সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৬:০৬ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
শুল্কমুক্ত সুবিধায় হাজার হাজার টন চাল আমদানিতেও বাজারে প্রভাব পড়েনি বিএনপির মহাসচিবের সঙ্গে ইইউ রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ শীতজনিত রোগীর চাপ রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি হাসপাতালে বাড়ছে সাতক্ষীরা পৌর—মেয়রের বরখাস্তের আদেশ অবৈধ: হাইকোর্ট স্কুল থেকে ফেরার পথে ট্রেনে কাটা পড়ে শিশুর মৃত্যু সম্মেলনকে কেন্দ্র করে কিশোরগঞ্জে দুই পক্ষের সংঘর্ষে বিএনপি নেতা নিহত মোবাইল—ইন্টারনেটে কর প্রত্যাহার না হলে এনবিআর ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি ভারত থেকে এলো ২৭ হাজার মেট্রিক টন চাল টিউলিপের উচিত ক্ষমা চাওয়া: ইউনূস বিজিবি—জনগণ ‘শক্ত অবস্থান’ নেওয়ায় ভারত পিছু হটেছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

পান চাষে উৎসাহ হারাচ্ছে খুলনা দিঘলিয়ার কৃষকরা

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৩

আলমগীর হোসেন দিঘলিয়া থেকে ॥ দিঘলিয়ার পান চাষিদের নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব ও নানা উপকরণের মূল্য বৃদ্ধিতে পান চাষের প্রতি উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে। অনেক কৃষক পান চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলায় অন্যান্য অর্থকরী ফসলের চাষের পাশাপাশি ব্যাপক পান চাষ হয়ে থাকে। একসময় দিঘলিয়ার পান যশোর খুলনা পান চাষি সমিতি গঠন হয়েছিল দিঘলিয়া পান চাষিদের পান চাষ ও সমিতির মাধ্যমে দেশ বিদেশে পান রপ্তানির উদ্দেশ্যে। অথচ এই খাতকে অবহেলা করা হয়েছে প্রথম থেকেই। সনাতন নিয়ম ছেড়ে আধুনিক জ্ঞানের আলোয় গবেষণা ভিত্তিক পান চাষ করে ১ বিঘা জমি থেকে বছরে ২/৩ লাখ টাকা আয় করা যায়। কিন্তু পুরাতন পদ্ধতিতে পান চাষ করার কারণে চাষীদের গরীব থেকে আরও গরীব হওয়া ছাড়া আর কিছু অবশিষ্ট থাকে না। দিঘলিয়ার পান দেশ-বিদেশে সুনাম ও চাহিদা থাকলেও পান চাষিদের প্রতি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা জিরোর কোঠায়। পান চাষের ইতিহাস থেকে জানা যায়, মালয়েশিয়াতে পৃথিবীর প্রথম পান চাষের সূচনা হয়। এরপরই পানের চাষ শুরু করা হয় ভারতবর্ষে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে কৃষকদের মাঝে বারুই শ্রেণি (পান চাষী) ছিলো সবচেয়ে বেশি ধনী। ১৮৭২ এবং ১৮৮১ সালের আদমশুমারিতে দেখা যায় যে, সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পান উৎপাদনকারী বারুই বসবাস করত ভারতের বর্ধমান ও মেদিনীপুর জেলায় এবং বাংলাদেশের যশোর ও ঢাকা জেলায়। বাংলাদেশে ঐতিহ্যগতভাবে সামাজিক রীতি, ভদ্রতা এবং আচার-আচরণের অংশ হিসেবেই পানের ব্যবহার চলে আসছে। বড় বড় সামাজিক অনুষ্ঠানাদিতে, বিভিন্ন উৎসব, পূজা পর্বনে পান পরিবেশন ছিল অবিচ্ছেদ্য অংশ।প্রাচীন কাল থেকে খুলনার দিঘলিয়া উপজেলা পান চাষের জন্য বেশ প্রসিদ্ধ। এ অঞ্চলের পানের চাহিদা মিটিয়ে এ পান পৌঁছে যায় রাজধানী শহরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। দিঘলিয়ার পান বাংলাদেশের বাইরেও রপ্তানি হয়ে থাকে। ভৌগলিক ও আবহাওয়া জনিত কারণে এ উপজেলা পান চাষের জন্য একটি উপযোগী এলাকা কিন্তু আশংকাজনক হারে দিন দিন পান চাষীদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। উপজেলার দেয়াড়া, দিঘলিয়া, বারাকপুর, লাখোহাটি, কামারগাতি, নন্দনপ্রতাপ, আড়ুয়া, মোমিনপুরসহ গাজীরহাটের শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পান চাষের সাথে জড়িত। এ ছাড়া উপজেলার অন্য গ্রামগুলোতে এখনও কম বেশি পান চাষ হয়ে থাকে। যা আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। দিঘলিয়ার পান চাষী স্বপনের সাথে কথা বলে জানা যায়, লেবার খরচ ও কাঁচা মাল বাঁশ,খইল,খড়, সার, কীটনাশকসহ যে সকল মালামাল পান চাষের জন্য প্রয়োজন সে গুলোর মূল্য বৃদ্ধির কারণে পান চাষে খরচ বেশী হওয়ায় লাভ না হওয়ায় পান চাষিরা পান চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এ বছর তিনি ৮ কাঠা জমির বরজ উঠিয়ে সেখানে ডাটা চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করছেন। আগামীতে এ জমিতে হাইব্রিড পানের চাষ করার ইচ্ছে পোষন করছেন। ফরমাইশখানা ও দেয়াড়া গ্রামের অনেক পানচাষী পানচাষ ছেড়ে দিয়ে অন্য কৃষি পণ্য চাষাবাদ করছেন। অনেকে আবার তাদের বাপ দাদার পুরাতন চাষ ছাড়তে চান না। কারণ তারা বাপ দাদার আমল থেকে পান চাষ করে আসছেন। ভালো উৎসাহ ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তারা পানচাষ করতে চান। কিন্তু পান চাষের খরচ বৃদ্ধির কারণে তারা দিন দিন পান চাষে উৎসাহ হারাচ্ছেন। সরকারের সুদৃষ্টিই (পৃষ্ঠপোষকতা ও ঋণ) পারে তাদেরকে এ পেশায় ধরে রাখতে। দিঘলিয়ার বারাকপুর গ্রামের কৃষক হান্নান গাজী জানান, ভোর থেকে সকাল ১২ টা পর্যন্ত পান ভাঙতে খাওয়া দাওয়াসহ একজন শ্রমিককে খরচ দিতে হয় ৬০০ টাকা। এখন অবস্থা এমন পান ভেঙে বিক্রি করে তাতে শ্রমিকের পয়সা হয় না। পানচাষী ইদ্রিস মোল্লা জানান, নানা দুর্যোগের কারণে দেশের অন্য এলাকা থেকে পাইকাররা এলাকায় কম আসছেন। আবার এলাকার ছোট দোকানগুলো সীমিত আকারে কেনাবেচা চলছে। এতে করে পানের বেচাকেনা কম হচ্ছে। উপজেলার দিঘলিয়া গ্রামের পানচাষি মনোস কুমার দাস বলেন, এক বিঘার পান বরজে (পান বাগান) বছরে পান উৎপাদনে রক্ষণাবেক্ষণ ও শ্রমিকের খরচ পড়ে আনুমানিক ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার মতো। পানের দাম বর্তমানে একটু ভালো। এ বাজার দর ঠিক থাকলে পান চাষিরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবেন। এর আগে পান বিক্রি করে সেই টাকা উঠানো মুশকিল হচ্ছিল। প্রাকৃতিক দূর্যোগ, রোগবালাই না হলে সকল প্রতিকূলতা পুষিয়ে পান চাষিরা অর্থনৈতিকভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবেন। উপজেলার পান চাষীরা আরও জানান, তারা ভালো উৎসাহ ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন। তাঁরা স্থানীয় কৃষি দপ্তর থেকে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পান না। গতবার প্রাকৃতিক দূর্যোগে উপজেলার অনেক পান বরজের ক্ষয়ক্ষতি হয়,স্থানীয় প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের তালিকা নিয়ে যায়, কিন্তু প্রকৃত পান চাষীরা সরকারের পক্ষ থেকে কোন সাহায্য সহযোগিতা পাননি। এখানে পানের বাজারজাত করার ব্যবস্থা খুবই খারাপ। স্থানীয় বারাকপুর বাজার/সন্যাসী বাজারে এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় পানের হাট বসে। যে হাট এর আগে খুলনা শহরের দৌলতপুরে বসত। যেখানে দূর দুরান্ত থেকে আসা পান চাষী ও পানের ব্যাপারীদের থাকা-খাওয়া, যোগাযোগ সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা সুবিধাজনক ছিল। কৃষিভিত্তিক প্রয়োজনীয় ঋণ সুবিধা ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দিঘলিয়ায় পান চাষ বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি এ অঞ্চলের পান বিদেশে রপ্তানি করে জাতীয় অর্থনীতিতেও অবদান রাখা সম্ভব হবে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ কিশোর আহমেদ জানান, পান একটি অর্থকরী ফসল। দিঘলিয়া উপজেলায় এখনও অনেক পান চাষ হয়, এই পানের মান বেশ ভালো, এ অঞ্চলের পান বিদেশেও রপ্তানি হয়। আমরা নিয়মিত কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও চাষে উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছি। গতবছর আমরা প্রায় ২০০ জন কৃষককে পান চাষের উপর উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান করি। আশার বিষয় হচ্ছে দিঘলিয়া উপজেলায় নতুন করে বেশ কিছু আধুনিক পানের বরজ হয়েছে এবং বর্তমানে প্রায় ৩০০ হেক্টর জমিতে পান চাষ হচ্ছে। বর্তমানে এলাকার কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে পানের ছোট দোকানগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পানচাষিদের ওপর একটু হলেও প্রভাব পড়েছে। তবে এ অবস্থা কাটিয়ে উঠলে আবার সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে বিজ্ঞমহলের অভিমত।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com