সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:৪৮ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
শুল্কমুক্ত সুবিধায় হাজার হাজার টন চাল আমদানিতেও বাজারে প্রভাব পড়েনি বিএনপির মহাসচিবের সঙ্গে ইইউ রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ শীতজনিত রোগীর চাপ রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি হাসপাতালে বাড়ছে সাতক্ষীরা পৌর—মেয়রের বরখাস্তের আদেশ অবৈধ: হাইকোর্ট স্কুল থেকে ফেরার পথে ট্রেনে কাটা পড়ে শিশুর মৃত্যু সম্মেলনকে কেন্দ্র করে কিশোরগঞ্জে দুই পক্ষের সংঘর্ষে বিএনপি নেতা নিহত মোবাইল—ইন্টারনেটে কর প্রত্যাহার না হলে এনবিআর ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি ভারত থেকে এলো ২৭ হাজার মেট্রিক টন চাল টিউলিপের উচিত ক্ষমা চাওয়া: ইউনূস বিজিবি—জনগণ ‘শক্ত অবস্থান’ নেওয়ায় ভারত পিছু হটেছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

পদ্মা সেতু পাড়ি দিলো ট্রেন, পূরণ হলো আরেক স্বপ্ন

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বুধবার, ৫ এপ্রিল, ২০২৩

এফএনএস: দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে গতিময় ও বহুমাত্রিক করতে নির্মিত হয়েছে পদ্মা সেতু। এর মাধ্যমে ঢাকার সঙ্গে যুক্ত হয় দক্ষিণাঞ্চল। সড়ক পথের পাশাপাশি রাজধানীর সঙ্গে এ অঞ্চলকে যুক্ত করতে পরিকল্পনা হয় সেতুতে রেল সংযোগের। সরকারের যে পরিকল্পনাও এখন বাস্তব। স্বপ্নের পদ্মায় উঠলো আশার ট্রেন। গতকল মঙ্গলবার দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর রেল পথে ওঠে ‘ট্রায়াল স্পেশাল ট্রেন’। ঘণ্টায় গড়ে ২৫ কিলোমিটার গতিতে সেতু পথ পাড়ি দেয় ট্রেনটি। এর আগে ভাঙ্গা রেল জংশন থেকে পরীক্ষামূলকভাবে বিশেষ এ ট্রেন যাত্রা শুরু করে দুপুর ১টা ২১ মিনিটে। যাত্রার উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। তার আগে গত সোমবার সৈয়দপুর থেকে সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে ট্রেনটি রাজবাড়ী রেল স্টেশন প্লাটফর্মে আসে। তারপর সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটে স্পেশাল ট্রেনটি রাজবাড়ীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাঙ্গা থেকে মাওয়া পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক এই ট্রেন সফরে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নুরই আলম চৌধুরী লিটন, পানি সম্পদ উপমন্ত্রী একে এম এনামুল হক শামীম, সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ইকবাল হোসেন অপু, সংসদ সদস্য মজিবুর হোসেন চৌধুরী নিক্সন প্রমুখ। রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে এ ট্রেনের যাত্রা শুরু হলো। সেপ্টেম্বরে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা রুটে যাত্রী চলাচল শুরু করবে। প্রধানমন্ত্রী দ্রæতই এ পথের উদ্বোধন করবেন। স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে প্রথম ট্রেন চালিয়েছেন লোকো মাস্টার রবিউল ইসলাম। ইতিহাসের অংশ হয়ে গর্বিত তিনি। বলেন, আমি যখন প্রথম জানতে পারলাম যে প্রথম ট্রেন চালাবো; তখন থেকেই উচ্ছ¡াস কাজ করছে। ইতিহাসের অংশ হতে পারে নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছে। ২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা নদীর ওপর সড়ক সেতুর উদ্বোধন হলেও অপেক্ষা ছিল ট্রেন পথ চালুর। এ রুট পুরোপুরি চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলার সঙ্গে রাজধানীর দূরত্ব কমবে। রেলপথে ঢাকার সঙ্গে খুলনার দূরত্ব ৪৬০ কিলোমিটার। পদ্মা সেতু দিয়ে নতুন রেলপথটি চালু হলে দূরত্ব কমবে ২১২ কিলোমিটার। তখন ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত রেলপথের দূরত্ব হবে ১৬৯ কিলোমিটার। দূরত্ব ও ভোগান্তি কমবে কুষ্টিয়া, দর্শনার সঙ্গেও। অন্যদিকে ফরিদপুর, রাজবাড়ি রুটে নতুন পথে নতুন রেলযাত্রী তৈরি হবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল জেলা দিয়ে যশোরের সঙ্গেও রেল নেটওয়ার্ক যুক্ত হবে। ২০২৪ সালের জুনে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে যশোর পর্যন্ত পুরো রেলপথটি চালুর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ২০৩০ সাল নাগাদ এ রুটে ঢাকা-ভাঙ্গা অংশে প্রতিদিন ১৩ জোড়া ট্রেন চলবে। একইভাবে ভাঙ্গা-কাশিয়ানী অংশে প্রতিদিন সাত জোড়া ও কাশিয়ানী-যশোর অংশে প্রতিদিন চলবে পাঁচ জোড়া ট্রেন। এ সময়ের মধ্যে ঢাকা-ভাঙ্গা অংশে বছরে ৪০ লাখ, ভাঙ্গা-কাশিয়ানী অংশে বছরে ১৭ লাখ ও কাশিয়ানী-যশোর অংশে বছরে সাড়ে ১৩ লাখ যাত্রী পরিবহন করা হবে। ‘ওয়ান-ডিরেকশন’ বা একমুখী চলাচলের ওপর ভিত্তি করে প্রাক্কলনটি তৈরি করেছে সিআরইসি। পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক আফজাল হোসেন কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানান, পুরো প্রকল্পের অগ্রগতি ৭৫ শতাংশের বেশি। একে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ঢাকা থেকে মাওয়া অংশের অগ্রগতির ৭৪ ভাগ; মাওয়া থেকে ভাঙ্গার অগ্রগতি ৯২ ভাগ ও ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত অগ্রগতি ৬৮ শতাংশ। ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটারের অংশে আগামী সেপ্টেম্বর যাত্রীবাহী রেল চলাচলের আশা করছেন প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন। এরই মধ্যে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার রেলপথে লেভেল ক্রসিংবিহীন ৩২টি রেল কালভার্ট, ৩৭টি আন্ডারপাস ও ১৩টি রেল সেতুর কাজ শেষ হয়েছে। চ‚ড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তের রেল স্টেশনসহ নতুন ১৪টি স্টেশন নির্মাণ ও পুরনো ছয়টি স্টেশনের কাজ। প্রসঙ্গত, দেশের দীর্ঘতম সেতু নির্মাণে প্রথমে যে পরিকল্পনা করা হয়, তাতে রেলওয়ে ট্রাক বসানোর বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল না। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর রেল চালুর বিষয়টি যুক্ত করা হয়। সড়ক সেতুর নিচ দিয়ে ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা করায় ঢাকার সঙ্গে যশোর রেললাইন নির্মাণে আলাদা প্রকল্প নেয় রেলওয়ে। এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে চীন। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। রেল সংযোগের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com