মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি \ যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি—২ (মনিরামপুর) এর লাইন নির্মানের নামে কার্যাদেশপ্রাপ্ত তিন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্যের নাট—বোল্ট তারসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি উত্তোলনের পর আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এ তিন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের নামে সরঞ্জামাদি উত্তোলন করে আত্মসাতের নেপথ্যের মূল হোতা হলেন অপর ঠিকাদার মেসার্স মুবিন এন্টারপ্রাইজের মালিক কাজী মনিরুজ্জামান। ফলে কোন উপায়ন্ত না পেয়ে সমিতির পক্ষ থেকে মনিরুজ্জামানসহ অপর তিন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের নামে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আরইবিকে সুপারিশ করা হয়েছে। আর এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি—২ এর জেনারেল ম্যানেজার আবদুল লতিফ। অনুসন্ধানে জানাযায়, মনিরামপুর পৌরশহরে এক সময়ের হোটেল কর্মচারী ছিলেন কাজী মনিরুজ্জামান। পরবর্তিতে তিনি পল্লী বিদ্যুতের বিভিন্ন ঠিকাদারের অধীন শ্রমিকের কাজ করতেন। তিনি ছিলেন আওয়ামী যুবলীগের একজন কমীর্। বিশেষ করে সাবেক স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যে্যর ভাগ্নে উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক উত্তম চক্রবর্তি বাচ্চুর শেল্টারে থাকতেন মনিরুজ্জামান। সেই সুবাদে সমিতির সদর দপ্তরের কতিপয় কর্মকর্তার সাথে ছিল তার বেশ সখ্যতা। এক পর্যায়ে তিনি পল্লী বিদ্যুতের ঠিকাদারী (মেসার্স মুবিন এন্টারপ্রাইজ) লাইসেন্স করেন। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। সমিতির তৎকালিন কর্তাব্যক্তিদের ম্যানেজ করে দুর্নীতির মাধ্যমে রাতারাতি কোটিপতি বনে যান তিনি। তবে তার সব অপকর্মের বিরুদ্ধে তদন্ত হওয়ায় এবার ফেসে যাচ্ছেন পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির কোটি কোটি টাকার মালামাল আত্মসাতের অভিযোগে। আর এসব অপকর্মে সহায়তা করতে যশোর পবিস—২ এ রয়েছে মনিরের একটি সংঘবদ্ধ চক্র। তাদের বিরুদ্ধেও রয়েছে গুরুতর অভিযোগ। ঠিকাদার কাজী মনিরুজ্জামানের অধিন ২০২২—২০২৩ অর্থ বছরে মেসার্স মুবিন এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স আব্দুল্লাহ এন্টারপ্রাইজ(মাগুরা), মেসার্স মারিয়ান এন্টারপ্রাইজ(জিবননগর) ও মেসার্স এমবি পাওয়ার(ঢাকা) নামের চারটি প্রতিষ্ঠানের নামে লাইন নির্মানের জন্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা মূল্যের নাট, বোল্ড, তারসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি বরাদ্দ দিয়ে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এর মধ্যে মরিয়ান এন্টারপ্রাইজ, এমবি পাওয়ার ও আব্দুল্লাহ এন্টার প্রাইজের প্রতিনিধি করা হয় মনিরুজ্জামান ও তার অপর দুই সহযোগী মেসার্স আনজুমান কর্পোরেশনের সাইফুল ইসলাম ও এস এস এন্টারপ্রাইজের মেহেদী হাসান টুটুলকে। নিয়মানুযায়ী কার্যাদেশ পাবার অনধিক ছয় মাসের মধ্যে কাজ সম্পন্নের পর কার্যাদেশের ক্লোজআউট করার