এফএনএস : আমরা প্রায় সবাই পেয়ারা পছন্দ করি — মিষ্টি, সামান্য টকটকে এই ফলটি ভিটামিন সি—তে ভরপুর। সেই সঙ্গে জুস, জ্যাম কিংবা সে্প্রডের জন্য দারুণ একটি উপাদান। কিন্তু এখন আলোচনায় উঠে এসেছে পেয়ারা পাতার চা, যা তার অসাধারণ স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। হজমশক্তি বৃদ্ধি থেকে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ — মাটির গন্ধযুক্ত এই সতেজ চা শুধু স্বাদেই নয়, গুণেও ভরপুর। আসুন জেনে নিই কেন এক কাপ গরম পেয়ারা পাতার চা হতে পারে আপনার জন্য উপকারী পানীয়— ১. লিভারের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী : ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ এর গবেষণা অনুযায়ী, পেয়ারা পাতার নির্যাস ইনসুলিন প্রতিরোধ কমায়, অ্যাডিপোনেক্টিন রিসেপ্টর জিনের প্রকাশ বাড়ায় এবং লিভারে চর্বি জমা রোধ করে। এটি ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি কমাতে সরাসরি ভূমিকা রাখে। ২. গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়ায় : পেয়ারা পাতায় কুয়েরসেটিন ও ভিটামিন সি—এর মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ যা প্রজনন কোষের ক্ষতি করে এমন ফ্রি র্যাডিকেল দূর করে। সহজ কথায়, এটি শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর গুণগত মান উন্নত করতে সাহায্য করে। আফ্রিকান জার্নাল অফ বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ অনুসারে, পেয়ারা পাতার চা প্রাণীদের প্রজনন হরমোনের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। হাইল্যান্ড মেডিকেল রিসার্চ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, পেয়ারা পাতার নির্যাস পুরুষ ইঁদুরের টেস্টোস্টেরন, ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোন এবং লিউটিনাইজিং হরমোন এর মাত্রা বৃদ্ধি করে। ৩. প্রাকৃতিক হজম সহায়ক : ভারী খাবার খেয়েছেন? বদহজম, অ্যাসিড রিফ্লাক্স বা পেট ফাঁপায় ভুগছেন? পেয়ারা পাতার চা আপনার সব ধরনের হজম সমস্যার সমাধান দিতে পারে। পেয়ারা পাতায় ট্যানিন ও ফ্ল্যাভোনয়েডের মতো যৌগ রয়েছে যা পেটের প্রদাহ কমায় এবং পেটের আবরণকে ঠান্ডা করে। অনেক সংস্কৃতিতে, পেয়ারা পাতার চা গ্যাস্ট্রাইটিস ও ডায়রিয়া নিরাময়েও ব্যবহৃত হয়। খাবারের ৩০ মিনিট পর এক কাপ পান করুন এবং এর জাদুকরী প্রভাব উপভোগ করুন। ৪. রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক : জার্নাল অফ মেডিসিনাল ফুড (২০১০)—এ প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী, পেয়ারা পাতার নির্যাস রক্তে শর্করা ও প্রদাহ কমাতে পারে। এতে থাকা কুয়েরসেটিন ও অন্যান্য প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায় এবং অন্ত্রে শর্করা শোষণ কমাতে সাহায্য করে, বিশেষ করে খাবারের পর, যা প্রি—ডায়াবেটিস বা টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ৫. হৃদযন্ত্রের জন্য ভালো : পেয়ারা পাতার চা ‘খারাপ’ কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড কমিয়ে ‘ভালো’ কোলেস্টেরল বাড়াতে সাহায্য করে, যা হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখে। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ও প্রদাহ কমায় — যা হৃদরোগের সঙ্গে সম্পর্কিত। ৬. উজ্জ্বল ত্বকের জন্য : পেয়ারা পাতার চা ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি—ইনফ্লেমেটরি গুণ ব্রণ দূর করে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং দাগ কমাতে সাহায্য করে। ঠাণ্ডা পেয়ারা পাতার চা টোনার হিসেবে ব্যবহার করলে ত্বক ডিটক্স হয় ও প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা ফিরে পায়। ৭. ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে : পেয়ারা পাতার চা সরাসরি মেদ ঝরায় না, তবে এটি মেটাবলিজম বাড়ায় ও ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে। দিনে দুইবার এই চা পান করলে রক্তে শর্করা স্থিতিশীল থাকে এবং ইনসুলিন প্রতিরোধ কমে, যা ওজন ও পেটের চর্বি কমানোর সহায়ক। এটি ক্যালোরিবিহীন, সতেজ ও হাইড্রেটিং একটি পানীয়। ঘরেই বানান পেয়ারা পাতার চা— ১. পানি ফুটান। ২. তাতে পেয়ারা পাতা ও স্বাদ অনুযায়ী লবঙ্গ/দারচিনি যোগ করুন। ৩. ১০—১২ মিনিট ধরে আস্তে আস্তে ফুটতে দিন। ৪. ছেঁকে গরম গরম পান করুন। সকালে বা রাতে ঘুমানোর আগে দিনে ১—২ বার পান করতে পারেন। এই সহজলভ্য কিন্তু গুণে ভরা পানীয়টি আপনার দৈনন্দিন রুটিনে যোগ করে দেখুন, উপকার পাবেন নিশ্চিত।