইউনিভার্সিটি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও শেখ হাসিনা মেডিকেল ইউনিভার্সিটি খুলনা ওই সবক’টি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানই অপরিকল্পিত উপায়ে গড়ে উঠছে। ন্যূনতম সুবিধা নিশ্চিত না করেই ওসব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সবগুলোতেই উচ্চশিক্ষার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। তার মধ্যে কোনোটিতে অবকাঠামোর ঘাটতি রয়েছে, কোনোটিতে শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে, আবার কোনো কোনোটিতে অবকাঠামো ও শিক্ষক উভয় ক্ষেত্রেই বেশ ঘাটতি রয়েছে। এমনকি নতুন ওই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উলেখযোগ্য সংখ্যকেরই এখনো ক্যাম্পাসের জমি অধিগ্রহণই হয়নি। বিশেষ করে ওই ধরনের সংকট অপেক্ষাকৃত নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় প্রকট। সূত্র আরো জানায়, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ২০০১ সালে আইন পাস হলেও ২০১৫ সালে উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। অনেকটা অগোছালোভাবেই রাঙ্গামাটি শহরের একটি বেসরকারি স্কুলের অবকাঠামো ভাড়া নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি চলতি বছরের জানুয়ারিতে নিজেদের ক্যাম্পাসে কার্যক্রম স্থানান্তর করেছে। আর নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাওয়ার আগেই বিশ্ববিদ্যালয়টির কয়েকটি ব্যাচ গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করে বের হয়ে গেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি নিজস্ব ক্যাম্পাসে স্থানান্তর হলেও এখনো অবকাঠামো সুবিধা খুবই অপ্রতুল। উন্নয়ন কার্যক্রমে তেমন কোনো গতি নেই। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কয়েকটি ভবন নির্মাণ করা হলেও এখনো শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো ধরনের আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হয়নি। এদিকে এ বিষয়ে শিক্ষাবিদদের মতে, ন্যূনতম পরিবেশ গড়ে তোলার আগে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়কেই শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর অনুমোদন দেয়া উচিত নয়। পাবলিক হোক কিংবা প্রাইভেট কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রয়োজনীয় ন্যূনতম অবকাঠামো তৈরির আগে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর কোনো সুযোগ নেই। গ্রন্থাগার ও ল্যাবরেটরির মতো মৌলিক সুবিধা ছাড়া উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার কথা ভাবাও যায় না। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাওয়ার আগেই কয়েকটা ব্যাচ গ্র্যাজুয়েট হয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। অথচ তারা উচ্চশিক্ষার ন্যূনতম সুবিধাও পায়নি। সরকারের উচিত এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও নীতি প্রণয়ন করে তার বাস্তবায়ন করা। অন্যদিকে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর জানান, ন্যূনতম পরিবেশ নিশ্চিত না করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা কোনোভাবেই সমীচীন নয়। যদিও নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রে তা অনুসৃত হচ্ছে না। এটা গুণগত উচ্চশিক্ষার জন্য প্রতিবন্ধক। এ বিষয়ে ভাববার সুযোগ রয়েছে। কমিশন চাইলে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন বন্ধ রাখতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে একটি নীতিনির্ধারণ জরুরি। যদি এখন কোনো নতুন বিশ্ববিদ্যালয়কে কমিশন থেকে অনুমোদন দেয়া না হয়, তাহলে তারা আগের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উদাহরণ টানবে। সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে একটি নীতি তৈরি করলে সবাই তা অনুসরণ করবে।