সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:৪৯ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
শুল্কমুক্ত সুবিধায় হাজার হাজার টন চাল আমদানিতেও বাজারে প্রভাব পড়েনি বিএনপির মহাসচিবের সঙ্গে ইইউ রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ শীতজনিত রোগীর চাপ রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি হাসপাতালে বাড়ছে সাতক্ষীরা পৌর—মেয়রের বরখাস্তের আদেশ অবৈধ: হাইকোর্ট স্কুল থেকে ফেরার পথে ট্রেনে কাটা পড়ে শিশুর মৃত্যু সম্মেলনকে কেন্দ্র করে কিশোরগঞ্জে দুই পক্ষের সংঘর্ষে বিএনপি নেতা নিহত মোবাইল—ইন্টারনেটে কর প্রত্যাহার না হলে এনবিআর ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি ভারত থেকে এলো ২৭ হাজার মেট্রিক টন চাল টিউলিপের উচিত ক্ষমা চাওয়া: ইউনূস বিজিবি—জনগণ ‘শক্ত অবস্থান’ নেওয়ায় ভারত পিছু হটেছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

বঙ্গবাজারে ভয়াবহ আগুন

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বুধবার, ৫ এপ্রিল, ২০২৩

এফএনএস: রাজধানীর বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাÐের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে আগুন লাগার খবর পেয়ে সকাল ৬টা ১২ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তাদের সহযোগিতায় সকাল থেকেই কাজ করেন সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যরা। পরে টানা প্রায় সাড়ে ৬ ঘণ্টা জ¦লে, কয়েকটি মার্কেটের কয়েকশ দোকান পুড়িয়ে অবশেষে নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টা ৩৬ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। শেষ পর্যন্ত সেখানে দায়িত্ব পালন করে ফায়ার সার্ভিসের ৪৮টি ইউনিট। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেন। এছাড়া এসময় পুলিশ হেডকোয়ার্টার ও আশপাশের মার্কেটে আগুন লাগে। আগুন নেভাতে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার দিয়ে পানি দেয়া হয়। সকাল ৯টার পর থেকে বাহিনীর হেলিকপ্টার দিয়ে পানি নিক্ষেপ করতে দেখা গেছে। তারা হাতিরঝিল থেকে পানি নিয়ে সেখানে ব্যবহার করেছেন। এদিকে অগ্নিকাÐে বঙ্গবাজারের কয়েকটি মার্কেটের প্রায় ৫ হাজার দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি করেছে দোকান মালিক সমিতি। তারা বলছেন, এ ঘটনায় দুই হাজার কোটি টাকার মালামাল পুড়ে গেছে। কয়েক হাজার ব্যবসায়ী সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। একইসঙ্গে ঈদের আগেই এসব মার্কেটে কর্মরত অর্ধ লাখ কর্মচারী বেকার হয়ে পড়ার এবং বেতন না পাওয়ার শঙ্কা কাজ করছে। সকালে আগুন লাগার পর থেকেই ভিড় করে হাজার হাজার উৎসুক জনতা। মানুষের ভিড়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ বাধাগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। তারা বলেন, মানুষের ভিড়ে কাজ করতে সমস্যা হয়েছে। মানুষ পানির পাইপের উপর দাঁড়িয়ে ছিল। পানি নিঃসরণ হচ্ছিল না। মানুষকে পিটিয়ে সরিয়ে দিলেও তারা যাচ্ছিল না। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেন, পানি সংকট, উৎসুক জনতা ও বাতাসের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে দেরি হয়েছে। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেন, ফায়ার সার্ভিসের ৪৮টি ইউনিটের চেষ্টায় ১২টা ৩৬ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এ ছাড়া সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব ও ওয়াসাসহ অনেক বাহিনী ও সংস্থা আমাদের সঙ্গে কাজ করেছে। বঙ্গবাজারে মার্কেটে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার আগেই সেটি পাশের এনেক্স মার্কেটসহ অন্তত ৪টি ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এনেক্স মার্কেটে আগুন ধরে যায়। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা বঙ্গবাজারের মার্কেটের আগুন নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি এনেক্স মার্কেটের আগুনও নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন। এদিকে বঙ্গবাজারে অগ্নিকাÐের পেছনে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। একই সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের ভ‚মিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তারা। তারা বলেন, ফায়ার সার্ভিসের ঠিক হেড কোয়ার্টার্সের সামনে এত দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেল, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগানো