জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে ॥ কোনো ধরণের ডিউটির স্বাধীনতা নেই, – পূর্বালী ব্যাংকের সশস্ত্র প্রহরীদের (আর্মস গার্ড)। আটঘন্টার ডিউটি করাতে বাধ্য করা হয় ২৪ ঘন্টা। সাপ্তাহিক ছুটি-ও মেলে না তাদের। আবার অতিরিক্ত কাজের মুজুরী থেকে-ও বঞ্চিত। ফলে অতিরিক্ত খাটকির চাপে, পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন অনেকেই। কারো কারো ভাঙছে সংসার। এসব দিকে নজর নেই কর্তৃপক্ষের। ফলে প্রহরীদের আটঘন্টার ডিউটি এখন না-মেই, যা প্রহসনে পরিণত হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, নানা নিপীড়ন ও নির্যাতনের কারণে শাখা ম্যানেজার ও প্রহরীদের মধ্যে ক্রমান্বয়ে সম্পর্কের অবনতি ঘটছে। টানা দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেক প্রহরী হারিয়ে ফেলছেন ‘ম্যাজেজ’। ম্যাজেজ হারিয়ে একজন শাখা ব্যবস্থাপকের উপরে চড়াও হওয়ার খবর পুরো পূর্বালী ব্যাংকজুড়ে চাওড় আছে। ঘটনাটি ঘটেছে, সিলেটের কানাইঘাট শাখা ব্যবস্থাপকের সঙ্গে সেখানে কর্তব্যরত সশস্ত্র প্রহরী মহসীন আলীর মধ্যে। উভয়ের মধ্যে ধ্বস্তাধস্তি ও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে বলে শাখা ব্যবস্থাপকের লিখিত অভিযোগ থেকে জানা গেছে। এ নিয়ে ওই গার্ডকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। মামলাও হয়েছে তার বিরুদ্ধে, যা চলমান। সময় থাকতে ব্যবস্থা না নিলে অপ্রীতিকর ঘটনা আরও ঘটে যেতে পারে এমন আশঙ্কা অন্য প্রহরীদের। এদিকে, সশস্ত্র প্রহরীদের ক্ষেত্রে মানা হয় না শ্রম আইনের নীতি; লঙ্ঘিত হচ্ছে পদে পদে। বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ অনুযায়ী শ্রম আইনের বিশ্রাম বা আরামের জন্য বিরতি সংক্রান্ত ১০১ এর (ক) ধারায় বলা আছে, একজন শ্রমিককে ছয় ঘন্টার অধিক কাজ করিতে বাধ্য থাকিবেন না, যদি না উক্ত দিনে তাহাকে বিশ্রাম বা আহারের জন্য এক ঘন্টা বিরতি দেওয়া হয়। আর সাপ্তাহিক কর্মঘন্টা সংক্রান্ত ১০২ এর (১) ধারায় বলা আছে, কোন প্রাপ্ত বয়স্ক শ্রমিক কোন প্রতিষ্ঠানে সাধারণত: সপ্তাহে আটচল্লিশ ঘন্টার অধিক সময় কাজ করিবেন না। টাঙ্গাইলের জেলা সড়ক শাখার এক সিনিয়র আর্ম গার্ড আবদুল আলিম মির্জার এক অভিযোগ থেকে জানা যায়, চলতি বছর এপ্রিলের ৫ থেকে ৮ তারিখ পর্যন্ত তাকে দিয়ে টানা দায়িত্ব পালন করানো হয়। এক পর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন এই গার্ড। ওষুধ আনার জন্য শাখা সংলগ্ন হাসপাতালে পৌঁছার আগেই তলব শাখা ম্যানেজারের। চাকরি হারানো ভয়ে ওষুধ না নিয়েই শাখায় ফিরে আসেন। এ নিয়েও কর্তৃপক্ষের শাস্তির খড়গের মধ্যে পড়তে হয়। শুধু আলিম মির্জা একা নন; দেশজুড়ে বিস্তৃত সব শাখার গার্ডদের চিত্র অভিন্ন। কারণ এটা নতুন নয়, সবসময় তাদেরকে দিয়ে এভাবেই ডিউটি করাতে বাধ্য করানো হয়। পূর্বালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সু-নজরে আনতে দুটি শ্রমিক সংগঠন ইতিমধ্যে তৎপর হয়ে উঠেছে। সংগঠন দুটি হচ্ছে, – এমপ¬য়িজন ইউনিয়ন (সিবিএ) -৯৪১ ও পূবালী ব্যাংক কার্মচারী সংঘ-১৭৮৩। তাদের দাবি, সশস্ত্র প্রহরীদের ডিউটি আটঘন্টা নিশ্চিত করা। এসব সংগঠনের দাবি-ও আমলে নিচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক গার্ড তাদের দুংখ ও কষ্টের কথা স্বীকার করেন। তারা বলেন, শ্রমিক সংগঠন দুটি তাদের আটঘন্টার ডিউটি নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা, দেন-দরবার ও চিঠি চালাচালি অব্যাহত রেখেছেন। কিন্তু টনক নড়ছে না কর্তৃপক্ষের। এতে সশস্ত্র প্রহরীদের মধ্যে বাড়ছে হাতাশা এবং ক্ষুদ্ধ ও অতিষ্ঠ অনেকেই। অপর একজন গার্ড পরিচয় গোপন রাখার স্বার্থে ক্ষোভ ঝেড়ে বলেন, পূবালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষের লজ্জা শরম নাই। গার্ডদের দিয়ে ২৪ ঘন্টা ডিউটি করায়। অহেতুক আমাদের (গার্ড) হয়রানি করা হয়। প্রহসন মূলক বদলি করে এবং মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে শাস্তি দেয়া হয়। বলেন, অনেককে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে। এ বিষয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে অনেক গার্ড মিথ্যা অভিযোগকারী শাখা ম্যানেজারদের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়েছে। বলছেন, দ্রুত কর্তৃপক্ষ আশু সমাধানে ব্যবস্থা না নিলে বড় ধরণের দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। এদিকে, বেশির ভাগ শাখায় ম্যাসেঞ্জার কাম গার্ডকে দিয়ে নিরাপত্তা ডিউটি করানো হয় না। হেল্পার/পিয়ন ছুটি গেলে তাদের কাজ আর্মড গার্ডকে করতে বাধ্য করা হয়। কিন্তু আর্মড গার্ড ছুটি গেলে আর্মড গার্ডের ডিউটির জন্য অন্য কাউকে পাওয়া যায় না। পূবালী ব্যাংক ১৯৫৯ সাল থেকেই আর্মড গার্ড নিয়োগ করে আসছে। জানতে চাইলে পূর্বালী ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম মো. শাহীন খান বলেন, সশস্ত্র প্রহরীদের আমরা আট ঘন্টায় ডিউটি করায়। কিন্তু কারো সুনিদিষ্ট অভিযোগ থাকলে কর্তৃপক্ষের নোর্টিশে আনতে বলেন। নোর্টিশে আনলে অনেকের চাকির চলে যায় এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি সরাসরি নাকচ করেন। বলেন, কর্মস্থলে অনুপস্থিত, প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে চাকরি গেছে।