মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫, ০৪:৩১ পূর্বাহ্ন

প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা হেলথ সার্ভিস গঠনের সুপারিশ কমিশনের

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৬ মে, ২০২৫

এফএনএস: স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্কার কমিশন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। গতকাল সোমবার সকাল ১১টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়। সর্বজনীন ও সহজলভ্য স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য অন্যান্য সংশ্লিষ্ট খাতের সঙ্গে এবং জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে অংশিদারত্বের ভিত্তিতে সমন্বিতভাবে সেবার ব্যবস্থাপনা করতে হবে বলে মনে করে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন। পেশাদারত্ব, দক্ষতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে বিদ্যমান স্বাস্থ্য ক্যাডার পুনর্গঠনের মাধ্যমে প্রশাসনিকভাবে স্বায়ত্তশাসিত বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিস (বিএইচএস) গঠন করার সুপারিশ করেছে কমিশন। একটি অধ্যাদেশ জারি করে অন্তর্বর্তী সরকারের সময়কালে এটি করা সম্ভব বলে মনে করে এই কমিশন। স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদ্যমান স্বাস্থ্য ও সংশ্লিষ্ট ক্যাডারগুলোকে পুনর্গঠনপূর্বক একটি পেশাভিত্তিক, দক্ষ ও জবাবদিহিমূলক পৃথক এবং স্বাধীন প্রশাসনিক কাঠামো তৈরি করতে হবে, যার নেতৃত্বে থাকবে একটি স্বতন্ত্র সচিবালয় ও একজন মুখ্য সচিব মর্যাদাসম্পন্ন চিকিৎসক। বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিস গঠন প্রক্রিয়ায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিসের অধীনে তিনটি খাত ক্লিনিকাল সেবা, জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট শিক্ষাÍ পরিচালনা করবেন সংশ্লিষ্ট উপপ্রধান ও মহাপরিচালকরা। বিভাগীয় পর্যায়ে ১১টি আঞ্চলিক স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ থাকবে এবং বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিকেন্দ্রীকরণ, বাজেট ও পরিকল্পনায় আর্থিক ও প্রশাসনিক স্বাধীনতা দিয়ে কার্যকর, স্থানীয় চাহিদাভিত্তিক সেবা নিশ্চিত করতে হবে। প্রস্তাবিত রূপান্তর প্রক্রিয়ায় বলা হয়েছে, পরিবার পরিকল্পনা, স্বাস্থ্য অর্থনীতি, নার্সিং, তামাক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, ন্যাশনাল ইলেকট্রো-মেডিকেল ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (নিমিউ অ্যান্ড টিসি) এবং যানবাহন ও যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ সংস্থা (টেমো)কে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে একীভ‚ত করা হবে। এইসব সংস্থার সেবা প্রস্তাবিত বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিসেস-এর সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য অধিদফতরগুলোর সঙ্গে উপযুক্তভাবে একীভ‚ত করা হবে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস স্বাস্থ্য ক্যাডারকে একটি স্বতন্ত্র ও স্বায়ত্তশাসিত ক্যাডারে রূপান্তর করার কথা বলা হয়েছে। এই ক্যাডারটি বিচারিক ক্যাডারের ন্যায় একটি স্বাধীন সিভিল সার্ভিস ক্যাডার হবে এবং এর নাম হবে বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিসেস। প্রত্যেক কর্মকর্তাকে বিকল্প বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস পরিবার পরিকল্পনা (সাধারণ) কর্মকর্তাদের শিক্ষা, দক্ষতা ও কর্মদক্ষতার ভিত্তিতে পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন রিফর্ম কমিশনের প্রস্তাবিত নতুন ক্যাডারে একীভ‚ত করা হবে। তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থাও থাকবে। মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের প্রস্তাবিত স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট মাঠ পর্যায়ের সেবায় শিক্ষা, দক্ষতা ও পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে একীভ‚ত করা হবে। তাদেরও বিকল্প বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকবে। প্রতিবেদনে গ্রামে এবং শহরে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে প্রাথমিক সেবা চিকিৎসক নিয়োগ করার কথা বলা হয়েছে। গ্রামে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য-উপকেন্দ্র ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র একত্র করে এবং শহরে ওয়ার্ডভিত্তিক কেন্দ্র গড়ে প্রথম স্তরে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। রেফারেল ব্যবস্থা কাঠামোবদ্ধ ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক রেফারেল ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে রোগী সঠিক সময়ে সঠিক স্তরের সেবা পায় এবং উচ্চতর প্রতিষ্ঠানে ভিড় কমে। পাশাপাশি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সচ্ছতা আনার কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। যোগ্যতা, স্বচ্ছতা ও রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা বজায় রেখে নির্বাচনি প্রক্রিয়া ও নিয়োগের সুপারিশ করার জন্য উচ্চপর্যায়ের সার্চ কমিটি গঠন করার কথা বলা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ পদ যেমন বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিস প্রধান ও উপপ্রধান, মহাপরিচালক, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রো-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ, বিএমডিসি ও বিএমআরসি-এর চেয়ারম্যান পদে নিয়োগপ্রাপ্তদের যোগ্যতা সম্পর্কে জাতীয় সংসদকে অবহিত করতে হবে। এছাড়া একটি স্বতন্ত্র পাবলিক সার্ভিস কমিশন (স্বাস্থ্য) গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এদিকে, রোগীর সুরক্ষা, আর্থিক বরাদ্দ ও ধারাবাহিকতা, জবাবদিহিতা ও জরুরি প্রস্তুতি নিশ্চিত করাসহ পুরোনো আইন পর্যালোচনা ও যুগোপযোগী করার পাশাপাশি ৭টি নতুন আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করেছে স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশন। প্রস্তাবিত আইনগুলো হলো, বাংলাদেশ স্বাস্থ্য কমিশন আইন, বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিস আইন, প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা আইন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন, ওষুধের মূল্য নির্ধারণ ও প্রবেশাধিকার আইন, অ্যাপলায়েড হেলথ প্রফেশনাল কাউন্সিল আইন ও বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল আইন। স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ১৫ হাজার ২৩৩টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের মধ্যে মাত্র ৪ হাজার ১২৩টি তাদের লাইসেন্স নবায়ন করেছে এবং ১ হাজার ২৭টি প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছে। এটি স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা দুর্বল এবং আইন লঙ্ঘনের মাত্রা অত্যন্ত উদ্বেগজনক, যা রোগীদের নিরাপত্তা এবং পুরো স্বাস্থ্যব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতাকে হুমকির মুখে ফেলছে। প্রতিবেদনে বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতের দুর্বলতা প্রসঙ্গে বলা হয়, বেসরকারি খাতের লাইসেন্সিং এবং চিকিৎসা অবহেলা পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। এসব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সিং প্রক্রিয়ায় চ্যালেঞ্জগুলো জটিল। অনুমোদন প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে বলা হয়, বিভিন্ন সরকারি দফতরের অনুমতি নিতে গিয়ে মালিকদের বারবার বিভিন্ন অফিসে যাতায়াত করতে হয়। লাইসেন্সের ক্ষেত্রে বিভ্রান্তিকর চাহিদা প্রসঙ্গে বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর পরিবেশ লাইসেন্স চায়, অথচ পরিবেশ অধিদফতর প্রথমে হাসপাতাল লাইসেন্স চায়। এছাড়া সা¤প্রতিক বছরগুলোতে ফি বেড়ে যাওয়ায় ছোট ক্লিনিকগুলো লাইসেন্স করতে আগ্রহ হারাচ্ছে বলে মনে করে কমিশন। লাইসেন্স পেতে বিলম্বের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, অনেক সময় কাগজপত্র ঠিক থাকলেও ২-৩ বছর পর্যন্ত লাইসেন্স পেতে বিলম্ব হয় এবং অননুমোদিত অর্থের দাবি নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদে একটি অধ্যাদেশ জারি করে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে একটি মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বিনামূল্যে দেওয়ার প্রস্তাব করেছে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন। কমিশনের সুপারিশে আরও বলা হয়েছে, রোগী সুরক্ষা, আর্থিক বরাদ্দ ও ধারাবাহিকতা, জবাবদিহি এবং জরুরি প্রস্তুতি নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট পুরাতন আইন পর্যালোচনা ও