হয়েছে। বঙ্গবাজারের ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীদের কয়েক দফা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের ধাওয়া দিতে দেখা গেছে। সকালে ফায়ার সার্ভিসের দপ্তরে ভাঙচুরও চালান ব্যবসায়ীরা। মার্কেটের ব্যবসায়ী মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিসের লোকজন প্রথমে গ্যাস ভর্তি বোতল (ফায়ার এক্সটিংগুইশার) নিয়ে আসে। তখন দ্রæত গাড়ি নিয়ে এসে পানি দিলে আগুন নিভে যেত। কিন্তু তাদের দুটি গাড়ি আসে যখন আগুন অল্প সময়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এই জায়গাটি তো এমন নয় যে পানির গাড়ি ঢুকতে পারবে না। তারপরও কেন শুরুতেই ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি এলো না। ফায়ারের হেড অফিসের সামনে এভাবে আগুনে সব ছাই হয়ে যাবে কেন? -বলেন তিনি। আরেক দোকানদার শরিফুল ইসলাম বলেন, আমার ভেতরের দিকে দুটি দোকান, কিছু বাঁচাতে পারিনি। এত বড় একটা মার্কেটে স্বাভাবিকভাবে আগুন ছড়াতে কত সময় লাগে? কিন্তু আমরা দেখলাম আগুন লাগার ৩০ মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে আগুন পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। কী ছিল এ আগুনে যে এত দ্রæত ছড়ালো? তিনি বলেন, আমরা শুনেছি এখানে বহুতল মার্কেট হবে। তাই পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগানো হয়েছে। মার্কেট হবে ভালো কথা, কিন্তু হাজার হাজার কোটি টাকা কেন নষ্ট করা হলো? ১০ হাজার দোকানে কমপক্ষে অর্ধ লক্ষ মানুষের পেটে লাথি মারা হলো। বেলা সাড়ে ১১টার দিকেও পূর্বপাশের দোকানগুলোতে আগুন জ¦লছিল। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা নিচ থেকে পানি ছিটাতে আসেন। এ সময় ব্যবসায়ীরা উত্তেজিত হয়ে যান। তারা বলতে থাকেন, এখন পানি নিয়ে কী হবে? সব পুড়ে শেষ! ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মী জবাব দিলে ব্যবসায়ীরা তার দিকে তেড়ে যান। পরে তাকে সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। এ সময় ব্যবসায়ীদের চিৎকার করতে দেখা যায়। কেউ কেউ কান্না করতে থাকেন। পরে একজন পুলিশ কর্মকর্তা এসে ব্যবসায়ীদের সান্ত¡না দেন এবং আগুন নেভাতে তাদের সহায়তা চান। এর আগে সকালের দিকে বিক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা ইট-পাটকেল ছুড়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের কাচের জানালা ভেঙে ফেলেন। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। আরেক ব্যবসায়ী ফরিদুর রহমান বলেন, এই মার্কেটে সব দোকানদারকে দোকানোর বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে যেতে হয়। কেউ সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করলে তাকে জরিমানার মুখে পড়তে হয়। তাই বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগার সম্ভাবনা নেই। এ আগুন ষড়যন্ত্রমূলকভাবে লাগানো হয়েছে। এদিকে অগ্নিকাÐের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের তিন সদস্য আহত হন। তারা হলেন মো. আতিকুর রহমান রাজন (৩৫), মো. রবিউল ইসলাম অন্তর (৩৮) ও মো. মেহেদী হাসান (৩৫)। প্রাথমিক চিকিৎসায় তারা সুস্থ হয়ে ওঠেন। আহত দুজনকে চিকিৎসা দেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। অন্যজনকে নেওয়া হয় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। বার্ন ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক রুবাইয়া বেগম গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বলেন, বেলা ১১টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্য মেহেদী হাসানকে জরুরি বিভাগে আনা হয়। তার শরীরে কোথাও আঘাত নেই। শ্বাসনালী দিয়ে ধোঁয়া প্রবেশ করায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছে। অবস্থা আশঙ্কামুক্ত। মেহেদির তদারকির দায়িত্বে থাকা ফায়ার সার্ভিসের সদস্য মুস্তাফিজুর বলেন, এ পর্যন্ত আমাদের তিনজন সদস্য আহত হয়েছেন। দুজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর সুস্থ হয়ে উঠলেও একজনের অবস্থা কিছুটা খারাপ ছিল। তাকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আনা হয়। বর্তমানে তিনিও সুস্থ হয়ে উঠছেন। অগ্নিকাÐের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তা, আশপাশের এলাকার পরিস্থিতি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি ও অ্যাম্বুলেন্সসহ ১৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বিজিবির জনসংযোগ বিভাগ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com