এফএনএস: শুরু থেকেই সরকারি কর্মকর্তা—কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব দিতে তাগিদ দিয়ে আসছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এবার নিজের সম্পদের বিবরণ দিয়েছেন স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ৩৫ মিনিটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন তিনি। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব হিসেবে যোগদানের আগে তিনি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপির ব্যুরো প্রধান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তখন থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ঢাকা ডায়েরি শিরোনামে দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরতেন তিনি। নিজের অরথ—বিত্তের হিসাব দিয়ে করা পোস্টটিও তিনি একই শিরোনামে লিখেছেন। পোস্টে বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, তার ও তার স্ত্রীর মালিকানায় বর্তমানে চারটি ফ্ল্যাট রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার দনিয়া এলাকায় উত্তরাধিকার সূত্রে তিনি নিজে একটি ও ময়মনসিংহে তার শ্বশুরের কাছ থেকে তার স্ত্রী উত্তরাধিকার সূত্রে একটি ফ্ল্যাট পেয়েছেন। পোস্টে প্রেস সচিব বলেন, ২০০০ সালের দিকে ঢাকার ডেমরার কাছে জুরাইন ও যাত্রাবাড়ীর সন্নিকটে দনিয়া এলাকায় তার বাবা একটি পাঁচতলা অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং তৈরি করেন। সেখান থেকে ১ হাজার ১৫০ বর্গফুটের ওই ফ্ল্যাটটি তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে পান। ২০১০ সালে শফিকুল আলম দনিয়া ছেড়ে চলে এলেও ফ্ল্যাটটি এখনো আছে তার মালিকানায়। একসময় বিক্রির পরিকল্পনা থাকলেও নিজের পরিবারের স্মৃতিচারণায় আর বৃদ্ধ বয়সে এখানে এসে থাকার আশায় ফ্ল্যাটটি শেষ পর্যন্ত বিক্রি করেননি তিনি। এ সম্পর্কে প্রেস সচিব বলেন, যখনই বাবা—মায়ের পুরোনো বাড়িতে যাই, মনে হয় তারা যেন এখনো সেই ছোট্ট করিডোরগুলো দিয়ে হাঁটছেন। বাবার কোরআন তিলাওয়াত কিংবা মায়ের সরলভাবে সালাত আদায়ের দৃশ্য যেন কানে বাজে। ময়মনসিংহে যে ভবনে তার স্ত্রী উত্তরাধিকার সূত্রে একটি ফ্ল্যাট পেয়েছেন সেই একই বাড়িতে পাঁচ বছর আগে নিজেও সস্তায় একটি ফ্ল্যাট কেনেন বলে জানিয়েছেন প্রেস সচিব। তিনি আরও বলেন, ওই ভবনটির দুইটি ফ্ল্যাট তাদের মাসিক আয়ের উৎস। ২০১৪ সালে ঢাকার শাহীনবাগ এলাকায় ১ হাজার ১০০ বর্গফুটের তিন বেডরুমের একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন বলেও জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব। তবে জায়গাটি প্রিয় হলেও দ্রুতই নিরাপত্তাহীনতার কারণে সেখান থেকে সরে সরকারি কোনো বাসায় তাকে উঠতে হতে পারে বলে পোস্টে উল্লেখ করেন তিনি। প্রেস সচিব তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, আমাদের স্থানীয় মসজিদের একজন ভিক্ষুকও আমাকে চেনে। কয়েক সপ্তাহ আগে কিছু তরুণ আমাকে জনশত্রু বলে ডাকছিল, যখন আমি তাদের আড্ডার পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। আমার পরিবার এ নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। তাই হয়তো আমাকে কোনো সরকারি ফ্ল্যাটে যেতে হবে। শফিকুল আলম তার ফেসবুক পোস্টে জানান, তার একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা (১১ দশমিক ৪ মিলিয়ন টাকা) জমা আছে। এই সঞ্চয়ের বেশিরভাগই আমার পেনশন ও গ্র্যাচুইটির টাকা।গত বছরের আগস্টে তিনি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপিতে দুই দশকের চাকরি ছেড়ে দেন। তার একটি ব্যক্তিগত গাড়িও রয়েছে। কিছু ব্যক্তি তার কাছ থেকে প্রায় ৩০ লাখ টাকা ধার নিয়েছে বলেও পোস্টে উল্লেখ করেন তিনি। গ্রামের বাড়িতে তার ৪০ শতক কৃষিজমি রয়েছে বলে ফেসবুক পোস্টে জানান প্রেস সচিব শফিকুল আলম। নিজের ভবিষ্যৎ ও অবসর জীবন সম্পর্কে প্রেস সচিব তার পোস্টে বলেন, অনেক বছর ধরে আমার মধ্যে এক ধরনের মোহ কাজ করত যে অবসর সময়ে আমি গ্রামে ফিরে যাব। শুধু লিখব আর হাঁটব—এটাই ছিল পরিকল্পনা। তবে এখন মনে হয়, আমি আর কখনো গ্রামে ফিরতে পারব না। হয়তো মৃত্যুর পর আমার সন্তানরা আমাকে আমার বাবা—মায়ের পাশে কবর দেবে। শেষে ব্যক্তিগত আয় বা সম্পদ নিয়ে অপতথ্য রটনাকারীদের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রেস সচিব বলেন, ক্ষমতায় থাকলে অনেকেই আপনার আয়ের ব্যাপারে মিথ্যা প্রচারণা চালায়। প্রেস সেক্রেটারি হিসেবে বর্তমান দায়িত্ব শেষে ভবিষ্যৎ তাকে কোথায় নিয়ে যাবে তা জানেন না বলে পোস্টের শেষদিকে উল্লেখ করেন প্রেস সচিব। তিনি বলেন, ক্যারিয়ারে দীর্ঘ একটা সময় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে কাজ করার দরুন আয় বাবদ তিনি যে সঞ্চয় করেছেন তা দিয়ে নতুন চাকরি না পেলেও স্বচ্ছন্দে জীবনযাপন করতে কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না তাকে।