এফএনএস : বর্ষার শুরুতেই দেশে চলমান বন্যায় খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এখনো প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। ফলে বন্যায় ফসলের ক্ষতি যে আরো বাড়বে তা অনেকটাই অনুমেয়। তাছাড়া বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে আউশ ও আমন চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাতে সার্বিকভাবে খাদ্য উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ইতোমধ্যে সিলেটের ২২ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরো ২৮ হাজার হেক্টর জমির ধান। তাছাড়া উত্তরঙ্গের কুড়িগ্রাম, নীলফামারীসহ কয়েকটি জেলায় এখন পর্যন্ত ৫৬ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতি হয়েছে বলে জানা যায়। ওসব ফসলি জমির বেশিরভাগই এখন পানির নিচে। তাছাড়া বন্যায় মাছ ও গবাদিপশুর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বন্যায় এতোমধ্যে দেশের ৫ বিভাগের ১৫টি জেলার ৯৩টি উপজেলায় ৬৭ হাজার ৬১০টি মৎস্য খামার পানিতে ডুবে যাওয়ার তথ্য জানা যায়। তাতে ভেসে গেছে অন্তত ১৬ হাজার ৫৮২ মেট্রিক টন মাছ। ফলে মাছচাষিদের ক্ষতি হয়েছে ১৬০ কোটি ৪২ লাখ টাকা। দিন দিন ওই ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে এবারের বন্যার ক্ষয়ক্ষতি ১৯৯৮ সালের বন্যার ক্ষতিকে ছাড়িয়ে যাবে। দিন দিন বন্যা পরিস্থিতি যে দিকে যাচ্ছে তাতে দেশের সার্বিক খাদ্য উৎপাদনে আশঙ্কা রয়েছে। বন্যায় এখন পর্যন্ত দেশের ১২টি জেলার ৭৪টি উপজেলার ৩১৬টি ইউনিয়নে ১৫ হাজার ৬০টি গরুর খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাতে খামারিদের সম্ভাব্য ক্ষতি ২৬১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে এখনকার বন্যা কৃষিখাতের বড় শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সূত্র জানায়, বন্যায় শাকসবজির কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তার কোনো প্রাথমিক হিসাব নেই। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, এখন সারাদেশে ৩ লাখ ৮৭ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন শাকসবজি আছে। তার মধ্যে এ পর্যন্ত ৫ থেকে ৬ হাজার হেক্টরের ক্ষতি হয়েছে। যার মধ্যে গ্রীষ্মকালীন ফসল তিল ও বাদামের বেশি ক্ষতি হয়েছে। কিছু এলাকায় মরিচ নষ্ট হয়েছে। শুধুমাত্র সুনামগঞ্জ জেলাতেই ৭ থেকে ৮ হাজার হেক্টর সবজির ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বিদ্যমান বন্যায় আউশের বড় ক্ষতি হবে। আর পানি নামতে বেশি দেরি হলে আমনেরও ক্ষতি হবে। কারণ আমন বীজতলা করার সময় চলে যাচ্ছে, বন্যার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। পাশাপাশি বন্যায় প্রচুর পশু মারা যাচ্ছে। কিন্তু যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় সঠিক খবরও মিলছে না। আর পানি থাকা অবস্থায় ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ নিরূপণ করাও সম্ভব নয়। সিলেট জেলাতেই বন্যায় এখন পর্যন্ত ৩৭৩টি গরু মরে গেছে বলে জানা যায়। কিন্তু যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় সঠিক খবর মিলছে না। বন্যার পানি থাকা অবস্থায় ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ নিরূপণ করা সম্ভব নয়। তবে ব্যাপক ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে। সূত্র আরো জানায়, বিদ্যমান বন্যার প্রভাব আউশ ছাড়িয়ে আমনে গেলে তা খাদ্যনিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। দেশে উৎপাদনের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি হয় বোরো ধান। মোট ধানের প্রায় অর্ধেক বোরো থেকে আসে। প্রতি বছর দেশে ৪৮ থেকে ৪৯ লাখ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়। আর ৫৭ থেকে ৫৮ লাখ হেক্টরে আমন আবাদ হয়। ১২ থেকে ১৩ লাখ হেক্টর জমিতে আউশ আবাদ হয়। ফলে আউশ-আমন দুই-ই ক্ষতিগ্রস্ত হলে সার্বিক খাদ্য উৎপাদনে ব্যাঘাত হবে। এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. বেনজীর আলম জানান, আউশের ক্ষতি হলেও এখনো আমনের ক্ষতির কোনো শঙ্কা নেই। কারণ আমনের বীজতলা করার সময় এখনো রয়েছে। যেখানে আউশ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে সেখানে আমনের আগাম জাতের বীজ দেয়া হবে। সারাদেশে ১৩ লাখ ৯ হাজার হেক্টর আউশ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু ১২ লাখ হেক্টর পর্যন্ত আমরা আবাদ করা সম্ভব হবে। আরো কয়েকদিন আউশ আবাদ করা যাবে। তাছাড়া আমন আবাদের লক্ষ্য ৫৯ লাখ হেক্টর। কিছু এলাকায় বীজতলা তৈরি শুরু হয়েছে। যেসব এলাকা প্লাবিত রয়েছে, সেখানে বন্যার পরে বীজতলা তৈরির ব্যবস্থা করা হবে। অন্যদিকে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক বিদ্যমান বন্যায় খাদ্যশস্য উৎপাদনে বড় প্রভাব পড়ার বিষয়ে পুরোপুরি একমত নন। তাঁর মতে, যেহেতু এসময়ে কোনো বড় ফসল মাঠে নেই, ফলে বন্যায় তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। তাছাড়া খাদ্য ঘাটতিরও কোনো শঙ্কা নেই। তবে ধানে প্রভাব না পড়লেও বন্যায় শাকসবজি উৎপাদন কিছুটা কমবে। তাছাড়া আমনের বীজতলা এখনো তৈরি শুরু হয়নি। তবে আউশ ধানের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। আউশ উঁচু জমিতে হয়। বন্যা যদি আর না বেড়ে এখন যে অবস্থায় আছে তা থাকে তাহলে ক্ষতি হবে না।