এফএনএস স্পোর্টস: সিরিজে আরও একবার ব্যর্থ শ্রীলঙ্কার টপ অর্ডার। বেশিরভাগ ব্যাটসম্যান ছুড়ে এলেন উইকেট। বিবর্ণ ব্যাটিং প্রদর্শনীতে গুটিয়ে গেল তারা দেড়শ পেরিয়েই। উইকেট যে ভয়ঙ্কর কিছু নয়, ব্যাটিংয়ে নেমে তা প্রমাণ করলেন আব্দুল্লাহ শফিক ও শান মাসুদ। দুজনের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে প্রথম দিনেই লিড নেওয়ার কাছে পৌঁছে গেল পাকিস্তান। কলম্বোয় দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিন শ্রীলঙ্কা গুটিয়ে গেছে ¯্রফে ১৬৬ রানে। বরাবরই ব্যাটিং স্বর্গ বলে পরিচিত এই মাঠে প্রথম ইনিংসে লঙ্কানদের সর্বনিম্ন স্কোর এটিই। যে উইকেটে ধুঁকেছেন সতীর্থরা, সেখানেই স্ট্রোকের ফুলঝুরি ছুটিয়ে সিরিজে টানা তৃতীয়বার পঞ্চাশ স্পর্শ করেন ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা। তার ৬৮ বলে ৫৭ রানের ইনিংসে ৯টি চারের পাশে ছক্কা একটি। দুই অঙ্কে যেতে পারেন আর কেবল তিন জন। নাসিম শাহ ও আবরার আহমেদ মিলে নেন সাত উইকেট। আগুনে বোলিংয়ে টপ ও মিডল অর্ডারে ছোবল দিয়ে নাসিমের শিকার তিন উইকেট। শেষ পাঁচ উইকেটের চারটিই নিয়ে অবশ্য সফলতম বোলার লেগ স্পিনার আবরার। সোমবার দিন শেষে পাকিস্তানের সংগ্রহ ২ উইকেটে ১৪৫ রান। ওভারপ্রতি রান তুলেছে তারা পাঁচের বেশি। ওপেনার ইমাম-উল-হক দ্রæত ফিরলেও পরের জুটিতে শফিক ও মাসুদ শতরানের জুটি গড়েন ওভারপ্রতি প্রায় ছয় রান তুলে। সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠের উইকেটে ছিল কিছুটা অসমান বাউন্স। তবে ব্যাটিংয়ের জন্য ভয়ঙ্কর কিছু নয় মোটেও। রাতভর বৃষ্টির কারণে আউটফিল্ড ভেজা থাকায় খেলা শুরু হয় নির্ধারিত সময়ের আধা ঘন্টা পরে। সকালে উইকেটে আদ্রতাও ছিল কিছুটা। যদিও তা শুকিয়ে যায় দ্রæত। তাতে ব্যাটসম্যানদের জন্য কাজটা হয়ে যাওয়ার কথা সহজ। কিন্তু টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা শ্রীলঙ্কা ধ্বংসস্তূপে পরিণত এক ঘন্টা যেতেই। তৃতীয় ওভারেই মাসুদের দুর্দান্ত সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট হয়ে যান নিশান মাদুশকা। ম্যাচের শুরুতেই অধিনায়ক দিমুথ করুনারতেœর অমন কঠিন একটি রান নিতে যাওয়াটা বিস্ময়কর বটে। তিনে নেমে সপ্তম ওভারে উইকেট বিলিয়ে আসেন কুসাল মেন্ডিস। শাহিন শাহ আফ্রিদির অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ড্রাইভ করে পয়েন্টে ক্যাচ দেন তিনি। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে পরপর দুই ওভারে দারুণ দুটি ডেলিভারিতে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ও করুনারতেœকে বিদায় করে দেন নাসিম। বাউন্সারে ম্যাথিউস কট বিহাইন্ড হওয়ার পর করুনারতেœ বল টেনে আনেন স্টাম্পে। পঞ্চদশ ওভারে ৩৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে তখন বিপদে শ্রীলঙ্কা। প্রথম টেস্টে দুই ইনিংসে তাদের