রবিবার, ১২ মে ২০২৪, ০৬:৪১ পূর্বাহ্ন

প্রদীপ-লিয়াকতের ফাঁসির রায়ে মিষ্টি বিতরণ

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

এফএনএস: বহুল আলোচিত মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় কক্সবাজারের টেকনাফ মডেল থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ ও পরিদর্শক মো. লিয়াকত আলীকে মৃত্যুদন্ড এবং ছয়জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। রায় ঘোষণার পর আদালত প্রাঙ্গণে মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেলে আদালতে রায় শোনার জন্য উপস্থিত হওয়া উৎসুক জনতা কক্সবাজার জেলা জজ আদালত প্রাঙ্গণে মিষ্টি বিতরণ করে। একই সময়ে আসামিদের উদ্দেশ করে ‘ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই, প্রদীপ-লিয়াকতের ফাঁসি চাই’ বলে শ্লোগান দিতে থাকে উপস্থিত বিক্ষুব্ধ জনতা। এদিকে আদালত সূত্রে জানা যায়, বিচারকের রায় ঘোষণার পর এজলাস কক্ষে কেঁদে ওঠেন ১৫ আসামির সবাই। কেউ মৃত্যুদন্ডের রায় শুনে কাঁদেন। কেউ যাবজ্জীবনের জন্য বাকি সাতজন খালাস পাওয়ার আনন্দে কেঁদে ওঠেন। দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে এজলাসে এসে আদালতের কার্যক্রম শুরুর পর মামলা সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক আলোচনা করেন বিচারক। এর আগে সকালে আদালতে হাজির করা হয় মামলায় অভিযুক্ত বিতর্কিত ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার ও লিয়াকতসহ ১৫ আসামিকে। আদালতের সরকারি কৌঁসুলি, বাদীপক্ষের আইনজীবী ও আসামিপক্ষের আইনজীবীসহ বাদী ও বিবাদীদের স্বজন এবং সংশ্লিষ্টরা এজলাসে উপস্থিত ছিলেন। রায়কে কেন্দ্র করে আদালতের চারপাশে নিñিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। রায়ের পর মামলার বাদী ও নিহতের বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বলেছেন, আমাদের প্রত্যাশা অনেকখানি পূরণ হয়েছে, সন্তুষ্টির জায়গাটা সেদিন বলব যেদিন এটা কার্যকর হবে। প্রধান দুই আসামির মৃত্যুদন্ড হওয়ায় প্রত্যাশাপূরণ হয়েছে উলে­খ করে নিহত মেজর সিনহার বোন সাংবাদিকদের বলেন, সাতজনকে একেবারে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। সেখানে আমার কাছে মনে হয়েছে, সেটা তো সম্ভব না। দায়বদ্ধতা তো কেউ এড়াতে পারে না, সে ক্ষেত্রে হয়তো তাদের কিছু সাজা হলেও হতে পারতো। তখন প্রত্যাশাটা আরেকটু বেশি পূরণ হয়েছে বলা যেত। তিনি আরও বলেন, আর সন্তুষ্টির কথা যদি বলেন, সন্তুষ্ট সেদিনই হবো যেদিন এটা কার্যকর হবে। এদিকে রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, এই রায়ে বাদীপক্ষ সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট নয়। কারণ যে যে অপরাধ করেছে, তাদের সেভাবে শাস্তি হয়নি। রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, কিছু কিছু সাক্ষী একই কথা বলেছে। যাদের শাস্তি হয়েছে তাদের জন্যেও বলেছে যে কথা, যাদের শাস্তি হয়নি তাদের জন্যেও একই কথা বলেছে। এখানে বিভেদ দেখা দিচ্ছে। কেউ শাস্তি পেলো কেউ খালাস পেলো। তাই আমাদের চিন্তা করার বিষয় আছে। তিনি আরও বলেন, আমরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট নই। এমন কয়েকজন আছে যারা অপরাধ করেছে, তাদের শাস্তি হয়। উচ্চ আদালতে যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অন্যদিকে রায়ে আংশিক সন্তুষ্টি প্রকাশ করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ফরিদুল আলম বলেছেন, এই রায়ে আইনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা, আস্থা ও বিশ্বাস বাড়বে। রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ফরিদুল আলম বলেন, রায়ে আমরা আংশিক সন্তুষ্ট হয়েছি। তবে যাদেরকে খালাস দেওয়া হয়েছে, সম্পূর্ণ রায় পাওয়ার পর তাদের বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবো। তিনি আরও বলেন, পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র প্রমাণ করতে পেরেছি। সে কারণে উচ্চ আদালত দুই জনকে মৃত্যুদন্ড, ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছে। নির্মম ও আলোচিত হত্যাকান্ডের ১৮ মাসের মাথায় রায় ঘোষণা হলো। বিচারিক কার্যক্রম শুরু করে মাত্র ৩৩ কার্যদিবসে শেষ হয় মামলাটির পরবর্তী কাজ। কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত সৃষ্টির ৩৮ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম এত দ্রুত কোনো হত্যা মামলার রায় ঘোষণা হলো।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com