যুগোপযোগী করতে হবে। এছাড়া নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে। প্রস্তাবিত নতুন আইনগুলোর মধ্যে আছে– বাংলাদেশ স্বাস্থ্য কমিশন আইন; বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিস আইন; প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা আইন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন; ঔষধের মূল্য নির্ধারণ ও প্রবেশাধিকার আইন; অ্যালায়েড হেলথ প্রফেশনাল কাউন্সিল আইন; বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল আইন; স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ও রোগী নিরাপত্তা আইন; হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক এক্রেডিটেশন আইন; বাংলাদেশ সেফ ফুড, ড্রাগ, আইভিডি ও মেডিকেল ডিভাইস আইন। এছাড়াও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইন, মেডিকেল শিক্ষা অ্যাক্রেডিটেশন আইন, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল আইন, বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল আইন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন, পৌর ও সিটি কপোরেশন আইন ইত্যাদি আইনেরও সংশোধনের প্রয়োজন আছে বলে মনে করে এই কমিশন। স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের প্রধান জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান বলেন, স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া একজন নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। স্বাস্থ্য খাতে এ ক্ষেত্রে বাজেট বর্তমানে খুবই কম, এই বাজেট দিয়েও করা সম্ভব যদি ঠিকমতো অরগানাইজ করা যায়। দ্বিতীয়ত যদি স্বাস্থ্যসেবা দিতে হয়, তাহলে আলাদা একটি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের অধীনে আসতে হবে। আমরা প্রস্তাব করেছি, বাংলাদেশ স্বাস্থ্য কমিশন এটা দেখভাল করবে, আরেকটি হলো স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, সেটাকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। সেটা এক জায়গায় থাকবে না, প্রত্যেক বিভাগে একটা হতে পারে। দেশের দুটি বড় বিভাগীয় শহর ঢাকা ও চট্টগ্রামে এটা করা যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, আরেকটি বিষয় হলো স্বাস্থ্য শিক্ষা, এই জিনিসটা বদলিজনিত চাকরি কিংবা পার্ট টাইম চাকরি দিয়ে হতে পারে না। আমরা প্রস্তাব করেছি, স্বাস্থ্য শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মতো হবে। এখানে বদলি করার মতো চাকরি হবে না, এখানে যারা একাডেমিক পদবীধারী হবেন তারা পূর্ণকালীন চাকরি করবেন, তারা বাইরে প্র্যাকটিস করবেন না। যাতে মানসম্মত বা মেধাসম্মত লোক আকৃষ্ট হয়, সে জন্য তাদের জন্য আলাদা পে স্কেল করতে হবে এবং ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিসের মধ্যে প্রাইভেটে রোগী দেখে প্রাতিষ্ঠানিক আয় ও ওই ব্যক্তির আয়ের পথ তৈরি করা যেতে পারে। এর আগে স্বাস্থ্যসেবাকে জনমুখী, সহজলভ্য ও সার্বজনীন করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাবের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. একে আজাদ খানকে প্রধান করে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশনের অন্যান্য সদস্যরা হলেন: স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জাকির হোসেন, পথিকৃৎ ফাউন্ডেশন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী, গাইনোকলজিস্ট অধ্যাপক ডা. সায়েবা আক্তার, শিশু স্নায়ুতন্ত্র বিভাগ অধ্যাপক ডা. নায়লা জামান খান, সাবেক সচিব এম এম রেজা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা (দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চল) অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক, আইসিডিডিআর, বির ডা. আজহারুল ইসলাম, স্কয়ার হাসপাতালের স্কয়ার ক্যান্সার সেন্টারের অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মো: আকরাম হোসেন, গ্রিন লাইফ সেন্টার ফর রিউম্যাটিক কেয়ার এন্ড রিসার্চের চিফ কনসালটেন্ট অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আতিকুল হক, আইসিডিডিআর, বির শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য বিভাগের বিজ্ঞানি ডা. আহমেদ এহসানুর রাহমান, ঢাকা মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী উমায়ের আফিফ।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com