স্টাফ রিপোর্টার \ সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানুষের জীবন কর্মময়। এক একটা অদম্য সফল অথবা বিফল কর্মই এক একটা ইতিহাস। জীবন জুড়েই বিস্তৃত গল্পের ইতিহাস। মাটির তৈরি পুতুল থেকে আধুনিক সৃষ্টিশীল দুর্লভ বস্তু। পর্বত আরোহী থেকে বিশ্ব ভ্রমণ, সুদীর্ঘ অট্টালিকা থেকে গ্রাম্য মাটির কুঁড়েঘর। এ ধরনের প্রত্যেকটা স্তর যেন ইতিহাস ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ। মাটির তৈরি মানুষ। তাই মাটির সাথে মানুষের হৃদ্যতার সম্পর্ক আদি এবং অনন্তকালের। এ সুনিবিড় সম্পর্কের বহিঃপ্রকাশ বিভিন্নভাবে প্রতিফলিত হয়।রূপক গল্পের কথা পিতার পরামর্শে অলস, কুঁড়ে পুত্রদের মাটি খনন করে সোনা খোজার বৃথা চেষ্টা। ক্ষনকাল পরে সে মাটিতে খাদ্যশস্য বীজ বপন অতঃপর সেখান থেকে পরিপূর্ণ প্রচুর পরিমাণে খাদ্যশস্য উৎপাদন। মাটি থেকে সোনার ফসল ফলিয়ে এভাবেই তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন। মানুষের সোনালী সুদিন আনয়নে আদিকাল থেকেই কৃষি কাজই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।কৃষি কাজেই যেন প্রশান্তির ছোঁয়া। বর্তমানে তাই এই সভ্য সমাজের মানুষ মূল পেশার সাথে কৃষিকে পরম মমতার সাথে আঁকড়ে ধরে আছে। এমন একজন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক যিনি কৃষি পেশার সাথে নিয়োজিত, তার সাথে সাক্ষাৎ হয় দৃষ্টিপাতের এ প্রতিবেদকের। চিকিৎসা পেশার পাশাপাশি কৃষি পেশাকে যিনি ভালোবাসেন, হৃদয়ে লালন করেন কৃষি কাজের মাধ্যমে সোনালী ফসল উৎপাদনের তিনি শ্যামনগর উপজেলার রমজান নগর ইউনিয়নের মোহাম্মদ আলীর ছেলে আশাফুর রহমান। প্রত্যন্ত অঞ্চলে জন্ম নেওয়া এ তরুণ হোমিওপ্যাথি ডাক্তার গ্রামীন পরিবেশেই তার বেড়ে ওঠা। গ্রামীন পরিবেশের মাটি,মানুষ, আলো, হাওয়ার সাথে তার শৈশব কাল কেটেছে।তাই তার জন্মস্থানের মানুষ ও মাটি যেন তাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। যার প্রতিফলন ঘটেছে তার হৃদয় নিঃসৃত পরিশ্রমের মাধ্যমে কৃষি ক্ষেত্রে উৎপন্ন ফসলের মধ্য দিয়ে। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন ছোটবেলা থেকে পিতার সাথে কৃষি খেতে কাজ করতাম লেখাপড়ার পাশাপাশি। সেই থেকে কৃষির প্রতি ভালোবাসাটা জন্ম। আজ তিনি একজন সফল ধান চাষী কৃষক। ধান চাষ সম্পর্কে তিনি বলেন প্রথমে ধানের বীজ শোধন করে নিতে হয়। শোধন করার জন্য ধানের বীজটা হালকা ২ ঘন্টা রোদে শুকায়ে রোদে শুকানো বীজ আবার দুই ঘন্টা ছায়া জায়গায় রাখতে হয় যেটা ধান চাষের জন্য প্রথম এবং খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ। পরে কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের একটা ছত্রাকনাশক কেজি প্রতি ২ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম পানিতে মিশিয়ে ধানের বীজগুলো ভিজাতে হয় ১২ ঘন্টার জন্য, ১২ ঘন্টা পর বীজগুলো উঠিয়ে নিয়ে আবার ১০ ঘণ্টার জন্য ভালো পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। এরপরে কৃষকরা স্বাভাবিকভাবে যে পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করে আমিও ঠিক সেই পদ্ধতি অনুসরণ করে ধান বীজতলায় বুনন করি। ২৭ দিন পর ধানের চারা মূল জমিতে রোপন করা যায়। মূল জমিতে চারা রোপনের আগে জমিতে সার প্রয়োগ করতে হয় (৩৩ শতকে) বিঘায় ডিএসপি সার ১৪ কেজি জিপসাম ১০ কেজি পটাশ ৮কেজি দস্তা ২ কেজি বরন ১ কেজি দানাদার ২ কেজি। ধান চাষে বাম্পার ফলনের জন্য বিঘা প্রতি ইউরিয়া ৩৬ কেজি, টিএসপি/ডিএপি ১৫ কেজি, জিপসাম ১৫ কেজি, পটাশ ২১ কেজি, জিংক/দস্তা ১.৫০ কেজি, বোরন ১ কেজি, ম্যাগসার ২ কেজি, দানাদার ১ কেজি, টিএসপি সারের পরিবর্তে ডিএপি সার দিলে ৪০% ইউরিয়া সার কম প্রয়োগ করতে হবে। জমি তৈরির শেষ চাষে টিএসপি+জিপসাম+বোরন+ম্যাগসার+জিংক+দানাদার (আলাদাভাবে) তিন ভাগের দুই ভাগ পটাশ ছিটিয়ে দেওয়া যেতে পারে। জিংক/দস্তা সার প্রথম বা দ্বিতীয় চাষে দেওয়া ভালো। ইউরিয়া সার তিন কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। প্রথমথকিস্তি, চারা রোপনের ১০—১২ দিনের মধ্যে ইউরিয়া উপরি করতে হবে। দ্বিতীয় কিস্তি, চারা রোপনের ২৫—৩০ দিনের মধ্যে উপরি প্রয়োগ করতে হবে। তৃতীয় কিস্তি, চারা রোপনের ৪৫—৫০ দিনের মধ্যে উপরি প্রয়োগ করতে হবে এবং তিন ভাগের এক ভাগ পটাশ তৃতীয় কিস্তি ইউরিয়া সারের সাথে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। এভাবে তিনি ধান চাষ করে পার্শ্ববর্তী যারা দীর্ঘদিন ধরে ধান চাষের জড়িত তাদের চেয়ে বেশি ফসল ফলিয়েছে। পরিচিতি পাওয়ার পাশাপাশি তিনি ঈস্বানিতও হয়েছেন স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে। গতানুগতিক চাষাবাদ হার মেনেছে পরিকল্পিত চাষাবাদের কাছে। দীর্ঘদিন যারা কৃষির সাথে জড়িত তারা বিঘা প্রতি ধান পেয়েছেন ১৬ থেকে ১৮ মন। আর তিনি বিঘা প্রতি ধান পেয়েছেন ২৬ থেকে ২৭ মন। অল্প জমিতে অধিক ফসল সম্ভব যদি সুপরিকল্পিত কৃষি জ্ঞান থাকে কৃষকের। আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত কৃষি জ্ঞান যদি কৃষি ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায় তাহলে আগামীর কৃষি ক্ষেত্র হবে মঙ্গলময়। কৃষি ক্ষেত্রে ঘটবে বিস্তৃত বিপ্লব। যেটা করে দেখিয়েছেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের এই তরুণ কৃষক। একজন সফল চিকিৎসকও বটে। তার অনুভূতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন কৃষি কাজে আমি প্রশান্তি খুঁজে পাই।