দৃষ্টিপাত ডেস্ক ॥ ইসরাইলি হামলা চলছেই। মানবতা বিরোধী দেশটি গত তিন মাসের অধিক সময় যাবৎ গাজা উপত্যকায় বর্বর হামলা চালিয়ে গণহত্যা পরিচালনা করে চলেছে। এমন কোন দিন নেই, এমন কোন সময় নেই যে দিনে বা সময়ে নিষ্ঠুর ইসরাইলি সেনারা নিরীহ ফিলিস্তীনিদের হত্যা করছে না। ইসরাইলী বাহিনী গাজা উপত্যকায় কেবলমাত্র ফিলিস্তীনিদের হত্যা বা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে তা নয়, দখলদার ফিলিস্তীনিরা হামাস যোদ্ধাদের দ্বারা চরম প্রতিরোধ হামলায় পড়ছে। গতকালও ইসরাইলি সেনাদের সাথে হামাস যোদ্ধারা দিন ব্যাপী ব্যাপক ভাবে প্রতিরোধ হামলায় পড়েছে। খান ইউনিস এর নিয়ন্ত্রন নিয়ে গতকাল ও হামাস যোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হতে দেখা যায়। ইসরাইলি বাহিনীর হাজার হাজার সেনারা গতকাল উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকাতে ব্যাপক ভাবে তল্লাশী ও গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করে। এ সময়ে ইসরাইলি সেনারাও ব্যাপক ভিত্তিক প্রতিরোধ হামলায় পড়ে। ইসরাইলি বাহিনী পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকাতে ব্যাপক ভিত্তিক গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করেছে। গত চব্বিশ ঘন্টায় গাজার বিভিন্ন এলাকাতে ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় অন্তত দুই শতাধীক নিরীহ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। বরাবরের ন্যায় এবারের হামলা ও হত্যাকান্ড নারী ও শিশুদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। গত তিন মাসের অধিক সময়ে ইসরাইলি বাহিনীর সদস্যরা অন্ততঃ প্রায় পঁচিশ হাজার ফিলিস্তীনিকে হত্যা করেছে। হত্যাকান্ডের শিকার ফিলিস্তিনিদের মধ্যে অন্তত পনের হাজার নারী ও শিশু। জাতিসংঘ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে ইসরাইল যে ভাবে গাজার বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরাইল বিমান হামলা চালিয়ে গণহত্যা পরিচালনা করছে তা কেবল হত্যাকান্ড বা গণহত্যা নয় দৃশ্যতঃ একটি জাতিস্বত্ত্বাকে নির্মূল করার চেষ্টা করছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন গতকাল এক ব্রিফিং এ বলেছে গাজায় চলছে চরম মানবিক বিপর্যয়। গাজায় কেবল ক্ষুধা আর দুর্ভিক্ষাবস্থা বিরাজ করছে তা নয়, ঐতিহাসিক এই উপত্যকাটিতে বর্তমানে চিকিৎসাহীনতা চলছে। এমন অবস্থা বিরাজ করলে ইসরাইলি বাহিনী কর্তৃক গাজায় যে পরিমান মানুষ হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে সে অপেক্ষা অধিকতর মানুষ নিহত হবে। গাজার স্বাস্থ্য সেবা ভেঙ্গে পড়ার পাশাপাশি দিনে দিনে গাজায় বাস্তহারা মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গাজায় নিরীহ তথা বেসামরিক লোকদের হত্যার জন্য ইতিমধ্যে ইসরাইল কে মানবতা বিরোধী দখলদার দেশ হিসেবে চিহিৃত করেছে। এদিকে ইসরাইলের কারাগারে আটক নিরিহ ফিলিস্তিনিদের উপর চলছে ইসরাইলি পুলিশ কর্তৃক