এফএনএস: পুলিশকে অবহেলা করে দেশ গড়া যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে বৈঠকের তথ্য জানানো হয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে পুলিশের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন অধ্যাপক ইউনূস। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আইন না থাকলে সরকার, গণতন্ত্র, নাগরিক অধিকার কিছুই থাকবে না। আর পুলিশকে অবহেলা করে দেশ গড়া যাবে না। আইন যদি সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারি, শৃঙ্খলা যদি প্রতিষ্ঠিত করতে পারি, তাহলে সব যুদ্ধে জয়ী হওয়া সম্ভব। অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে বেশি সময় নেই জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আমরা এরইমধ্যে সাত মাস পার করে এসেছি। আমরা বলেছি, ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। কাজেই এর মধ্যেই আমাদের যে সামর্থ্য রয়েছে, যা যা সংস্কারের প্রয়োজন সেগুলো করতে হবে। কারো জন্য অপেক্ষায় থাকলে আমাদের কোনো লাভ হবে না। সংস্কার করতে হবে এবং সেটি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নির্বাচনের সময়ে অনেক চাপ আসবে, সে সময়ে পুলিশ বাহিনীকে শক্ত থাকতে হবে বলে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, পুলিশকে এখন দেখলে মানুষ ভয় পায়। পুলিশ হবে বন্ধু। পুলিশ হবে আশ্রয়দাতা। এই ইমেজ প্রতিষ্ঠা করতে পারলে অতীতের সব কথা মানুষ ভুলে যাবে। তিনি বলেন, কাজেই এটা নিয়ে কান্নাকাটি করে লাভ নাই। কারণ সেই ১৬ বছরের ইতিহাস আমরা বদলাতে পারবো না। ১৬ বছরে কালিমা সারা গায়ে মাখা আছে। রাতারাতি আমি পাল্টাতে পারবো না। প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, মানুষ হিসেবে নিজেকে পাল্টাতে পারি, ভাবমূর্তি নতুন আমি তৈরি করতে পারি। যেই সরকার তোমাদের নিয়ে কাজ করছে, সেই সরকারের ইচ্ছা সেই ভাবমূর্তি নিয়ে ফিরে আসো। যাতে করে মানুষ দেখে বলে, শুধু পুলিশ বাহিনী না, নতুন বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী। দেখলে যেন মনে হয়, এই পুলিশ নতুন বাংলাদেশের পুলিশ। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নারীদেরকে আমাদের সুরক্ষা দিতে হবে। এটা অনেক বড় কাজ। আমাদের অবহেলার কারণে সমাজে এটা দ্রুত বিস্তার লাভ করেছে। আমাদের দেশের অর্ধেক মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। তাদের প্রতি দৃষ্টি দেওয়ার কেউ নাই। রাস্তাঘাটে চলতে ভয় পায়। এটা কোন ধরনের কথা! তাদের নিরাপত্তা দেওয়া পুলিশের আইনি দায়িত্ব। নিজ নিজ এলাকায় সেটি করতে হবে। কোথাও যেন কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে। নিরাপত্তা নিশ্চিত না করতে পারলে বহু সম্ভাবনার এই দেশ এখানেই শেষ হয়ে যাবে। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমি এমন একটা ভূমিকায় আছি সেখানে দেশের একটা পরিবর্তন হবে। নতুন বাংলাদেশ কথাটা আমরা বলি, কারণ পুরনো বাংলাদেশ একটা অন্ধকার যুগ। ভয়ংকর একটা যুগ। সেই ভয়ংকর একটা দিন থেকে সুন্দর ঝলমলে একটা দিনে আসতে চাই। সেটা হলো নতুন বাংলাদেশ। পুলিশ বাহিনীর সমস্যা হচ্ছে ওই অন্ধকার যুগে তারা সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ছিল। নিজের ইচ্ছায় নয়, সরকারি হুকুম পেয়েছে কাজ করেছে। নতুন বাংলাদেশ তৈরি করতে তোমাদেরকে ওই চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদেরকে (পুলিশ) অনেক দোষ দেয়, আমরা দেখিয়ে দেবোÍ আমরা মানুষ খারাপ না। আমরা খারাপ মানুষের পাল্লায় পড়েছিলাম। সেই খারাপ মানুষ থেকে বেরিয়ে এসেছি, আমরা ভালো মানুষ। আমরা দেখো কী করতে পারি। সেই দৃঢ় চিন্তা মাথার মধ্যে রাখতে হবে যে, আমরা দেখিয়ে দেবো। নতুন বাংলাদেশ তৈরিতে আমরা এখানে বড় একটা ভূমিকা পালন করবো, কারণ আমাদের কাছে আছে আইন এবং শৃঙ্খলা। এটা প্রতিষ্ঠা করতে পারলে পরিবেশটা সৃষ্টি হয়, যেখান থেকে দেশ উড়াল দেবে। বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, স্বরাষ্ট্রসচিব নাসিমুল গনি ও পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশ ও রাজশাহীর পুলিশ সুপার ফারজানা ইসলাম।