স্পোর্টস ডেস্ক ॥ উইকেট, প্রতিপক্ষ বিবেচনায় লক্ষ্য ছিল বড়। ছিল রেকর্ড গড়ার চ্যালেঞ্জ। শতরানের উদ্বোধনী জুটিতে দলকে পথ দেখালেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান। রেহমাত শাহ ও হাশমাতউল্লাহ শাহিদি খেললেন দায়িত্বশীল ইনিংস। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের পর এবার পাকিস্তানকে হারিয়ে বিশ্বকাপে আরেকটি চমক দেখাল আফগানিস্তান। চেন্নাইয়ে সোমবার পাকিস্তানের বিপক্ষে আফগানিস্তানের জয় ৮ উইকেটে। ২৮৩ রানের লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলে তারা ৬ বল হাতে রেখে। ওয়ানডেতে আফগানদের সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড এটি। এর আগে সর্বোচ্চ ২৭৪ রানের লক্ষ্য তাড়ায় জিতেছিল সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে, ২০১৪ সালে। পাকিস্তানের বিপক্ষে আফগানিস্তান দুটি টি-টোয়েন্টি জিতলেও ওয়ানডে সংস্করণে প্রথম জয় এটিই। দুই দলের আগের সাত ম্যাচে জিতেছিল পাকিস্তান। আফগান ক্রিকেটের উন্নতির চিত্র ফুটে ওঠে আরেকটি পরিসংখ্যানে। বিশ্বকাপে তাদের প্রথম দুই আসর মিলে ১৫ ম্যাচে জয় ছিল স্রেফ একটি। সেখানে চলতি আসরে ৫ ম্যাচেই জয় হলো দুটি। সেই দুটি আবার বর্তমান ও সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে! আসরে প্রথম দুই ম্যাচে জয়ের পর টানা তিনটি হেরে সেমি-ফাইনালের স্বপ্নে বড় ধাক্কা খেল পাকিস্তান। আফগানিস্তানের এবারের জয়ে ব্যাটিংয়ে সবচেয়ে ব্ড় অবদান ইব্রাহিমের। আসরে আগের চার ম্যাচে ভালো করতে পারেননি তিনি। এবার ১১৩ বলে ১০ চারে ৮৭ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচের সেরা ২১ বছর বয়সী এই ওপেনার। গুরবাজ ৫৩ বলে ৯ চার ও এক ছক্কায় খেলেন ৬৫ রানের ঝড়ো ইনিংস। ইব্রাহিমের সঙ্গে তার শুরুর জুটি ১৩০ রানের। বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের এর চেয়ে বড় জুটি আছে আর একটিই- গত আসরে লিডসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে রেহমাত ও ইকরাম আলিখিলের দ্বিতীয় উইকেট জুটির ১৩৩ রান। রেহমাত দলের জয় নিয়ে ফেরেন ৮৪ বলে ৭৭ রানের ইনিংসে। যেখানে ৫টি চারের পাশে ছক্কা ২টি। অধিনায়ক শাহিদি অপরাজিত থাকেন ৪৫ বলে ৪৮ রান করে। স্পিন সহায়ক উইকেটে এ দিন দারুণ বোলিং করেন আফগান স্পিনাররাও। বিশ্বকাপ অভিষেকে ৪৯ রানে ৩ উইকেট নিয়ে তাদের সফলতম বোলার বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার নুর আহমাদ। পাকিস্তানকে আড়াইশ ছাড়ানো পুঁজি এনে দেওয়ার পথে ফিফটি করেন আবদুল্লাহ শাফিক ও বাবর আজম। শাদাব খান ও ইফতিখার আহমেদ খেলেন ঝড়ো ইনিংস। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শাফিক ও ইমাম-উল-হাকের ব্যাটে ভালো শুরু পায় পাকিস্তান। পাওয়ার প্লেতে আসে বিনা উইকেটে ৫৬ রান। এরপরই ইমামকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন আজমাতউল্লাহ ওমারজাই। দ্বিতীয় উইকেটে বাবরের সঙ্গে আরেকটি পঞ্চাশোর্ধ (৫৪) জুটিতে দলকে এগিয়ে নেন শাফিক। ফিফটির পর আর ইনিংস টেনে নিতে পারেননি তিনি (৭৫ বলে ৫৮)। মোহাম্মদ রিজওয়ান টিকতে পারেননি। সাউদ শাকিল ভালো শুরুকে টেনে নিতে পারেননি (৩৪ বলে ২৫)। ৬৯ বলে ফিফটি করে এগিয়ে যাচ্ছিলেন বাবর। তার ৯২ বলে ৭৪ রানের ইনিংস থামান নুর। এরপর ৪৫ বলে ৭৩ রানের বিস্ফোরক জুটিতে পাকিস্তানকে আড়াইশ ছাড়িয়ে নিয়ে যান শাদাব ও ইফতিখার। রান তাড়ার শুরুতেই উইকেটের সঙ্গী গুরবাজকে (২৭ ইনিংস) ছাড়িয়ে ওয়ানডেতে আফগানিস্তানের হয়ে দ্রুততম এক হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন ইব্রাহিম (২৪ ইনিংস)। দারুণ ব্যাটিংয়ে দুজন দলকে এগিয়ে নেন ঐতিহাসিক জয়ের পথে। পাওয়ার প্লেতে আসে ৬০ রান। ইব্রাহিম ফিফটি করেন ৫৪ বলে, গুরবাজের লাগে কেবল ৩৮ বল। দ্বিতীয় স্পেলে আক্রমণে ফিরে বিপজ্জনক গুরবাজকে ফিরিয়ে বড় জুটি ভাঙেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। ইব্রাহিম এরপর ৬০ রানের জুটি গড়েন রেহমাতের সঙ্গে। আফগানিস্তানও জয়ের পথে এগিয়ে যায় অনেকটা। ইব্রাহিমের শতকটাই শুধু হয়নি। তাকে থামান হাসান আলি। রেহমাত ও শাহিদি এরপর ৯৬ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে দলের স্মরণীয় জয় সঙ্গে নিয়ে ফেরেন। সংক্ষিপ্ত স্কোর: পাকিস্তান: ৫০ ওভারে ২৮২/৭ (শাফিক ৫৮, ইমাম ১৭, বাবর ৭৪, রিজওয়ান ৮, শাকিল ২৫, শাদাব ৪০, ইফতিখার ৪০, আফ্রিদি ৩*; নাভিন ৭-০-৫২-২, মুজিব ৮-০-৫৫-০, নাবি ১০-০-৩১-১, ওমারজাই ৫-০-৫০-১, রাশিদ ১০-০-৪১-০, নুর ১০-০-৪৯-৩)। আফগানিস্তান: ৪৯ ওভারে ২৮৬/২ (গুরবাজ ৬৫, ইব্রাহিম ৮৭, রেহমাত ৭৭*, শাহিদি ৪৮*; আফ্রিদি ১০-০-৫৮-১, হাসান ১০-১-৪৪-১, রউফ ৮-১-৫৩-০, উসামা ৮-০-৫৫-০, শাদাব ৮-০-৪৯-০, ইফতিখার ৫-০-২৭-০)। ফল: আফগানিস্তান ৮ উইকেটে জয়ী, ম্যান অব দা ম্যাচ: ইব্রাহিম জাদরান।