বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫, ০১:০৩ পূর্বাহ্ন

পুলিশের জন্য বিপুলসংখ্যক গাড়ি কেনার উদ্যোগ

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ, ২০২৫

এফএনএস : কৃচ্ছ্রতা সাধনকালেও পুলিশের জন্য সরকার বিপুলসংখ্যক গাড়ি কেনার উদ্যোগ নিয়েছে। পুলিশের জন্য ডাবল কেবিন পিকআপ, মাইক্রোবাস, ট্রাক, বাস, প্রিজনার্স ভ্যান, মোটরসাইকেল, রেকার, এপিসি এবং ডগ ভ্যান কেনা হচ্ছে। মোট ৪১৮টি গাড়ি কিনতে খরচ হচ্ছে ১৮৯ কোটি ৭১ লাখ ১৫ হাজার টাকা। তার মধ্যে পুলিশ সুপারদের জন্য জাপানের মিৎসুবিশি মোটরস কপোরেশনের বিলাসবহুল পাজেরো স্পোর্টস কিউএক্স মডেলের পাঁচটি গাড়ি কেনার সিদ্ধান্তর হয়েছে। রেজিস্ট্রেশন, ভ্যাট, ট্যাক্সসহ পাজেরো স্পোর্টস কিউএক্স মডেলের একেকটি এসইউভি (স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকল) কিনতে ১ কোটি ৬৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা খরচ পড়ছে। জাপানের মিৎসুবিশি মোটরস করপোরেশনের এ বিলাসবহুল গাড়ি অভিজাতদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়তাও পেয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণাল সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পুলিশ বাহিনীতে নতুন গাড়ি যুক্ত হলে টহল ও সার্বিক নিরাপত্তা কার্যক্রম পরিচালনা সহজ হবে। যদিও সরকারের কৃচ্ছ্রসাধনের কালে পুলিশ সুপারদের জন্য এতো বিলাসবহুল গাড়ি কেনার সিদ্ধান্তের সমালোচনাও হচ্ছে। যদিও গতবছর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনকালে ব্যাপক জনরোষে ৪৬০টি থানা ও স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় থানাগুলোর কার্যক্রম স্বাভাবিক করে তোলার কাজ শুরু হলেও ছয় মাসের বেশি সময়ে আইন—শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসেনি। বরং ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর মতো এলাকাগুলোয় খুন, অপহরণ, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের মতো অপরাধের ঘটনা বেড়ে গেছে। এর বড় কারণ হলো পুলিশ বাহিনীর যানবাহন ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের ঘাটতি। ওসব বিষয় জানিয়ে এরই মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে পুলিশ। পাশাপাশি সংকট মোকাবেলায় ৪১৮টি গাড়ি কেনার প্রস্তাবও দেয়া হয়েছে। ওই প্রস্তাব যাচাই করে এরই মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় অর্থ পুলিশ বাহিনীকে হস্তান্তর করেছে। সূত্র জানায়, গতবছরের ৫ আগস্টের আগে—পরে এসপিদের ব্যবহৃত ১৩টি এসইউভি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তার মধ্যে পাঁচটিকে মিৎসুবিশি পাজেরো স্পোর্টস কিউএক্স মডেলের এসইউভি দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। আর আন্দোলনের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয় পুলিশের ২২০টি ডাবল কেবিন পিকআপ। সেগুলো প্রতিস্থাপনের জন্য কেনা হচ্ছে ২০০টি ডাবল কেবিন পিকআপ। মূলত এ ডাবল কেবিন পিকআপগুলো থানার পেট্রল ডিউটিতে ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে ওই শ্রেণীর গাড়ি কম থাকায় টহল কার্যক্রম পরিচালনায় সমস্যা হচ্ছে। সূত্র আরো জানায়, গাড়ির নতুন ক্রয়তালিকায় সবার ওপরে পাঁচটি জিপ রয়েছে। রেজিস্ট্রেশন, ভ্যাট, ট্যাক্সসহ গাড়িগুলোর প্রতিটির মূল্য ধরা হয়েছে ১ কোটি ৬৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। পাঁচটি জিপ কেনার জন্য মোট ৮ কোটি ৪৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তারপর ২ হাজার সিসির নিচে আরো ১৫টি এসইউভি কেনা হবে, যার দাম ধরা হয়েছে প্রতিটি ৬৫ লাখ টাকা করে মোট ৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ডাবল কেবিন পিকআপ ২০০টি কেনা হবে। এর প্রতিটির জন্য বরাদ্দকৃত টাকার পরিমাণ ৫৬ লাখ ২০ হাজার টাকা। সেজন্য