প্রথম ৪ উইকেট পড়েছিল ৫৪ ও ৯৯ রানে। আবারও যথারীতি ত্রাণকর্তা হিসেবে হাজির হন ধনাঞ্জয়া। পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন তিনি। প্রথম ২৫ বলে ৬টি চারে করে ফেলেন ২৭ রান। লাঞ্চ বিরতির পর রানের গতিতে দম দেন দিনেশ চান্দিমালও। প্রথম সেশনে ৪১ বলে তার রান ছিল ১২। পরের ১৫ বলে করে ফেলেন ২০ রান। ১১৯ বলে ৮৫ রানের ইনিংস সেরা জুটি ভাঙে চান্দিমালের বিদায়েই। নাসিমের শর্ট বলে মিড উইকেটে সহজ ক্যাচ দেন তিনি। তার ৬০ বলে ৩৪ রানের ইনিংসটি গড়া ৪টি চারে। সাদিরা সামারাবিক্রমাকে দ্রæত বিদায় করে প্রথম শিকার ধরেন আবরার। শ্রীলঙ্কার কিপার-ব্যাটসম্যান সিরিজে টানা তৃতীয়বার ধরা পড়েন শর্ট লেগ ফিল্ডারের হাতে। নিজের পরের ওভারে ধনাঞ্জয়াকেও থামান আবরার। ¯øগ সুইপ করে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দেন আগের টেস্টে ১২২ ও ৮২ রানের ইনিংস খেলা ব্যাটসম্যান। মাসুদ আরেকটি সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট করে দেন প্রবাথ জয়াসুরিয়াকে। এবারও রানের কোনো সুযোগই ছিল না বলতে গেলে। রমেশ মেন্ডিস ও আসিথা ফার্নান্দোর ২৭ রানের নবম উইকেট জুটিতে কোনোমতে দেড়শ ছাড়ায় লঙ্কানদের সংগ্রহ। ৪৪ বলে ২৭ রান করেন রমেশ। ব্যাটিংয়ে নেমে তৃতীয় ওভারে ইমাম-উল-হককে হারায় পাকিস্তান। পেসার আসিথার লেংথ বল বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের ব্যাট ছুঁয়ে প্যাডে লেগে ক্যাচ যায় গালিতে। এরপর শফিক ও মাসুদের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ছুটতে থাকে পাকিস্তান। বাঁহাতি স্পিনার জয়াসুরিয়াকে ছক্কায় উড়িয়ে শফিক ফিফটি পূর্ণ করেন ৪৯ বলে। পঞ্চাশ ছুঁতে মাসুদের লাগে কেবল ৪৪ বল। জুটির শতরান স্পর্শ করে ১০৩ বলে। ফিফটির পরপরই আসিথার শর্ট বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মাসুদ। ৪৭ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় তার ব্যাট থেকে আসে ৫১ রান। অধিনায়ক বাবর আজমকে নিয়ে দিনের বাকিটা কাটিয়ে দেন শফিক। দিনের শেষ দিকে জয়াসুরিয়ার বলে এই ওপেনারকে এলবিডবিøউ দিয়েছিলেন আম্পায়ার। তবে রিভিউ নিয়ে বাঁচেন তিনি। রিপ্লেতে দেখা যায়, বল স্টাম্পের ওপর দিয়ে যেত। ৯৯ বলে ৭ চার ও ২ ছক্কায় ৭৪ রানে খেলছেন শফিক।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ৪৮.৪ ওভারে ১৬৬ (মাদুশকা ৪, করুনারতেœ ১৭, কুসাল মেন্ডিস ৬, ম্যাথিউস ৯, চান্দিমাল ৩৪, ধনাঞ্জয়া ৫৭, সামারাবিক্রমা ০, রমেশ মেন্ডিস ২৭, জয়াসুরিয়া ১, আসিথা ৮, মাদুশাঙ্কা ০*; আফ্রিদি ১১-১-৪৪-১, নাসিম ১৪-৩-৪১-৩, আবরার ২০.৪-৪-৬৯-৪, নোমান ৩-১-১০-০)
পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ২৮.৩ ওভারে ১৪৫/২ (শফিক ৭৪*, ইমাম ৬, মাসুদ ৫১, বাবর ৮*; আসিথা ৭-০-৪১-২, মাদুশাঙ্কা ৫.৩-০-২৮-০, রমেশ ৮-০-৩৯-০, জয়াসুরিয়া ৮-০-৩৫-০)।