নির্যাতন, বন্দীদের উপর শারিরীক ও মানসিক উভয় প্রকার নির্যাতন চলছে। ইসরাইলের কারাগারে নারী, কিশোর ও কিশোরী বন্দীরাও নির্যাতনের কবল হতে রক্ষা পাচ্ছে না। ইসরাইলি কারাগারে হাতে সদ্য মুক্তি পাওয়া গাজার মহিলা সাংবাদিক তানোর আরোরা মুক্ত বাতাসে বের হয়ে বলেছে কারাগড়ারে আটক অবস্থায় ইসরাইলি সেনারা তাকে ধর্ষনের হুমকি প্রদান করে। মুক্ত মহিলা সাংবাদিকের অপরাধ ইসরাইলের অব্যাহত হামলা ও বেসামরিক নাগরিকদের উপর নির্যাতন ও গ্রেফতারের বিষয়ে উক্ত মহিলা সাংবাদিক প্রতিবেদন প্রকাশ করলে ইসরাইলি সেনারা উত্তর গাজায় অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেফতার করে। ইসরাইলি সেনারা আটক মহিলা সাংবাদিককে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে বলেন, তুমি যুদ্ধ বন্দী আমরা তোমাকে যা ইচ্ছা তাই করতে পারি। এমন কথার পর তারা এক পর্যায়ে ধর্ষনের ও হুমকি দেন। মুক্ত বাতাসে আসা সাংবাদিক আরও বলেন ইসরাইলের কারাগারে আটক ফিলিস্তিনি বন্দীদেরকে চোখ ও হাত বেঁধে নির্যাতন করা হচ্ছে। কারো কারোকে অর্ধউলঙ্গ করে রাখা হচ্ছে। গতকাল পশ্চিমা মিডিয়ায় খবরে বলা হয়েছে ইসরাইলি বাহিনী দৃশ্যতঃ কেবল হামাসকে নির্মূল নয় তারা উত্তর ও দক্ষিন গাজায় অভিযান পরিচালনা করছে সন্দেহ ভাজন হামাস সদস্যদের গ্রেফতারের লক্ষে, কারন হামাস সদস্যরা সাধারন ফিলিস্তিনিদের আবরনে ঘুরে বেড়ায় ও অবস্থান করে একই সাথে গাজার বিভিন্ন আশ্রয় শিবির গুলোতে ইসরাইলি হামলার কারন হিসেবে বলা হয়েছে আশ্রয় শিবির গুলোতে লুকিয়ে আছে হামাস সদস্যরা। এদিকে গতকাল কাতার ভিত্তিক টেলিভিশন আল জাজিরার পক্ষ হতে প্রচার করা হয়েছে ও সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলা হয়েছে যে, ইসরাইলি সেনা বাহিনী শতাধিক ফিলিস্তিনিকে গ্রেফতার পরবর্তি খালি গায়ে পরিধানে কেবল মাত্র হাফপ্যান্ট পরিহিত অবস্থায় অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাচ্ছে জীবিতদের হত্যা করা হচ্ছে এবং মৃতদেরকেক দাফনের ব্যবস্থা নেই গাজায় এই হলো গাজার চিত্র। গতকালও সাগরে ইসরাইলি সংশ্লিষ্ট জাহাজে হামলা পরিচালনা করেছে হুতি যোদ্ধারা। এবারও তাদের হামলার লক্ষবস্তু ছিল মার্কিন পতাকাবাহী জাহাজ। হুতিরা অস্ত্র ভান্ডারে শক্তিশালী। ইসরাইলের হামলায় গাজায় প্রতিদিনই দুই জনের মধ্যে একজন মাতা নিহত হচ্ছে। এদিকে ইসরাইল আবারও সিরিয়ায় হামলা চালিয়ে ইরানী বিপ্লবী গর্ড বাহিনীর চার কমান্ডারকে হত্যা করেছে। ইরান এই হত্যার প্রতিশোধ গ্রহনে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। গাজা বিশ্ব বিদ্যালয় বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন বিশ্ব বিদ্যালয় দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর বিমান হামলায় গতকাল গাজা বিশ্ব বিদ্যালয় মাটির সাথে মিশে গেছে গাজায় মানবতা হত্যার যে নিষ্ঠুরতা চলছে তা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে ফিলিস্তিনি জাতির কোন অস্তিত্ব থাকবে না।