এফএনএস: রাজধানীর পল্টনে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীরের মিছিল থেকে সংগঠনটির অন্তত ১০ সদস্যকে আটক করা হয়েছে। এ সময় মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। হিযবুত তাহরীরের ‘মার্চ ফর খিলাফা’ কর্মসূচি থেকে গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর মিছিল বের করা হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধা দেয়। বাধা উপেক্ষা করে সংগঠনের সদস্যরা বারবার মিছিলের চেষ্টা চালায়। এতে পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া—পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশের অ্যাকশনের পরও সংগঠনের সদস্যরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পুনরায় মিছিলের চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কড়া অবস্থান নেয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মিছিলে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা খিলাফত প্রতিষ্ঠার দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। তবে পুলিশ দ্রুত তাদের ছত্রভঙ্গ করতে সক্রিয় হলে সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়। এ দিকে পুলিশের ছোড়া সাউন্ড গ্রেনেড লেগে কালবেলার এক সাংবাদিক আহত হয়েছেন। ওই সাংবাদিকের নাম সুশোভন অর্ক। পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় পুলিশের ছোড়া সাউন্ড গ্রেনেড তার পেটে লাগে। আহত অবস্থায় অর্ককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। জানা যায়, ‘মার্চ ফর খিলাফা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে কয়েকশ’ হিযবুত তাহরীরের সমর্থক পল্টনমুখী মিছিল বের করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। মিছিলটি প্রথমে নির্বিঘ্নে কিছুক্ষণ চলে। পরে পল্টন থেকে বিজয়নগরের দিকে যেতে থাকলে পুলিশের বাধার সম্মুখীন হয়। পুলিশ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে, হিযবুত তাহরীরের কর্মীরা পাল্টা ধাওয়া দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। এতে মিছিলকারীরা এক দফা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়, তবে তারা পুনরায় একত্রিত হয়ে মিছিল চালানোর চেষ্টা করে। পুলিশ আবারও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে এবং সংঘর্ষের এক পর্যায়ে হিযবুত তাহরীরের কর্মীদের ইট—পাটকেল ছুঁড়তে দেখা যায়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে পুলিশ কয়েকজন কর্মীকে আটক করে। এছাড়া, কিছু সময়ের জন্য মিছিলটি আরও বিশৃঙ্খলার দিকে চলে গেলে পুলিশকে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করতে দেখা যায়। পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য পুলিশ বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করে। হিযবুত তাহরীর দীর্ঘদিন ধরে গোপনে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। তবে স¤প্রতি সরকারবিরোধী কার্যক্রমে প্রকাশ্যভাবে অংশ নিতে শুরু করেছে। বিশেষ করে গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে সংগঠনটি সরকারের বিরুদ্ধে নানা কর্মসূচি শুরু করে। এর মধ্যে মিছিল, গোলটেবিল বৈঠক এবং বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন অন্তর্ভুক্ত ছিল। সংগঠনটি চট্টগ্রামে নানা কর্মসূচিও পালন করেছে। হিযবুত তাহরীর তাদের ‘মার্চ ফর খিলাফাহ’ কর্মসূচি ঢাকার বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেটে আয়োজনের ডাক দেয়। এ জন্য সংগঠনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার লাগায় এবং লিফলেট বিতরণ করে। তবে যেহেতু হিযবুত তাহরীর বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ সংগঠন, তাই তাদের কর্মসূচি পালনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ সরকার হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। সেই সময় থেকে তাদের কোনও ধরনের সভা, সমাবেশ, মিছিল, পোস্টার বা লিফলেট বিতরণসহ অন্য কোনও প্রচারণামূলক কার্যক্রমকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। উত্তরা থেকে তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার: এদিকে, রাজধানীর উত্তরা থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীরের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন– মনিরুল ইসলাম (৪০), মোহতাসিন বিল্লাহ (৪০) ও মাহমুদুল হাসান (২১)। তাদের কাছ থেকে সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আলামত জব্দ করা হয়। গতকাল শুক্রবার ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ শাখার উপ—পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সিটিটিসি জানতে পারে, হিযবুত তাহরীরের কিছু সক্রিয় সদস্য ৭ মার্চ বাইতুল মোকাররম মসজিদ এলাকায় ‘‘মার্চ ফর খিলাফা’’ নামে একটি সমাবেশ আয়োজনের পরিকল্পনা করছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে সিটিটিসি অভিযান চালিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টা ১৫ মিনিটের দিকে উত্তরা পশ্চিম থানার সেক্টর—১১ ও সেক্টর—১২ এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা করা হয়েছে। সিটিটিসি জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা স্বীকার করেছে, তারা হিযবুত তাহরীরের সক্রিয় সদস্য। এ ঘটনায় জড়িত অন্যান্য সদস্যদের খুঁজে বের করতে সিটিটিসির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।