এফএনএস : চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর হচ্ছে দেশের প্রধান বন্দর। ওই বন্দর দিয়ে প্রতি বছর দেশে আমদানি—রপ্তানি বাড়লেও চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ছে না। তবে বিগত ২০০৭ সালে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল চালু হলেও দীর্ঘদিন আর কোনো নতুন টার্মিনাল নির্মিত হয়নি। আর ২০২৪ সালে চালু হয়েছে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল। সীমিত পরিসরে নতুন টার্মিনালটিতে হ্যান্ডলিং শুরু হয়েছে। তবে পুরোদমে অপারেশন শুরু হলে বছরে হ্যান্ডলিং সক্ষমতা প্রায় ৪ লাখ টিইইউএস কনটেইনার বাড়বে। বন্দর ব্যবহারকারীরা দীর্ঘদিন ধরেই চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছে। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মেগা প্রকল্প হিসেবে বে—টার্মিনাল, লালদিয়া টার্মিনাল ও কক্সবাজারের মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। তবে ধীরগতিতে চলছে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন। বন্দর ব্যবহারকারীদের মতে, বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে টার্মিনাল নির্মাণ করতে হবে। আর সেক্ষেত্রে বে—টার্মিনালের কোনো বিকল্প নেই। চট্টগ্রাম বন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আন্তর্জাতিক শিপিং বিষয়ক ব্রিটিশ সাময়িকী লয়েডস লিস্ট প্রতি বছর বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ১০০টি বন্দরের তালিকা তৈরি করে। মোট পরিবহন করা কনটেইনারের সংখ্যার ভিত্তিতে ওই তালিকা তৈরি করা হয়। সাময়িকীটির ২০২৪ সালে প্রকাশিত তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান ৬৭তম। লয়েডস লিস্টের তথ্যানুযায়ী চট্টগ্রাম বন্দর ২০২৩ সালে ৩০ লাখ ৫০ হাজার টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছিলো। এর আগের বছর যা ছিলো ৩১ লাখ ৪২ হাজার। ২০২৩—২৪ অর্থবছরে কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ১২ কোটি ৩২ লাখ মেট্রিক টন, যা আগের অর্থবছরে ছিল ১১ কোটি ৮২ লাখ টন। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে গড়ে প্রতিদিন সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার কনটেইনার আমদানিকারকরা ডেলিভারি নেন। তাছাড়া প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার কনটেইনার রপ্তানি পণ্য জাহাজে তোলা হয়। একই অর্থবছরে বন্দর জলসীমায় পণ্য ও কনটেইনারবাহী জাহাজ হ্যান্ডলিং হয় ৩ হাজার ৯৭১টি, যা আগের বছরে ছিল ৪ হাজার ২৫৩টি। সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরের জটিতে নোঙর করা থাকে সব বিশালাকার সমুদ্রগামী বাণিজ্যিক জাহাজ। প্রতিটি আড়াই থেকে ৩ হাজার টিইইউএস (২০ ফুট সমমান) কনটেইনার বহন করতে সক্ষম। কনটেইনারের ওজন ছাড়া শুধু এর ভিতরে পণ্যই থাকে ২৭ থেকে ৩০ টন। চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে প্রতিদিন ১৬—১৭টি জাহাজে পণ্য লোড—আনলোড হয়। আমদানি পণ্য খালাসের পর জাহাজগুলো রপ্তানি পণ্য বোঝাই করে বিশ্বের বিভিন্ন বন্দরে চলে যায়। দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর ঘিরে প্রতিদিন চলে ১০—১৫ হাজার মানুষের এক মহাকর্মযজ্ঞ। মূলত কর্ণফুলী নদীকে ঘিরে চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনালসহ অবকাঠামো গড়ে উঠেছে। বর্তমানে জিসিবি, সিসিটি, এনসিটি ও পিসিটি নামে বন্দরের চারটি টার্মিনাল রয়েছে। সেখানে জেটি আছে মোট ২২টি। জেটি ছাড়াও বহির্নোঙরে লাখ লাখ টন পণ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সারি সারি জাহাজ। জেটির মতো বহির্নোঙরে অর্থাৎ গভীর সমুদ্রেও চলে খালাস কার্যক্রম। গভীরতা কম থাকায় বড় জাহাজগুলো (১০ মিটার ড্রাফটের বেশি হলে) সরাসরি জেটিতে ভিড়তে পারে না। তাই ওসব জাহাজ থেকে বহির্নোঙরে পণ্য খালাস করতে হয়। বহির্নোঙরে প্রতিদিন অপেক্ষমাণ থাকে ৫০—৫২টি জাহাজ। জেটি ও বহির্নোঙর মিলিয়ে গড়ে প্রতিদিন ৭০—৭৫টি জাহাজ এ বন্দরে অবস্থান করে। সূত্র আরো জানায়, দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা চট্টগ্রাম বন্দরে সব সময়ই কর্মযজ্ঞ অব্যাহত থাকে। সপ্তাহের সাতদিনই ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। বাংলাদেশের সমুদ্রকেন্দ্রিক আমদানি—রপ্তানির ৯২ শতাংশই চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে হয়ে থাকে। তাছাড়া দেশের বাজেটের বড় একটি অংশের জোগানদাতা চট্টগ্রাম বন্দর। ওই বন্দর দিয়ে আমদানি—রপ্তানি পণ্যের শুল্ক আদায়ের দায়িত্ব পালন করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। প্রতিষ্ঠানটি গত ২০২৩—২৪ অর্থবছরে আদায় করেছে ৬৮ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকার রাজস্ব। একই অর্থবছরে দেশের জাতীয় বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার। কাস্টমসের আয় ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের চার্জ আদায় বাবদ চট্টগ্রাম বন্দর প্রতি বছর আয় করে বিপুল পরিমাণ অর্থ। ২০২৩—২৪ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে খরচ বাদ দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের ট্যাক্সপূর্ব রাজস্ব উদ্বৃত্ত ছিল ২ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা। যা ২০২২—২৩ অর্থবছরে ছিল ২ হাজার ৩০৪ কোটি টাকা। ২০২১—২২ অর্থবছরে ট্যাক্সপূর্ব রাজস্ব উদ্বৃত্ত ছিল ২ হাজার ১০৫ কোটি, ২০২০—২১ এ ছিল ১ হাজার ৭৯৩ কোটি, ২০১৯—২০ এ ছিল ১ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা। এদিকে এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম সপ্তাহের সাতদিনই চলে। বন্দরের কার্যক্রম আগের চেয়ে অনেক বেশি গতিশীল। ২০২৪ সালে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে এ বন্দর রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। ওই লক্ষ্যে ১২ শতাধিক ক্যামেরা দিয়ে সার্বক্ষণিক ইয়ার্ডের কার্যক্রম মনিটরিং করা হচ্ছে।