মাছুদুর জামান সুমন \ প্রকৃতির সাথে মিশে থাকা আর পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী পাখি মানবজীবনের জন্য অতি অপরিহার্য প্রাণি। আমাদের দেশের বাস্তবতায় বিভিন্ন জাতের পাখির অস্তিত্ব প্রবাহমান। দেশীয় পাখি পরিবেশকে সমুন্নত রাখার পাশাপাশি ফসল উৎপাদনের ক্ষতিকর পোকামাকড়, কীট পতঙ্গ নির্মুলে পাখি অনবদ্য এবং অসামান্য ভূমিকা রেখে চলেছে যা আবহমানকাল যাবৎ স্বীকৃত। দেশীয় হরেক রকম পাখি মানব সমাজের কাছাকাছি এক কথায় বলা যায় বসত ঘরে অবস্থান করে। বিশেষ করে চড়–ই পাখি নাগালের মাঝে বসবাস করে। বাবুই পাখির শৈল্পিক কর্মযজ্ঞ আর সৌন্দর্য সচেতনতার কথা বিশ্ব স্বীকৃত। দেশী পাখির কথাই শেষ নয়। আমাদের দেশের আবহাওয়া, নদী নালায় খাল বিলে প্রতি বছর এই সময়ে অর্থাৎ শীতের সময় গুলোতে বিশ্বের বহুবিধ শীত প্রধান দেশ হতে ঝাকে ঝাকে লাখে লাখে পাখি আসে। নদী মাতৃক বাংলাদেশ আর প্রকৃতির শুভ্র সুন্দর অনন্য অসাধারন সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে আশ্রয় গ্রহন করে অতিথি পাখিরা। দেশের হাওড়, বাওড় এলাকার সুবিন্যাস্ত এলাকাগুলোতেও অগনিত অতিথি পাখির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশের প্রকৃতি, আবহাওয়া এবং ভূ-খন্ড অতিথি পাখিরা ভালবেসে আশ্রয় গ্রহন করে বিধায় আমাদের অবশ্যই কর্তব্য অতিথি পাখিদের আশ্রয়কে মজবুত ও শক্তিশালী করা। কোন অবস্থাতেই অতিথি পাখির প্রতি নির্দয় না হওয়াটাই মানবিকতা। কিন্তু বাস্তবতা হলো আমাদের দেশের এক শ্রেনির তথাকথিত সৌখিন শিকারীরা তাদের নির্মমতা প্রদর্শন পরবর্তি অতিথি পাখি নিধন করে অথবা নিধনের চেষ্টা করে। বন্যপ্রাণি নিধন প্রতিরোধ আইনে পাখি নিধন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য ফৌজদারী অপরাধ। আর তাই পাখি নিধনকারীদের বিরুদ্ধে আইনের যথাযথ প্রয়োগ ঘটানোর বিকল্প নেই। তথ্যানুসন্ধানে জানাযায় পাখি শিকারের মাধ্যমে কোন কোন শিকারী অতিথি আপ্যায়ন করে। অতিথি পাখির পাশাপাশি আমাদের দেশীয় বিভিন্ন প্রকারের পাখি নিধন চলছে আর এ ক্ষেত্রে নেট জাল বিছিয়ে হাসকল মেশিন এবং বিশ ট্যাবলেটের মাধ্যমে বক, ঘুঘু, হাসপাপড়া, বাটান, মদনটাক সহ বিভিন্ন প্রকারের দেশীয় পাখি নিধন উৎসব চলছে। সাতক্ষীরা জেলার বাস্তবতায় ফাকা নদী এলাকা এবং ঘের গুলোতে উলেখিত পদ্ধতিতে পাখি শিকার করা হচ্ছে। প্রকৃতির সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক, মাটির শক্তিবৃদ্ধি তথা কীটপতঙ্গের শত্র“ বিবেচিত ব্যাঙ হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম ঘটেছে। সা¤প্রতিক বছরগুলোতে বর্ষার মৌসুমে কেবল ব্যাঙের অস্তিত্ব দেখা যায়। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় ব্যাঙ নিধন রোধ করতে হবে। মাটির তলায় বসবাসকারী কুচে ও প্রকৃতির বন্ধু। সাতক্ষীরার হাজার হাজার বিঘা চিংড়ী ঘেরের তলদেশে কুচের অবস্থান, ঘের ছেচা মারার পর এক শ্রেনির শিকারীরা নরম মাটি আচড়িয়ে কুচে ধৃত করে যা প্রকৃতির জন্য ক্ষতিকর। সাপ, শিয়াল, বেজি, খাটাশ সহ এই জাতীয় প্রাণির অস্তিত্ব দিনে দিনে হ্রাস হচ্ছে। সাতক্ষীরার সবুজ শ্যামল প্রকৃতির জন্য দুঃখ আর বেদনা ভর করছে। চির সবুজ আর প্রকৃতির কাছাকাছি অবস্থান করা সাতক্ষীরায় সব ধরনের পাখি, ব্যাঙ, কুচে, নিধন বন্ধ হোক, প্রকৃতির অপরাপর শক্তি বেঁচে থাকুক।