শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৪৫ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে গেছে হাসিনার স্বৈরতন্ত্র: কূটনীতিকদের ইউনূস ভারতে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ-হত্যার প্রতিবাদে শাটডাউন কর্মসূচির ঘোষণা চিকিৎসকদের নলতা আহসানিয়া মিশন রেসিডেনসিয়াল কলেজের অধ্যক্ষের দুর্নীতি ॥ উত্তাল নলতা ॥ শিক্ষক কর্মচারীরা মতবিনিময় করলেন ডাঃ শহিদুল আলম ও চেয়ারম্যান আজিজুর রহমানের সাথে মহামারীর দ্বারপ্রান্তে গাজা আলোচনায় থাইল্যান্ড ॥ বন্দী থাকসিন মুক্ত হরিনগর বাজারে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানদের মাঝে নগদ অর্থ প্রদান পাইকগাছায় একটি বাঁশের সাঁকো পারাপারে এলাকাবাসীর চরম ভোগান্তি মাথাভারি হচ্ছে প্রশাসনের ॥ বাড়ছে সরকারের দু:চিন্তা ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদ এর পদত্যাগ দাবীতে-মানববন্ধন চাম্পাফুল ইউনিয়ন বিএনপির আয়োজনে শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত

বঙ্গোপসাগরের সম্পদ আহরণ করে অর্থনীতি শক্তিশালী করতে হবে -প্রধানমন্ত্রী

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় সোমবার, ৭ মার্চ, ২০২২

এফএনএস: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গোপসাগর শুধু আমাদের জন্য নয়, এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে বিশাল সম্পদ রয়েছে। সেই সম্পদ আমাদের আহরণ করতে হবে। কিন্তু সমুদ্র্যের মৎস্য আহরণ বা সমুদ্র সম্পদ আহরণে এখনও আমাদের আরও অনেক কাজ করতে হবে এবং আমরা তা করব। গতকাল রোববার মেরিন ফিশারিজ একাডেমি’র ৪১তম ব্যাচের ক্যাডেটদের ‘মুজিববর্ষ পাসিং আউট প্যারেড’ অবলোকন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি চট্টগ্রামের মেরিন ফিশারিজ একাডেমি প্রান্তে যুক্ত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশকে একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসাবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন জাতির পিতা। শুধু স্বপ্ন না সেই পথও তিনি প্রদর্শন করে গেছেন। প্রয়োজনীয় সব আইন, সবকিছু আমাদের করে দিয়ে গেছেন।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের বিশাল সমুদ্রসীমা। যে সীমায় আমাদের কোনো অধিকার ছিল না। ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা প্রথম বাংলাদেশের জন্য দ্যা টেরিটোরিয়াল ওয়ার্টাস অ্যান্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট. ১৯৭৪ প্রণয়ন করেন, যার ভিত্তিতে পরবর্তীতে আমরা এ বিশাল সমুদ্রসীমা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি।’ প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় চট্টগ্রাম কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় স্বাধীন দেশের সর্বপ্রথম মেরিটাইম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘মেরিন ফিশারিজ একাডেমি’ বলেও অবহিত করেন। আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রথম মেরিটাইম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে একটি আন্তর্জাতিকমানের মেরিটাইম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রূপ নিতে শুরু করেছে এবং মেরিন ফিশারিজ একাডেমিতে বিদেশি ক্যাডেট ভর্তির প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলেও জানান তিনি। ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রথম মহিলা ক্যাডেট ভর্তি হতে শুরু করে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ একাডেমি হতে পাশকৃত ক্যাডেটদের বহির্বিশ্বে মেরিটাইম সেক্টরে চাকরির সুযোগ লাভের জন্য ২০১৮ সাল হতে নটিক্যাল ও মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রি-সি ট্রেনিং সম্পন্ন ক্যাডেটদের অনুক‚লে নৌপরিবহন অধিদফতর কর্তৃক কন্টিনিউয়াস ডিসচার্জ সার্টিফিকেট (সিডিসি) ইস্যু করা হচ্ছে।’ ফলে এ একাডেমির ক্যাডেটদের সমুদ্রগামী বাণিজ্যিক জাহাজে চাকরি লাভের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এবং তাদের কর্মক্ষেত্র সমগ্র বিশ্বে বিস্তৃত হচ্ছে বলে মনে করেন। একাডেমির জন্য আধুনিক সিমুলেটর (কৃত্রিমভাবে সমুদ্র প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, এটিও আরও দ্রুত একাডেমিতে সংযুক্ত হলে এ একাডেমি একটি আন্তর্জাতিকমানের মেরিটাইম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উন্নীত হবে, সেটাই আমাদের প্রচেষ্টা বলেও অবহিত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, ‘এ যাবৎ একাডেমি থেকে সফলভাবে পাশকৃত ৫৮ জন মহিলা ক্যাডেটসহ ১ হাজার ৯১৪ জন ক্যাডেট দক্ষতার সঙ্গে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন মেরিটাইম সেক্টরে কর্মরত থেকে দেশের অর্থনীতির অবদান রেখে যাচ্ছে।’ পাসিং আউট প্যারেড অনুষ্ঠানে তোমাদের মাঝে ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে উপস্থিত থাকতে পেরে আমি আনন্দিত, যদিও সরাসরি উপস্থিত হতে পারলে আরও ভালো লাগত। কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর থেকে আমার যাতায়াত খুব সীমিত। যে কারণে আসতে পারিনি। এ বছর একাডেমির ৪১তম ব্যাচে নটিক্যাল বিভাগে ৩৩ জন, মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ৩১ জন এবং মেরিন ফিশারিজ বিভাগে ২০ জন ক্যাডেটসহ সর্বমোট ৮৪ জন নারী ও পুরুষ ক্যাডেটের পাসিং আউট হয়েছে বলে জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ একাডেমি হতে প্রশিক্ষিত হয়ে তোমরা গভীর সমুদ্রের অকুতোভয় নাবিক হতে চলেছ। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, কঠোর অধ্যবসায়, কঠিন পরিশ্রম এবং প্রজ্ঞা-প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অর্জিত এই জ্ঞান তোমাদের ভবিষ্যৎ কর্মক্ষেত্রে সহায়ক ভ‚মিকা রাখবে।’ তোমরা শিক্ষাঙ্গনের ক্ষুদ্র বলয় ছেড়ে পেশাগত জীবনের বৃহত্তর অঙ্গনে প্রবেশ করতে যাচ্ছ জানিয়ে বলেন, ‘আমি আশা করি, সদা পরিবর্তনশীল এবং প্রতিযোগিতাপূর্ণ আধুনিক এ বিশ্বে টিকে থাকার জন্য এরইমধ্যে তোমরা তোমাদের অর্জিত জ্ঞান দ্বারা নিজেদেরকে তৈরি করে নিতে পারবে। কর্ম জীবনে উন্নতির প্রধান ভিত্তিই হলো কঠোর পরিশ্রম, সময়ানুবর্তিতা, সততা, কর্মদক্ষতা, মূল্যবোধ এবং দেশ ও জাতির প্রতি কর্তব্যনিষ্ঠা ও দেশপ্রেম।’ এ বোধগুলো আত্মস্থ করে ভবিষ্যৎ কর্মক্ষেত্রে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে এবং দেশের উন্নতির জন্য নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করেব। যেন ভবিষ্যৎ যারা বংশধর তারাও যেন সুন্দর জীবন পায়। আমাদের স্বাধীনতার যে আদর্শ, নীতি সেটাও মেনে চলার আহŸান জানান। ক্যাডেটদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ও সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনাও করেন এবং সমদ্রসীমা ও সুনীল অর্থনীতির ওপর গুরুত্বরোপ করার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘এই সম্পদ ব্যবহার করে আমাদের অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করতে পারি, মজবুত করতে পারি তার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছি। আমরা এরইমধ্যে এমডিজি খুব সাফল্যের সঙ্গে বাস্তবায়ন করেছি। জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজিও সাফল্যের সঙ্গে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। যদিও করোনা ভাইরাসের কারণে কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে কিন্তু এ বাধা বাধা নয়, আমরা এগিয়ে চলেছি, অর্থনৈতিকভাবে যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’ কাজেই সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবহার করে এসডিজি-১৪ এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রেও আমরা অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি। আমি আশা করি, আমাদের সরকারের এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তোমাদের ভ‚মিকা থাকবে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বলে জানান তিনি। তোমরা সাহসের সঙ্গে কাজ করবে এবং তোমাদের লব্ধ জ্ঞান এ ক্ষেত্রে আরও বেশি সহায়ক হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মাছে ভাতে বাঙালি, কাজেই এই মাছ আমাদের একটা বিরাট সম্পদ। যে সম্পদ শুধু আমাদের পুষ্টি জোগায় না, সেই সঙ্গে এই সম্পদ প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশে রফতানি করেও অনেক অর্থ উপার্জন করতে পারি। সে জন্য মৎস্য উৎপাদনে যথেষ্ট গবেষণা করে যাচ্ছি এবং সাফল্যও পেয়েছি। কিন্তু সমুদ্র্যের মৎস্য আহরণ বা সমুদ্র সম্পদ আহরণে এখনো আমাদের আরও অনেক কাজ করতে হবে এবং আমরা তা করব, এটি বিশ্বাস করি।’ বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। জাতির পিতা চেয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমাদের বাংলাদেশ গড়ে তুলবেন। ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা জানিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশকে জাতির পিতা যুদ্ধবিধস্ত প্রদেশকে রাষ্ট্রে উন্নীত করে স্বল্পোন্নত দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করে দিয়ে গেছেন, এরপর অনেক ঘাত-প্রতিঘাত ২১টি বছর বাঙালির জীবন থেকে হারিয়ে গেছে। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর যে উদ্যোগ নিয়েছে এবং দ্বিতীয় দফা সরকারে আসার পর যে সমস্ত কর্মসূচি আমরা পালন করে যাচ্ছি তার ফলে ২০২১ সালের মধ্যেই আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছি। যা আমাদের ধরে রেখে এগিয়ে যেতে হবে।’ পাসিং আউট ক্যাডেটদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কাজেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হবে সেটিই বিশ্বাস করি। আর তোমরাই তো হবে এই সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, উন্নত বাংলাদেশের কর্ণধার।’ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণলায়ের সচিব ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com