দৃষ্টিপাত রিপোর্ট \ নদীর একুল ভাঙ্গে, ওকুল গড়ে এই তো নদীর খেলা, চিরায়ত এই প্রবাদটি বাংলাদেশ ভারত বিভক্তকরণ ইছামতি নদীর ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর ঘটনাটি এমনইভাবে ঘটে চলেছে যে ইছামতি বাংলাদেশ অংশ প্রতিনিয়ত ভেঙ্গেই চলেছে এবং বিপরীত মুখি গড়ছে। ইছামতি ও কালিন্দী নদীর ভাংগন সা¤প্রতিক সময়ের জন্য নয়, দিনের পর দিন, অতীতের দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় ইছামতি ও কালিন্দীর ভাংগনে বাংলাদেশ ভূ—খন্ড ইছামতির কবলে গ্রামে পতিত হয়েছে। বাংলাদেশ অংশ ভাংছে এবং গড়ছে ভারত অংশ। ইতিমধ্যে এক সময়ের রাজনগর মৌজা অস্তিত্বহীন হয়েছে। বিলীন হয়েছে রাজনগর মৌজা, এক সময়ে রাজনগর মৌজা ছিল, মৌজাটিতে শত শত জমিজমা, বসতবাড়ী, স্থাপনা সবই ছিল কিন্তু খরস্রোত ইছামতির করালগ্রাস বিলীন হয়েছে রাজনগর মৌজা। যুগের পর যুগ, বছরের পর বছর ইছামতি ভাংছে তো ভাংছেই। এক সময়ের ইছামতির পাড়ে সরকারি খাদ্য গুদাম নদী গর্ভে হারিয়ে গেছে। দীর্ঘদিনের ভাংগনের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের ভূ—খন্ড হারিয়ে যাওয়ায় সংকুচিত হয়ে আসছে সাতক্ষীরা সীমান্ত পারের চিত্র। বসতবাড়ী, ফসলিজমি, স্থাপনা সবই ভক্ষণ করেছে ইছামতি। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার হাওড়দাহ, দেবহাটার সীমান্ত পারের কোমরপুর, ভাতশালা, চরশ্রীপুর, টাউশ্রীপুর, সুশিলগাতি উপজেলা সদরের বিওপি সংলগ্ন এলাকা, বসন্তপুর, কালিগঞ্জের খানজিয়া সহ বিস্তীর্ণ গ্রাম ইছামতির ভাংগনের কবলে, প্রতিবছরই ইছামতির ভাংগন রোধে কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়, কিন্তু বাস্তবতা হলো ভাংগনের সমাপনি ঘটে না কারণ ভাংগনরোধে পর্যাপ্ত কার্যক্রম হতে বিরত থাকা হয় আর তার একমাত্র কারণ অনিয়ম এবং দুর্নীতি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক শ্রেণির দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতার কারণে ইছামতির ভাংগন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা কার্যকর হচ্ছে না। ইছামতির ভাংগন কোন কোন সময়ে এমন পরিস্থিতি এবং পরিবেশের সৃষ্টি হয় যে ভেঁড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্রমত্তা ইছামতির লবণাক্ত পানি সীমান্তগ্রাম গুলোকে প্লাবিত করে থাকে। গত কয়েক বছর পূর্বে ইছামতির লবণাক্ত পানি সুশিলগাতি, খানপাড়া, চরশ্রীপুর সহ আশপাশের গ্রামকে কেবল প্লাবিত করেনি দীর্ঘদিন গ্রামগুলোর সাথে ইছামতির সংযোগ ছিল। জোয়ারের সময়ে গ্রামে ইছামতির লবণাক্ত পানি প্রবেশ করতো এবং ভাটায় তা বের হতো। বিবর্ণ এবং হলুদাভাব হয়ে গ্রামগুলোর বৃক্ষ বিনষ্ট হয়। বর্ষা মৌসুমে ভাংগন অধিকতর ত্বরান্বীত হয়। প্রতি বছর ভেঙ্গেই চলেছে। ছোট হয়ে আসছে সাতক্ষীরা, ভূ—খন্ড হরাচ্ছে বাংলাদেশ। প্রয়োজন স্থায়ী ভেড়ি বাঁধ নির্মাণ এবং টেকসই বাঁধ আর এ জন্য ইছামতির ভাংগন রোধে মেগা প্রকল্প গ্রহণের এখনই উপযুক্ত সময়। সীমান্তপারের ও ইছামতি তীরবর্তী গ্রামগুলোর ভুক্তভোগী অধিবাসিদের বক্তব্য আমরা ভাংগন রোধে স্থায়ী সমাধান চাই। আর স্থায়ী সমাধানের ক্ষেত্র মেগা প্রকল্প। বর্তমান নোবেল বিজয়ী বিশ্ব ব্যক্তিত্ব ড. মুহম্মদ ইউনুস বাংলাদেশের অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা জনজীবনের প্রত্যাশা নিশ্চই বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার ইছামতি ও কালিন্দী নদী ভাংগন রোধে মেগা প্রকল্প গ্রহণ করবেন।