পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি \ খুলনার পাইকগাছায় আষাঢ় মাস থেকে শ্রাবণের মাঝামাঝি পর্যন্ত বৃষ্টির তেমন দেখা মেলেনি। ফলে অনেকটা খরা দেখা দেয় বীজতলা নির্মানে। পানির সংকটে অনেক কৃষকের চারা বীজতলাতেই নষ্ট হয়ে গেছে। তবে কেউ কেউ বাড়তি খরচ করে শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে সেচ দিয়ে আমনের চারা রোপণ করেছেন। প্রচণ্ড খরার পার শ্রাবণের শেষ সপ্তাহে আবহাওয়া কিছুটা অনুকূলে রয়েছে। গত কয়েক দিনের বৃষ্টির পানি পেয়েই রোপা আমন চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। তবে শেষ সময়ে পানির অভাব কিছুটা নিরসন হলেও ধান রোপণের জন্য শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ১৭ হাজার ২৫৩ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার মধ্যে হরিঢালী ইউনিয়নে ৮০০ হেক্টর, কপিলমুনি ইউনিয়নে ১ হাজার হেক্টর, লতা ইউনিয়নে ৯০০ হেক্টর, দেলুটি ইউনিয়নে ৪০০ হেক্টর, সোলাদানা ইউনিয়নে ৯০০ হেক্টর, লস্কর ইউনিয়নে ১ হাজার ২০০ হেক্টর, রাড়ুলী ইউনিয়নে ১ হাজার হেক্টর, গদাইপুর ইউনিয়নে ৭০০ হেক্টর, চাঁদখালী ইউনিয়নে ২ হাজার ২০০ হেক্টর ও গড়ইখালী ইউনিয়নে ২ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। তবে সময়মতো পানি না পাওয়ায় ধানের বীজতলা তেমন ভালো হয়নি। তাই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহতের শঙ্কা করছে স্থানীয় কৃষি অফিস। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে দেখা গেছে, কৃষকেরা বৃষ্টির পানিতে জমি চাষ শুরু করেছেন। কেউ কেউ বীজতলা থেকে ধানের চারা তুলছেন। আবার কেউ জমিতে চারা রোপণ করছেন। গদাইপুর ইউনিয়নের কৃষক লিপটন সরদার বলেন, এ বছর খরার কারণে বীজতলা ভালো হয়নি। পানির অভাবে সময়মতো ধান লাগাতে পারিনি। ধানের চারার বয়স হয়ে গেছে। বর্তমানে একটু বৃষ্টি হচ্ছে, সেই পানি দিয়ে চাষ দিয়ে রোপণ করছেন। ধান রোপণে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকেরা ধান রোপণ শুরু করেন। সে কারণে শ্রমিক -সংকট দেখা দিয়েছে। অতিরিক্ত টাকায় ধান রোপণের শ্রমিক নিতে হচ্ছে। গত বছর যেখানে ৫০০ টাকায় শ্রমিক পেয়েছেন, এ বছর ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা দিতে হচ্ছে। হরিঢালী ইউনিয়নের কৃষক আবুল কাশেম বলেন, তিনি এ বছর পাঁচ বিঘা জমিতে ধান রোপণ করছেন। খরায় বা বৃষ্টি না হওয়ার কারণে ধানের বীজতলার চারা ভালো হয়নি। রোদের কারণে বীজতলার চারা মারা গেছে। পরে আবার চারা তৈরি করেছেন। সেই চারা রোপণ করছেন। একটু বৃষ্টি হওয়ায় এলাকায় একসঙ্গে ধান রোপণ শুরু হওয়ায় শ্রমিক-সংকট দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিকেরা চুক্তিতে এসেও কাজ করছেন। বিঘা প্রতি ধানের চারা রোপণে তাঁরা ১ হাজার ৭০০ টাকা মজুরি পান। রাড়ুলী ইউনিয়নের কৃষক আ. রহিম বলেন, আষাঢ় মাসের বৃষ্টিতে রোপা আমনের চারা রোপণের সময়। এ বছর আষাঢ়ে বৃষ্টি কম হয়েছে। শ্রাবণ মাসের শুরুতে রোপা আমনের চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। কিন্তু এ বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় একটু দেরি হয়ে গেছে। ধান কাটার পর একই জমিতে সরিষা ও গম চাষ করেন। কিন্তু দেরিতে ধান রোপণের কারণে সরিষা চাষ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ডল্টন রায় বলেন, এ বছর বৃষ্টি খুব কম হওয়ায় কৃষক অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। উপজেলায় উঁচু জমিতে যে আমন চাষ হয় সে জমিতে সঠিকভাবে কৃষক চাষ করতে পরেননি। উঁচু জমিতে তাঁরা দুবার ফসল চাষ করেন। কিন্তু এ বছর চাষাবাদ দেরিতে হওয়ায় রবি ফসল নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে এ বছর ১৭ হাজার ২৫৩ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সংশয় রয়েছেন। শ্রাবণের শেষের দিকে একটু বৃষ্টর কারণে কৃষকেরা একবারে ধান রোপণ শুরু করেছেন। সে কারণে শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। তারপরেও এ সপ্তাহে অধিকাংশ জমি রোপণ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এসব আধুনিক আমন ধান চাষ করে সেচ ছাড়া ও কম সার ব্যবহার করে বাম্পার ফলন পাওয়া সম্ভব। এ ছাড়া কৃষকদের পরামর্শ দিতে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন। আর সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে পারলে বিঘাপ্রতি ৩০ মণ পর্যন্ত ধান পাওয়া সম্ভব। প্রচণ্ড খরার পর শ্রাবণের শেষ সপ্তাহে আবহাওয়া কিছুটা অনুকূলে রয়েছে। কয়েক দিনের বৃষ্টির পানি পেয়ে পাইকগাছার কৃষকেরা একযোগে রোপা আমন রোপণ শুরু করেছেন। ফলে শ্রমিক-সংকট দেখা দিয়েছে। শ্রমিকদের অতিরিক্ত টাকা দিতে হচ্ছে।