কথা। কিন্তু প্রায় তিন বছর পার হতে চললেও লাইন নির্মান না করে কাজী মনিরুজ্জামান তার সহযোগীদের সহয়তায় সমিতির সরঞ্জামাদি উত্তোলন করে আত্মসাত করেন। সমিতির ডিজিএম(টেকনিক্যাল) শরীফ লেহাজ আলী জানান, অনেক চাপাচাপির পর গত ৪ ডিসেম্বর শুধুমাত্র মনিরুজ্জামান তার নিজের লাইসেন্স(মেসার্স মুবিন এন্টারপ্রাইজ)এর নামে বরাদ্দকৃত টাকার সরঞ্জামাদি ফেরত দিয়ে ক্লোজআউট করেন। কিন্তু অন্য তিনটি লাইসেন্স মেসার্স মারিয়ান এন্টারপ্রাইজের নামে ৮৩ লাখ ২২ হাজার ৬৯০ টাকা, মেসার্স এমবি পাওয়ারের নামে ৭৯ লাখ তিন হাজার ৮৩৫ টাকা এবং মেসার্স আব্দুল্লাহ এন্টারপ্রাইজের নামে ৩১ লাখ ৯৪ হাজার ৭৪৭ টাকার সরঞ্জামাদি সমিতিতে ফেরত না দিয়ে মনিরুজ্জামান তাল বাহানা করছেন। মেসার্স মারিয়ান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী চুয়াডাঙ্গা জেলার জিবননগরের হাবিবুর রহমান জানান, তার লাইসেন্সটির প্রতিনিধি নিযুক্ত করা হয় মুবিন এন্টারপ্রাইজের মনিরুজ্জামানকে। ফলে মারিয়ান এন্টারপ্রাইজের নামে বরাদ্দকৃত টাকার সরঞ্জামাদি উত্তোলন করেন মনিরুজ্জামান। এর বেশি তিনি কিছুই জানেননা বলে দাবি করেন। অন্যদিকে মেসার্স এমবি পাওয়ারের স্বত্বাধিকারী বাধন কানাই সাহা ও মেসার্স আব্দুল্লাহ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী হাফিজুর রহমান জানান, তাদের লাইসেন্সের প্রতিনিধি করা হয় মনিরুজ্জামানের সহযোগী মেসার্স আনজুমান কর্পোরেশনের সাইফুল ইসলাম ও এস এস এন্টারপ্রাইজের মেহেদী হাসান টুটুলকে। ফলে মেসার্স মুবিন এন্টারপ্রাইজের কাজী মনিরুজ্জামান তার সহযেগীদের সহায়তায় সরাঞ্জামাদি উত্তোলন করে আত্মসাত করেন। মেসার্স আব্দুল্লাহ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী হাফিজুর রহমান অভিযোগ করেন, সরাঞ্জামাদি জমা দিয়ে তাদের লাইসেন্স দুইটি ক্লোজ আউট করতে চাপ প্রয়োগ করায় মনিরুজ্জামান ও তার সহযোগীরা তাকে সমিতির সদর দপ্তরে না আসার জন্য হুমকি প্রদর্শন করেন। তবে মারিয়ানের প্রতিনিধি মেহেদী হাসান টুটুল অভিযোগ করেন, দলিয় প্রভাব বিস্তার করে তার কাছ থেকে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নিয়ে মনিরুজ্জামান সকল সরঞ্জামাদি সমিতি থেকে উত্তোলন করে আত্মসাত করেন। এসব অনিয়ম ও দূনীর্তির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ পল্লীবিদ্যুতায়ন বোর্ডের(আরইবি) তদন্তে সকল অভিযোগের সত্যতা মিলেছে বলে নিশ্চিত করে যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি—২ এর জেনারেল ম্যানেজার আবদুল লতিফ জানান, ইতিমধ্যে মনিরুজ্জামানসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আরইবিকে অবহিত করা হয়েছে। তিনি জানান আশা করা হচ্ছে দোষিদের বিরুদ্ধে অচিরেই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবে আরইবি কতৃর্পক্ষ। আর এ সব অপকর্মের হোতা মুবিন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী কাজী মনিরুজ্জামান জানান, তিনটি লাইসেন্সের সমুদয় টাকার(মোট এক কোটি ৯৪ লাখ ২১ হাজার ২৭২ টাকা) সরঞ্জামাদি অচিরেই ফেরত দিয়ে ক্লোজ আউট করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।