বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:০৯ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
সখিপুর ইউনিয়নে তারুণ্যের ভাবনা বিষয়ক কর্মশালা “মাসজিদে কুবা” নামাজ আর ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি মানবতার মনোমুগ্ধতার উচ্চতায় দেবহাটার পাঁচটি ইউনিয়নে বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন চাপের মুখে পদত্যাগ করলেন টিউলিপ সিদ্দিক নলতা আহছানিয়া মিশন রেসিডেন্সিয়াল কলেজে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ আশাশুনি তথ্য অধিকার বুথ ক্যাম্প অনুষ্ঠিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রশিক্ষণ সম্পন্ন সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ নূরনগরে জামায়াতের সেটআফ প্রোগ্রাম ও মতবিনিময় শীতার্তদের মাঝে জামায়াতের কম্বল বিতরণ

প্রত্যেক বিভাগে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হবে: প্রধানমন্ত্রী

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৩

এফএনএস: দেশের প্রতিটি বিভাগে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আমাদের দেশে কোনো মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে প্রথম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করে। এখন আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, প্রতিটি বিভাগে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করবো। এরইমধ্যে চারটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করেছি। গতকাল বুধবার সকালে গাজীপুরের তেতুইবাড়ির শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে নার্সিং কলেজের দ্বিতীয় স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা নার্সিং পেশাকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নতি করেছি। এই সেবার প্রতি আমাদের ছেলেমেয়েরা যেন আরও আকর্ষিত এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজে বেশি নিয়োজিত হয় আমরা সে ব্যবস্থা করেছি। একই সঙ্গে নার্সদের কর্মসংস্কার বা চাকরির ব্যবস্থা করেছি। তিনি বলেন, আমরা প্রায় ৪০ হাজারের মতো নার্স নিয়োগ দিয়েছি। বয়স না থাকলেও অভিজ্ঞতা বিবেচনায় ১৫ হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছি। যেন তারা সেবাটা দিতে পারেন। তাদের জন্য ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থাও করেছি। এটা শুধু দেশের ভেতরে নয়, দেশের বাইরেও ব্যবস্থা করেছি। যেন তারা ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষাটা ভালোভাবে নিতে পারে। সরকারপ্রধান বলেন, মানুষের সেবা করার দিকে আমরা গুরুত্ব দিয়ে থাকি। আমরা ২৩টি নার্স ইনস্টিটিউটকে কলেজে উন্নীত করেছি। আরও ১৬টি প্রক্রিয়াধীন। আমরা প্রতি জেলায় মেডিকেল কলেজ করে দিচ্ছি। পাশাপাশি নার্সিং ট্রেনিংয়েরও ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বেসরকারি খাতকেও উৎসাহিত করছি। তারাও মেডিকেল কলেজ করছে। আমরা নার্সিং ট্রেনিংকে গুরুত্ব দিচ্ছি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নার্সিংয়ের ব্যাপক চাহিদা। আমাদের দেশে জনসংখ্যা বেশি। আমাদের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় হাসপাতাল, কমিউনিটি ক্লিনিক ও মাতৃসেবা কেন্দ্র রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে রোগীদের সেবা দিতে পর্যাপ্ত সংখ্যক মানসম্পন্ন নার্স দরকার। তিনি বলেন, তারপরও আমি বলবো যে কেউ ভালো শিক্ষা নিয়ে বাইরের দেশের ভাষা রপ্ত করে নার্সিং পেশায় বিদেশে যেতে পারেন। সে সুযোগ রয়েছে। তবে নিজ দেশের চাহিদা আগে মেটাতে হবে। প্রধানমন্ত্রী দেশের যুবসমাজকে নার্সিং শিক্ষা গ্রহণ এবং বৃহৎ পরিসরে সেবা প্রদানে নিয়োজিত থাকার আহবান জানিয়ে বলেন, আমি দেশের যুব সমাজকে নার্সিং শিক্ষা গ্রহণ এবং সেবায় নিয়োজিত হওয়ার আহবান জানচ্ছি। নার্সের শিক্ষা গ্রহণ করলে শুধু দেশে নয়, বিদেশেও কর্মসংস্থান হবে। উন্নত সেবা দিয়ে মানুষের মন জয় করতে পারলে নিজেরও একটা আত্মতৃপ্তি আসবে, বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, সবসময় এটা মনে রাখতে হবে যারা আজকে গ্রাজুয়েট হলেন, ডিগ্রি পেলেন, তাদেরকে জনগণকে সেবা দেওয়ার কথা সবসময় মনে রাখতে হবে। একজন রোগী চিকিৎসা এবং ওষুধে যতটা না সুস্থ হবে ডাক্তারদের সহানুভ‚তি এবং নার্সদের সেবা পেয়েই কিন্তু তার চেয়ে বেশি তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে পারে। তাদের মধ্যে একটা আত্মবিশ^াস গড়ে ওঠে। তিনি বলেন, যারা ৪ বছর কঠোর অধ্যবসায়ের ফসল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন তারা নিশ্চই জনগণের সেবায় নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করবেন। আপনাদের অর্জিত জ্ঞান আপনারা কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগ করবেন। সকল ক্ষেত্রে যেমন বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে এই ক্ষেত্রেও এগিয়ে যাবে, সেটাই আমি চাই। তিনি এ সময় সেবাধর্মের প্রতীক বিশে^র খ্যাতনামা নার্স ও মানবসেবী ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলের কথা উল্লেখ করেন, যিনি মানব সেবায় নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের চেয়ারম্যান শেখ হাসিনা এই নার্সিং কলেজ ও হাসপাতালের সঙ্গে ট্রাষ্টের পক্ষ থেকে একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপন করবেন বলে ও জানান। এজন্য জমিও নেয়া হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে স্পেশালাইজড হসপিটাল অ্যান্ড নার্সিং কলেজ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নামে নামকরণ করা হয়েছে এবং এটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে স্পেশালাইজড হসপিটাল অ্যান্ড নার্সিং কলেজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ তৌফিক বিন ইসমাইল এবং দ্বিতীয় ব্যাচের স্নাতক শিক্ষার্থী আনামুল হক। স্নাতক বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন কেপিজে হেলথকেয়ার বেরহাদের সভাপতি নরহাইজাম বিনতি মোহাম্মদ। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে নার্সিং কলেজের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল হাফিজ মল্লিক এ সময় উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী কলেজের ২১০ জন স্নাতকের মধ্যে সনদপত্র বিতরণ করেন। তিনি ছয়জন স্নাতক শিক্ষার্থীকে তাদের অসামান্য অ্যাকাডেমিক রেকর্ডের জন্য ‘প্রাইমিনিস্টার্স এওয়ার্ড’ ও তুলে দেন। অনুষ্ঠানে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে নার্সিং কলেজের ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী হাসপাতালের ওয়েবসাইট, হাসপাতাল ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার এবং মেডিকেল জার্নালও উদ্বোধন করেন। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক দ্বীন মো. নূরুল হক প্রধানমন্ত্রীর কাছে কেপিজে ঢাকা জার্নাল অব মেডিকেল সায়েন্সের একটি সংখ্যা হস্তান্তর করেন। এছাড়া বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি ¯িøট ল্যাম্প ও অপারেটিভ মাইক্রোস্কোপের ডামি হস্তান্তর করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি এবং তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা ১৯৯৪ সালের ১১ এপ্রিল জাতির পিতার ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের স্মৃতি বিজড়িত বাড়িতে জাতির পিতা ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এই ট্রাস্ট বিভিন্ন সেবাধর্মী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। বিভিন্ন সময়ে এই ট্রাস্টের মাধ্যমে সারাদেশে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচি পালিত হয়ে আসছে। বিশেষায়িত এই হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজ প্রতিষ্ঠা ট্রাস্টের একটি মানবিক উদ্যোগ। এর মাধ্যমে ট্রাস্টের স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচি প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি পেয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, মালয়েশিয়ার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী দাতোসেরি মোহাম্মদ নজিব বিন তুন আবদুল রাজাক, ট্রাস্টের সহ-সভাপতি শেখ রেহানা এবং আমি মিলে ২০১৩ সালের ১৮ নভেম্বর এখানে বিশেষায়িত হাসপাতালের উদ্বোধন করি এবং নার্সিং সেবাকে গুরুত্ব দিয়ে এই নার্সিং কলেজ প্রতিষ্ঠা করি। গ্রাজুয়েট নার্স যাতে হতে পারে সে ব্যবস্থা আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে প্রথমেই আমরা নিয়েছি। তিনি বলেন, বর্তমানে সারাবিশ্বে নার্সিং পেশার গুরুত্ব বাড়ছে, খ্যাতি বাড়ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি অ্যানালিটিক প্রতিষ্ঠান ‘গ্যালাপ’ এর হিসেব অনুযায়ী ২০২১ সালের মতো আবারও ২০২২ সালে নার্সিংকে সবচেয়ে বিশ্বস্ত পেশার খ্যাতি দেয়া হয়েছে। কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসক ও নার্সবৃন্দ সেবা দিয়ে গেছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন। অন্যদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার সময়ই জাতির পিতা যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং নির্যাতিত মা-বোনদের সুচিকিৎসার জন্য সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, ইংল্যান্ড, ভারত ও আমেরিকা থেকে ডাক্তার ও স্পেশাল নার্স নিয়ে এসে তাদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন চিকিৎসা শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। নার্সিং পেশার সম্মান বৃদ্ধি, নার্সিং সেবা ও টেকনোলজির উন্নয়নে তিনি সংশ্লিষ্ট ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা ও নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, বলেন প্রধানমন্ত্রী। সরকার প্রধান বলেন, তাঁর সরকার জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে নার্সিং পেশাকে ২য় শ্রেণিতে উন্নীত করেছে এবং এই সরকারের মেয়াদে প্রায় ৪০ হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছে। তাছাড়া, অভিজ্ঞতার জন্য চাকরির বয়সসীমাও শিথিল করা হয়েছে। পাশাপাশি দেশে-বিদেশে উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করে দিয়েছে। ‘জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি-২০১১’ প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে তাঁর সরকার দেশের স্বাস্থ্যখাতকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং কমিউনিটি ক্লিনিকে ৩০ প্রকারের ওষুধ বিনামুল্যে প্রদান করছে। এখন সেখানে ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য ইনসুলিনও বিনামূল্যে প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে, বলেন তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com