জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে ॥ প্রাণ-সংহারী নভেল করোনা ভাইরাসের (কভিড-১৯) টিকা নেওয়াতে মানুষের মধ্যে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে কম। অনেকেই বলছেন, বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারীতে লাখ লাখ লোকের প্রাণহানীর ঘটনা ঘটেছে। সে সময়ে এই রোগটি থেকে বাঁচতে মানুষ টিকার প্রতি ঝুঁকে ছিল। রোগটির প্রার্দুভাব কমায় টিকা নেয়াও বর্তমানে ভুলতে বসেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কারণ করোনার টিকা নেয়া কমতে শুরু হয় ৩য় ডোজ থেকে; আর ৪র্থ ডোজ নেয়ার লোক খুঁজে পাওয়া গেছে খুব কমই। ইতিমধ্যে এই ডোজের কর্মযজ্ঞ শেষ হয়েছে। এখন অপেক্ষা ৫ম ডোজের জন্য। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু নিয়ে মহাব্যস্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে অধিদপ্তর সকলেই। ফলে করোনা যে বিশ্ব থেকে বিদায় নেয়নি ওই সব সংস্থার প্রচার-প্রচারণা না থাকায় মানুষ টিকা নেয়ার প্রয়োজন বোধ করছে না। মাঠে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, আইসিডিডিআরবি, টিবি হাসপাতালসহ বিভিন্ন টিকাকেন্দ্রে করোনারভাইরাস প্রতিরোধী টিকা নেওয়ার লোক তেমন নেই, কোথাও টিকার বুথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। করোনা পরীক্ষা করতেও আসছে কম লোক। টিকা নিতে আসা লোকের অভাবে আইসিডিডিআরবির টিকাকেন্দ্রে একটি বুথ বন্ধই করে দেয়া হয়েছে। শ্যামলীর টিবি হাসপাতালের টিকাকেন্দ্রেও ভিড় নেই। সরকার বলছে, নতুন টিকা আনার প্রয়োজন পড়ছে না, কেননা আগের টিকাই শেষ হচ্ছে না। করোনার দাপট কমে গেলেও একেবারে শেষ হয়নি। আনুষ্ঠানিকভাবে এখন করোনার পঞ্চম ঢেউ চলছে। কিন্তু টিকা নেওয়ার লোক তেমন নেই। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনটি ডোজের টিকার দুটি নেয়ার পর অনেকে তৃতীয় ডোজ বা বুস্টার ডোজ নেননি। আর ৪র্থ ডোজ নেয়ার লোক খুঁজে পাওয়া দুস্কর হয়েছে। কেউ বলছেন, তিন মাস আগে ৪র্থ ডোজ নেয়ার ক্ষুদে বার্তা পেলেও করোনা ভীতি না থাকায় টিকা নিতে যাননি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এখন পর্যন্ত দেশে ৯৮ শতাংশ লোক করোনার দুটি ডোজ নিয়েছেন। ৩য় ডোজ নিয়েছেন ৭০ শতাংশ এবং ৪র্থ ডোজ নিয়েছেন ৫০ শতাংশের কম মানুষ। তবে সরকার টিকা দেয়ার জন্য কার্যক্রম চালু রেখেছে। ২০২০ সালের মার্চ মাসে দেশে করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয়। বাংলাদেশে করোনায় ২৯ হাজার ৪৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং শনাক্ত ব্যক্তির সংখ্যা ২০ লাখ ৩৭ হাজার ৯১৯ জনে পৌঁছেছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, প্রাণ-সংহারী করোনার যে ভয়াবহতা মানুষের মাথায় ছিল সেটা এখন নেই। পাশাপাশি ডেঙ্গুর ভয়াবহতার আধিক্যের কারণে করোনা যে আছে, – তা মানুষ ভুলতে বসেছে। তিনি বলেন, করোনার টিকা নিয়ে মানুষের মধ্যে কিছুটা দোদুল্যমনতা রয়েছে। কারণ হিসেবে এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, করোনার দুই ডোজ নেয়ার পরও এ রোগে আক্রান্ত হয়ে কেউ কেউ মারা গেছেন। ফলে করোনার ভ্যাকসিনের উপরে যে মানুষের আস্থা ছিল তা অনেকটা কমে আসে। এই দুটি কারণেই মানুষের করোনা ভ্যাকসিন নেয়ার প্রতি টোটালি কোনো আগ্রহ নেই। টিবি হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার বলেন, সরকার নির্ধারিত ঘোষণা অনুযায়ী করোনার ৪র্থ ডোজ শেষ হয়েছে। এখনো ৫ম ডোজের ভ্যাকসিনের লট আসেনি। ৪র্থ ডোজ টিকা নেয়াতে মানুষের কেমন আগ্রহ ছিল জানতে চাইলে এই সহকারী পরিচালক বলেন, চায়না থেকে আমদানী করা ভোরোসেল টিকার ১ম ও ২য় ডোজ এখনো আছে। ৩য় ও ৪র্থ ডোজেও মানুষের কিছুটা আগ্রহ কম ছিল। দু-একজন ৪র্থ ডোজ নিতে আমাকে মাঝে মাঝে ফোন করেন। আমার এখানে না থাকলেও বলছি ওমুক হাসপাতালে আছে সেখান থেকে নেয়ার জন্য পরামর্শ দিচ্ছি, যোগ করেন করোনার সম্মুখ সারির এই যোদ্ধা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, করোনা কমে এসেছে, মৃত্যু নেই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মন্ত্রী-সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি, টিভি ও পত্রিকা কোথাও কোনো টিকা নেয়াতে মানুষ আগ্রহী হওয়ার জন্য প্রচারণা নেই। এসব বিষয়ে কেউ কথা বলে না। যেহেতু যেটার প্রয়োজন নেই তার প্রতি মানুষের আগ্রহ থাকবে না, – এটাই স্বাভাবিক। করোনা বিদায় নিয়েছে এটা বলতে চাই না। তবে করোনা হচ্ছে না। কিন্তু করোনা বিদায় হবে কি না এখনো বলার সময় আসেনি।