মীর আবুবকর \ বাংলাদেশের ইতিহাসে ঐতিহাসিক গৌরবোজ্জ্বলের দিন ছিল গতকাল শনিবার। এইদিনে বাংলাদেশ সহ দক্ষিণাঞ্চলের দক্ষিণের দুয়ার খুলেছে। বিশ্ব কোন উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে এত আলোচনার সম্মুখীন হয়নি। সেটি আর কিছু নয় বাঙালির স্বপ্নের পদ্মা সেতু। পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে শুরুতেই সম্ভব-অসম্ভব নিয়ে নানা বিতর্ক ছিল। এখানেই শেষ নয় পদ্মা সেতু নির্মাণের শুরুতেই অনেকেই স্বপ্ন, রূপকথার গল্প, অসম্ভব বলে কথার ফুলঝুরি ছড়াতেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সকল অসম্ভবকে তুচ্ছ করে পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে ইতিহাসের স্বাক্ষর স্থাপন করলেন। লালিত স্বপ্ন কোটি মানুষের প্রত্যাশা স্বপ্নের সেই পদ্মাসেতু প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা নিজেই উদ্বোধন করলেন। পদ্মা সেতু শুধু রড কংক্রিট ইস্পাতের নির্মিত সেতু নয়, পদ্মা সেতু বাঙালির আবেগ উন্নত জীবনের স্বপ্ন উন্নয়নশীল দেশের শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পদ্মা সেতু উদ্বোধন করে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করলেন। বাংলাদেশকে নতুন ভাবে বিশ্বের মাঝে পরিচিত করালেন। পদ্মাসেতুর সুফল পাবে সাতক্ষীরা সহ দক্ষিণ অঞ্চলের ২১ জেলার পাশাপাশি সারা দেশের মানুষ। দক্ষিণাঞ্চলে গড়ে উঠবে শিল্প ও বাণিজ্যিক এলাকা। বদলে যাবে মানুষের জীবনযাত্রার মান। বিশেষ করে বাণিজ্যিক ভাবে সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দরে নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে। সাতক্ষীরার মাছ, কৃষিপণ্য, বিভিন্ন ফল অতি সহজে স্বল্প সময়ে ঢাকাসহ সারাদেশে পৌঁছে যাবে। সাতক্ষীরার পার্শ্ববর্তী এলাকায় গড়ে উঠবে বিভিন্ন শিল্প কলকারখানা। এসকল প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে হাজার হাজার যুবক। বেকারত্ব দূর হয়ে সোনালী দিন দেখবে বহু পরিবার। কৃষক ন্যায্য দামে তার উৎপাদিত পণ্য অতি সহজে বিক্রয় করতে পারবে। পদ্মা সেতুর সুফল সাতক্ষীরার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে। সাতক্ষীরার মানুষের সামগ্রিক জীবন যাত্রার মান পাল্টে যাবে। সারাদেশের ন্যায় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন পদ্মা সেতুর বর্ণিল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান চিরস্মরণীয় রাখতে আনন্দ র্যালি, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আতশবাজি সহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। গতকাল সকালে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিষদ থেকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরের নেতৃত্বে বর্ণাঢ্য আনন্দ র্যালি বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে এসে শেষ করে। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠান ও উপভোগ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম বার, সিভিল সার্জন ডাঃ হোসাইন শাফায়াত, সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর বাসুদেব বসু, সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আমান উলাহ আল হাদী, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মাসরুবা ফেরদৌস, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোশারফ হোসেন মশু, সড়কের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন, অতিঃ জেলা প্রশাসক সার্বিক কাজী আরিফুর রহমান, অতিঃ জেলা প্রশাসক রাজস্ব মোঃ তানজিলুর রহমান, অতিঃ পুলিশ সুপার সজিব খান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ডিডি নুরুল ইসলাম, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল এর নির্বাহী পরিচালক মোঃ শহিদুল ইসলাম, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমা-তুজ-জোহরা, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ রুহুল আমিন, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এসএম আব্দুলাহ আল মামুন, জেলা কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সভাপতি বিশিষ্ট সমাজসেবক আলহাজ্ব ডাঃ আবুল কালাম বাবলা, জেলা সমবায় অফিসার খন্দকার মনিরুল ইসলাম, অতিঃ পুলিশ সুপার কনক কুমার পাল, সদর সার্কেল অতিঃ পুলিশ সুপার মীর আসাদুজ্জামান, সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমরেশ কুমার দাস, বিআরটিএ সহকারী পরিচালক মোঃ ওয়াজেদ হোসেন, বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক গোলাম সাকলাইন, সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা পুলক কুমার চক্রবর্তী, জেলা তথ্য অফিসার মোঃ মোজাম্মেল হক সহ সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা, কর্মচারী, স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে ফেস্টুন ও শান্তির প্রতিক কবুতর উড়িয়ে এই অনুষ্ঠান চিরস্মরণীয় করে রাখেন। এদিকে সন্ধ্যায় শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে আতশবাজির প্রদর্শনী ও সংস্কৃতি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।