মোট বরাদ্দের পরিমাণ ১১২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আর অনূর্ধ্ব ২ হাজার ৭০০ সিসির আটটি মাইক্রোবাস কেনার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা। তার বাইরে ৩ টন ও ৫ টনের ১৬টি ট্রাক কেনার জন্য মোট বরাদ্দ ৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। চারটি বাস কেনার জন্য বরাদ্দ ১ কোটি ৮৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পাঁচটি প্রিজনার্স ভ্যান কেনার জন্য দেয়া হয়েছে। ১৫২টি মোটরসাইকেল কেনার জন্য বরাদ্দ ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ১০ টনের আটটি রেকার কেনার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ১৬ কোটি টাকা। চারটি এপিসি কেনার জন্য ২৪ কোটি টাকা এবং একটি ডগ ভ্যান কেনার জন্য ৭৫ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। পুলিশ সুপারদের জন্য কেনা মিৎসুবিশি পাজেরো স্পোর্টস কিউএক্স মডেলের এসইউভি ২ হাজার ৪৭৭ সিসি ক্ষমতাসম্পন্ন। তাতে ৫ স্পিড অটো ট্রান্সমিশন, ইমোবিলাইজার, চাইল্ড লক, ভ্যাকিউম ব্রেক বুস্টার, সেন্টার পাওয়ার ডোর লকের মতো অত্যাধুনিক সুবিধা রয়েছে। এদিকে পুলিশ বিভাগ নতুন গাড়ি কেনার জন্য এ বরাদ্দও যথেষ্ট মনে করছে না। বাহিনীটির সদর দপ্তর থেকে পুলিশের জন্য গাড়ি কেনায় মঞ্জুরীকৃত অর্থের পরিমাণ সংশোধনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে ২ হাজার সিসি সক্ষমতার ১৫টি এসইউভি কেনায় প্রতিটির জন্য ৬৫ লাখ টাকা বরাদ্দকে বর্তমান বাজারদরের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় বলে মতামত দেয়া হয়েছে। সেটির জন্য বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তাছাড়া প্রস্তাবিত ৪১৮টি গাড়ির মধ্যে ২২৮টি দেশীয় সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ক্রয়ের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। প্রতিটি ডাবল কেবিন পিকআপের জন্য অর্থ বিভাগে বরাদ্দ ৫৬ লাখ ২০ হাজার টাকার পরিবর্তে ৮৭ লাখ টাকা পুননির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। একইভাবে মাইক্রোবাসের জন্য ৫২ লাখ টাকার পরিবর্তে ৫৫ লাখ টাকা, ৩ টনের ট্রাকের ক্ষেত্রে ৩১ লাখ ৭৫ হাজার টাকার পরিবর্তে ৩৮ লাখ এবং ৫ টনের ট্রাকের জন্য ৩৯ লাখ টাকার পরিবর্তে ৪৫ লাখ টাকা পুননির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। তাছাড়া বাস কেনার ক্ষেত্রে ৪৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকার পরিবর্তে ৪৮ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। আর তিনটি প্যাট্রোল বোট প্রতিস্থাপনের জন্য ১ কোটি ২৫ লাখ এবং চারটি স্পিড বোটের জন্য ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার প্রস্তাব করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। অন্যদিকে এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব: পুলিশ ও এনটিএমসি অনুবিভাগ) খন্দকার মো. মাহাবুবুর রহমান জানান, ৫ আগস্টের আগে ও পরে দেশব্যাপী পুলিশের বহু স্থাপনা ও যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তার মধ্যে অনেকগুলো যানবাহন একেবারেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এখন ধাপে ধাপে পুলিশের যানবাহন প্রতিস্থাপন করা হবে। প্রথম পর্যায়ে ৪১৮টি গাড়ি কেনার অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। পরে আরো হবে। এভাবে আগামী অর্থবছরের মাঝামাঝি নাগাদ পুলিশের চাহিদা অনুযায়ী সব যানবাহন প্রতিস্থাপন সম্ভব হবে। পাশাপাশি কিছু গাড়ির দাম বরাদ্দ দেয়া অর্থের চেয়েও বেশি। সেগুলো সবার সঙ্গে আলোচনা করে সমন্বয় করা হবে। সরকার সর্বোচ্চ সাশ্রয়ী মূল্যে গাড়িগুলো কিনতে চায়। পুলিশ যাতে আইন—শৃঙ্খলা রক্ষায় সার্বিকভাবে ভূমিকা রাখতে পারে সে বিষয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com